রেজাউল করিমের একটা পোশাকি নাম থাকা সত্ত্বেও তার বৃদ্ধ বাবা তিনি অফিস থেকে ঘরে ফিরলেই খ্যানখ্যানে স্বরে ডাকবেন- কে ফিরলো, পঁচু নাকি রে? কে পঁচু শেখ? এই পঁচু শেখ নামটা শুনলেই রেজাউল করিমের মুখের ভেতরটা একটা বিচ্ছিরি রকমের টক টক ভাব চলে আসে মন মেজাজ ভাল থাকলেও! আর এখন মেজাজের যে অবস্থা বুড়োর ঢঙের ডাক শুনলে তার মনে চায় পঁচা বেগুন না হয় পঁচা ডিমের গন্ধ তার নাকের সামনে এনে ধরতে। তখন বুঝবে পঁচু মানে কি! কোনো বাবা মা সুস্থ অবস্থায় তার সন্তানের নাম পঁচু রাখতে পারে! প্রাইমারি স্কুলে কত কষ্টে তার কেটেছে তার খবর সেইই শুধু জানে! কিন্তু সার্ভিস লাইফের এই পিক টাইমে যখন প্রোমোশন হবার কথা সেখানে প্রোমশন না হবার পেছনে এটাও ঠারেঠোরে শুনতে হচ্ছে নামটা যেমন পঁচু কামটাও করছে পঁচুগো মতোই! রেজাউল করিমের উঠতে বসতে এখন বিরক্ত লাগে। কারো ভালো কথা শুনতেও এখন ভালো লাগে না। এসব শুনলে রেজাউল করিম সাহেবের ইচ্ছে করে একেকটা হারামির বাচ্চাগুলোকে মেঝেতে পা দিয়ে মুখ ঠেসে ধরতে ইচ্ছে করে। জুনিয়র গুলি সেইদিন চোখের সামনে জয়েন করলো আর দেখতে দেখতে আমারে ডিঙাইয়া কেমনে প্রোমোশন পাইয়া গেলো! হালারপুতেরা! একলা একলা কি বলতাছো অন্ধকারে বইসা? লাইটটা তো জ্বালাইবা নাকি? এই হইলো আমার সবজান্তা বিবি, মনে মনে ভাবেন রেজাউল করিম। সবজান্তা হলেও তার সব কিছুতেই অগাধ কৌতূহল! তাকে যে রেজাউল করিম ভালোবেসে “বিবি” বলে ডাকেন ব্যাপারটা সেরকম নয়। তার নামও অনেকটা পঁচু শেখের মতই। গোলনাহার বিবি। সংক্ষেপে তাই বিবি বলতেই হয়। যা বলতাছি তা বললে কি বুঝবা? আর আমার অফিসের সব কিছু তোমার না জানলেও চলব! বিরক্ত হয়েই বলেন রেজাউল করিম। বেশি কথা বইলো না তো, বাসে আজকে বসার সিট পাই নাই। দাঁড়াইয়া দাঁড়াইয়া আসছি। মাইনসের শইল্যের চাপে আর ঘামের গন্ধে দম বন্ধ লাগতাছে। যাও দেহি এক গ্লাস শরবত বানাইয়া আনো। হ, তুমি কইলেই আমি বুঝমু না, আর আমার রান্ধন মজা হইলে যহন কও, বিবি রেসিপিডা কও, অফিসে যাইয়া পাপিয়া আপারে কমু, তহন কি তুমি বোঝো? সব সময় খালি মেজাজ দেহাও! তার স্ত্রী দু চারটা কথা শুনিয়ে হলেও তার জন্য হয়ত শরবত বানাতে যায়। কিন্তু এতে তার শরীরের অস্বস্তি লাগা ভাবটা কমে না। বেশ ক’দিন ধরেই এ অবস্থা চলছে। শরীরটা কেমন ভার ভার লাগে। গর্ভবতী মহিলাদের শরীরে