
এক বনে বাস করত একঝাঁক চড়ুই পাখি। তারা ঝোপঝাড়ে বাসা বানিয়ে ডিম দিত এবং বাচ্চা ফোটাত। একই বনে বাস করত এক বিশাল হাতি। একদিন হাতিটি পানি খেতে যাওয়ার পথে অসতর্কভাবে কিছু চড়ুই ছানাকে পায়ের নিচে পিষে ফেলে। এতে চড়ুইরা খুবই কষ্ট পেল।
এক চড়ুই এ ঘটনাকে ‘ভাগ্যের লিখন’ বলে এড়িয়ে যেতে চাইল, কিন্তু কাকলী নামের এক চড়ুই প্রতিবাদ করল:
- “হাতি বড় প্রাণী বলে কি সে অপরাধ করেও পার পেয়ে যাবে? এটা মেনে নেওয়া যায় না!”
কিন্তু অন্য পাখিরা ভয়ে প্রতিবাদ করতে সাহস পেল না, বরং বন ছেড়ে চলে যাওয়ার কথা বলল। কাকলী তা মেনে নিল না:
- “এ বন আমাদের জন্মভূমি, আমরা কেন চলে যাব? অপরাধ করেছে হাতি, তাই যাওয়ার কথা তারই।”
পাখিরা দ্বিধাগ্রস্ত থাকলেও কাকলীর কথায় সাহস পেল। সে প্রথমে হাতিকে সাবধান করতে গেল।
- “হাতি, তুমি আজ আমাদের ছানাগুলো পিষে মেরেছো। ইচ্ছে করে, নাকি ভুলে?” কাকলী জিজ্ঞেস করল।
হাতি নির্লজ্জভাবে উত্তর দিল:
- “ইচ্ছে করে করি আর ভুলে করি, তাতে কী? ক’টা চড়ুই মরল, তাতে দুনিয়া উল্টে যাবে নাকি?”
কাকলী বলল:
- “তুমি যদি আমাদের ওপর অত্যাচার চালিয়ে যাও, তবে আমরা প্রতিশোধ নেব।”
হাতি অবজ্ঞাভরে বলল:
- “তোরা আমার প্রতিশোধ নেবি? যা করার কর!”
কাকলী ফিরে এসে পাখিদের যুদ্ধের কৌশল শিখিয়ে দিল। তারা ঠিক করল, হাতির চোখ লক্ষ্য করে হামলা করবে। একযোগে আক্রমণ চালিয়ে তারা হাতির চোখ ফুটো করে দিল। হাতি দিশেহারা হয়ে ছুটতে লাগল।
এ সময় কাকলী ব্যাঙদের ডেকে নিল। ব্যাঙেরাও হাতির অত্যাচারের শিকার ছিল, তাই তারা সাহায্য করতে রাজি হল। হাতি যখন তৃষ্ণার্ত হয়ে পড়ল, তখন ব্যাঙেরা “মেঘ হো, মেঘ হো” বলে ডাকতে লাগল। হাতি মনে করল কাছেই পানি আছে। সে ডাক অনুসরণ করে এগোতে লাগল এবং ব্যাঙদের অনুসরণ করতে করতে এক গভীর গর্তে পড়ে গেল। অন্ধ হয়ে যাওয়ার কারণে সে আর উঠতে পারল না।
এভাবে বুদ্ধি খাটিয়ে ছোট্ট চড়ুই ও ব্যাঙরা হাতির অত্যাচারের উপযুক্ত শাস্তি দিল।
এই গল্পটি নেওয়া হয়েছে তেরশ শতকের ইরানি লেখক আহমদ বিন মুহাম্মদ শিরবানীর ‘তোফহাতুল ইয়ামিন’ গ্রন্থ থেকে।