চর্মচক্ষে কবর আজাব দেখা

কোন মুসাফির বর্ণনা করেন, একবার আমি এক ব্যক্তির মেহমান হলাম। ঘটনাক্রমে সেদিন বাড়িওয়ালার এক প্রতিবেশির ভাই ইন্তেকাল করেছিল। বাড়িওয়ালা আমাকে বলল, আমি মাইয়্যেতের ভাইকে সান্তনা দিতে যাব, তুমি আমার সাথে চল। আমরা মাইয়্যেতের বাড়িতে গিয়ে তাঁর ভাইকে অনেক সান্তনা দিলাম। কিন্তু কিছুতেই তাঁর আহাজারী উপশম হল না।

পরে আমরা তাকে বললাম, হে আল্লাহর বান্দা! তুমি আল্লাহকে ভয় কর এবং এ কথা বিশ্বাস কর যে, মৃত্যু সকলের জন্য অবধারিত। সকলের জীবনে এটা নির্দিষ্ট সময়ে গমন করবে। উত্তরে সে বলল, তোমরা যা বলছ তা ধ্রুব সত্য। কিন্তু আমি মৃত্যুর ভয়ে ক্রন্দন করছি না। আমার মৃত ভাই সকাল সন্ধ্যা যে মুসীবতে লিপ্ত আছে আমি তাঁর কথা স্মরণ করেই পেরেশান হচ্ছি।

আমরা বিস্ময় প্রকাশ করে বললাম, তুমি কেমন করে জানলে যে, তোমার ভাই সকাল-সন্ধা মুসীবতে লিপ্ত আছে। তুমি কি গায়েবী খবর জান? সে বলল, আমি গায়েবী খবর জানি না।

তবে আমার ভাই কে দাফন করার পর কবরের উপর মাটি দেওয়ার সময় আমি কবরের অভ্যন্তর হতে একটি “আহ” ধ্বনি শুনতে পেলাম। সাথে সাথে আমি আমার ভাই! আমার ভাই” বলে ডেকে উঠে কবরের মাটি সরাতে লাগলাম। উপস্থিত লোকেরা আমাকে এই কাজে বাধা দিল, আমি পুনরায় কবরের মাটি ঠিক করতে লাগলাম এমন সময় কবর হতে আবার সেই আওয়াজ আসল।

আমি আবার আমার ভাইকে ডেকে কবরের মাটি সরাতে লাগলাম। এবারও লোকেরা আমাকে বাধা দিলে আমি পূনরায় কবরের মাটি ঠিক করে দিলাম। কিন্তু তৃতীয় বারের মত কবর হতে ঐ একই আওয়াজ আসলে আমি বললাম, আল্লাহর কসম! আমি অবশ্যই কবরের মাটি সরিয়ে ফেলব।

অতঃপর আমি ক্ষিপ্রহস্তে কবরের মাটি অপসারণ করে দেখতে পেলাম। আমার ভাইয়ের কোমরে একটি আগুনের বেড়ি জড়িয়ে আছে আর তাঁর তীব্র দাহনে গোটা কবর ঝলসে যাচ্ছে। আমি তাঁর কমর হতে ঐ বেড়ি ছাড়ানোর উদ্দেশ্যে হাত বাড়ালাম। সাথে সাথে বেড়ীর স্পর্শে আমার হাতের আগুলগুলো খসে পড়ল। একথা বলেই সে তাঁর আঙ্গুলবিহীন হাতটি আমাদের সামনে তুলে ধরল।

বর্ণনাকারী বলেন, আমি হযরত আওজায়ী (রহঃ) এর নিকট গিয়ে জিজ্ঞেস করলাম, হে আবূ ওমর! কত ইহুদী, নাসারা ও কাফের মৃত্যুবরণ করছে, তাদের বেলায় তো এরুপ আজাবের ঘটনা দেখা যায় না। কিন্তু ঐ ব্যক্তি তো ঈমান ও ইসলামের উপর ইন্তেকাল করেছেন। তারপরও তাঁর কবরে এমন আজাব হচ্ছে কেন? উত্তরে তিনি বললেন, কাফেররা চিরদিন জাহান্নামের আগুনে জ্বলতে থাকবে। একথা আগেই জানিয়ে দেয়া হয়েছে।

সুতরাং  তাদের অবস্থায় দেখবার কোন প্রয়োজন হয়না। আর মুসলমানরা ঈমানের উপর মৃত্যুবরণ করলেও তাদের কৃত অপরাধের জন্য শাস্তি ভোগ করতে হবে। তাই তাদের সতর্ক করার জন্য মাঝে মাঝে কিছু দৃষ্টান্ত দেখানো হয়। হে আল্লাহ! তুমি মেহেরবানী করে আমাদের গুনাহসমূহকে মাফ করে দাও আমিন।

You may also like...

দুঃখিত, কপি করবেন না।