পানি আসলে শরীরে ফুলে যাওয়া, চলাফেরা ধীর হয়ে যাওয়া, বমি ভাব হলে যেমন ভাব হয় যা তার স্ত্রীর কাছে শুনেছিল তাদের সন্তান তানভীর কনসিভ করার সময়, এখন নিজে পুরুষ মানুষ হয়ে তার ওরকম লাগছে। আর ব্যাপারটা এমন যে এসব নিয়ে কারো সাথে আলোচনার উপায় নেই। বিবি এসব শুনলে হাসবে না হয় কেঁদেকেটে একটা বাজে অবস্থা করবে মুর্খ মহিলাদের মতো। অফিসেও বন্ধু স্থানীয় কেউ নেই। সব শালা চোর বাটপার। আরে ব্যাটা এক সাথে সব সরকারি অফিসে কাজ-কাম করি, সবাইরেই তো একটু দিয়া থুইয়া খাইতে হয়। এইখানে তো সবাই সবার ভাই ভাই নাকি? নাহ কয়ডা হালারপুত আছে বেশি সৎ, অনেস্ট গিরি দেহায়, অনেস্ট ধুইয়া কি তোরা পানি খাবি না ঢাকায় দুইডা জমি কিনতে পারবি! শালা বাইঞ্চোতের দল! আমার নামে বড় স্যারের কাছে লাগাইয়া এসিয়ারের রিপোর্ট খারাপ দেওয়ায়া প্রোমোশনটা আটকাইয়া দিছে! ঐ রফিক্যারে যদি আমি না দেইখ্যা লইছি তাইলে আমার নামও পঁচু শেখ না। শালার সাহস কত বড়! কিন্তু নিজেই নিজের নাম তার বাবার মতো করে বলায় যেমন অবাকও হয় বিরক্তও হয়ে ওঠে। তার সাথে এসব হচ্ছেটা কি! রেজাউল করিম সাহেব যেভাবে নিজের সহকর্মীদের দেখে নেবেন বলে মনে মনে হুমকি ধামকি দেন তার বলার ভাব শুনে মনে হতে পারে না যেন তিনি কি বিশাল পালোয়ান গোছের কেউ! আদতে বেটে গড়নের মানুষ তিনি। শরীরের উপরের অংশটা লম্বাটে মনে হলেও ভাল মতো খেয়াল করলে বোঝা যাবে কোমর থেকে পা পর্যন্ত তার বেশ খাটো আর কোমরটা বেঢপ ধরণের মোটা। এরকম আকৃতির মানুষ কমই দেখা যায়। তার ঘাড় নাড়ানো দেখ
লে মনে হবে আলগা স্প্রিং লাগিয়ে বসিয়ে দেয়া হয়েছে আর সেটা ক্লক ওয়াইজ চাইলেই ঘোরানো যাবে অনেকটা জাম্পিং টাইপ খেলনা পুতুলের মতো। তার চেহারার আরো একটা লক্ষ্যনীয় ব্যাপার হচ্ছে সে শীত গ্রীষ্ম সারা বছরই ঘামে তাপমাত্রার তারতম্য অনুযায়ী। বিয়ের কিছুদিন যেতে না যেতেই তার বউ বিবি তাকে একদিন বলেছিলো – তোমাকে জানি কেমন লাগে! সেদিন রেজাউল করিম সাহেব কিছুটা ফুরফুরা মেজাজেই ছিলেন। কথাটা শুনেই চট করে তার গলার আওয়াজও যেন কিছুটা বদলে গেলো। জিজ্ঞেস করলেন কেমন লাগে? কি জানি ঠিক বুঝি না। মনে হয় তোমার কোনো সমস্যা আছে শরীরে না অন্য কোনো জায়গায়! দেখলেই অস্বস্তি লাগে! সেইদিনই মনে হয় ওরে থাব্রাইলে সিধা হইয়া যাইত। আমার মইধ্যে সমস্যা দেখছিল। এহ কত বড় জ্যোতিষী বউ পাইছিলাম আমি! কতবছর আগের কথা হঠাৎ কি কারণে আজ রেজাউল করিমের আজকের এ অন্ধকার ঘরে বসে তার বিগড়ে থাকা মেজাজকে আরো উগরে দিচ্ছে আর কেনইবা এতদিন পর এ কথা মনে পড়ে গেলো তিনি বুঝতে পারছেন না। তারই রেশ ধরে বাজখাঁই গলা চড়িয়ে বলেন- ক্ষেতের থিক্যা আউখ তুইল্যা কি চিনির মিলে লইয়া গেছো ভাঙ্গাইতে? তারপর শরবত বানাইয়া আনবা? অফিস ফেরত রেজাউল করিম সাহেবের গরমে বড্ড হাঁসফাঁস লাগে বুকের ভেতরটা। জামাকাপড় বদলে লুঙ্গি পরে বিছানার পাশের সোফাটায় বসেন। ঘরে যত না গরম তার চেয়ে ভেতরের বুনো রাগে তার ভেতরটা জ্বলতে থাকে আরো বেশি সেটা প্রকাশ করতে না পেরে। বিড়বিড় করে তাই তিনি তার বউ এর উপরেই যত রাগ ঝারতে থাকেন – মাগীর গোয়ায় বেশি চর্বি হইছে। এক গ্লাস শরবত বানাইতে আউখ ক্ষেতে গেছে! একবার সোফা থেকে উঠে গিয়ে তিনি ফ্যানের রেগুলেটরের কাঁটা ঘুরিয়ে বাড়িয়ে আসেন। তাও মনে হতে থাকে পাখাগুলো থেকে মনে হয় বাতাসই বের হচ্ছে না। বালের ফ্যানডারে মন চাইতাছে খুইল্যা ড্রেনে হালায় দিতে। অই হালার ঘরে হালা আমার লগেও তোর শত্রুতা, জোরে ঘুরতে পারস না? রেজাউল করিম সাহেবের সাথে রসিকতা করতেই হয়ত ফ্যানটা একবার সর্বোচ্চ গতিতে ঘুরে আবার সেই আগের মত ক্যাচ ক্যাচ শব্দ তুলে হাপঁরের শব্দ তুলে হাঁপাতে থাকে। তারাটেক্সকে চার কোটি টাকার লোন স্যাংশন করিয়ে দিয়ে ভেবেছিলেন নিজে চল্লিশ লাখ পাবেন। বিশ লাখ এডভান্স যে নেননি তা না। তারাটেক্সের জীবনবাবুর ল্যান্ড প্রপার্টি জেনুইন না সেটা রেজাউল করিম জানতেন তবুও লোনের ফাইলটা উনি ছেড়ে দিয়েছিলেন। কিন্তু কিছুদিন পর নিজের প্রোমোশন এর এসিয়ারের রিপোর্ট এভাবে রফিক সাহেবের একটা কলমের খোঁচার জন্য বড় স্যারের টেবিলে গিয়ে গোত্তা খাওয়া ঘুড়ির মত মুখ থুবড়ে পড়বে আর প্রোমোশনটা মাঠে মারা যাওয়ার সম্ভাবনা ৯৯% এ ঠেকবে এটা মেনে নেয়া যায় না। পদ্মা বিল্ডিং ছাড়াও যমুনা, ইছামতী, ডাহুক, শালিক, গোলাপ, চড়াই অনেক বিল্ডিং আছে।এক জায়গা না এক জায়গা থেইকা আমি ছাড়া পামুই কিন্তু তোরে আমি দেইখ্যা নিমু, দেহিস রফিক্যা – এসব মনে মনে বলে তিনি তার রাগ কমাবার চেষ্টা করেন কিংবা দুশ্চিন্তাকে ঝেড়ে ফেলতে চেষ্টা করেন! রেজাউল সাহেব ভেবেছিলেন বাকি বিশ লাখ টাকা ফ্যামিলি নিয়ে ব্যাংকক ট্যুর দিবেন, একটা ছোট খাটো গাড়ি আর এসিটা কিনে ফেলতে পারবেন। গরমের কষ্টটা রেজাউল করিমের সহ্য হয় না একেবারেই। পঁচা গরমের কথা ভেবে তার ভেতরের তৃষনাটা ছটফটিয়ে ওঠে। শুকনো তালুটা জিভ দিয়ে ভিজিয়ে নিতে চান একবার। যখন ভাবেন তার বউকে আবার ডাকবেন তখনই বিবি এক গ্লাস শরবত নিয়ে হাজির হয় – ন্যাও ধরো। বলে পাশের সুইচ বোর্ডে আঙুল দিয়ে লাইট জ্বালায়। শরবত শরবত করতে করতে মাথা খাইয়া ফালাইলা। কত খাইবা খাও। জগ ভইরা বানাইয়া আনছি। এমন ধুমধাম কইরা আইসা খাটে বইলা মনে হইতাছে পাশ দিয়া নার্গিস বইয়া গেল! এক জগ শরবত বানাইতে কই নাই। এক গ্লাসই চাইছিলাম। শইল্যে এমন চর্বি জমছে যে পাক ঘর থেইক্যা এইহানে হাইট্যা আইতে দশ মাস লাইগ্যা যায়! আর শরবত বানাইতে কি আউখ ক্ষেতে গেছলা নি? সন্ধ্যারে
রাইত বানাইয়া দিলা? এত কতায় কতায় পিক দ্যাও ক্যান? হারা দিন কতা হুনাও? বিবির খ্যাসখ্যাসে গলার আওয়াজে রেজাউল করিমের মেজাজটা আরো খারাপ হয়ে যায়। তার স্ত্রী বিয়ের সময় বা এর পর পর যতটা হাল্কা পাতলা গড়নের ছিলো সময়ের সাথে পাল্লা দিয়ে ওজন বেড়েছে তিন গুণ। এক রিকশায় তারা তিনজন এখন যেতে পারেন না কোথাও। রাতে আদর সোহাগ করতে গেলেও বিবির আর তার নিজের ভুড়ির ধাক্কা লাগে। মাঝে মাঝে তো মুডই নষ্ট হয়ে যায়! মাথার চুলও তার স্ত্রীর হাল্কা হতে শুরু করেছে।বয়স কত হবে ওর। বড়জোর ৩২/৩৩! এরই মাঝে প্রেম ভালোবাসা কই গেলো! কথায় কথায় পাঁচফোড়নের ঝাঁজ। তাও তো পাঁচফোঁড়ন স্বাদ বাড়ায় আর তার বউতো উল্টাটা করছে। সেসব না বলে রেজাউল করিম বলেন- তুমিও তো আমারে কম গুলি কথা শোনাও নাই ঘরে ঢুকনের পর? ভাল মত দুইডা কথা কইছ? সারা দিন কি বাইত্যে থাকি? হ, আমি জানি বাইত্যে কত আরামে থাকি! তোমার বুড়া বাপের আর তোমার পোলারে কি আমার পালন লাগে না? রানতে হয় না? আমি তো ঠিক মতো এহন খাওয়া দাওয়াই করতে পারি না! রুচি নাই। প্রেসার লো হইতে হইতে মাথা ঘুরাইয়া পইরা যাওনের দশা! রেজাউল করিম সাহেব তার স্ত্রীর দিকে তাকিয়ে বলেন তোমারে ঠুইসসা ঠুইসসা এতো খাওনের পরেও তোমার এত লো প্রেসার! ফাও কথা কইও না! লাইটটা বন্ধ কইরা সামনে থেইক্যা যাও তো! কারেন্টের বিল উঠতাসে। গোলনাহার বিবি আরো কিছু বলার জন্য উদ্যত হলেও পঁচু শেখের ধমকের আড়ালে গুটিয়ে যায়। শরবত খাবার পর মনে হয় তার শরীরটা কেমন ছেড়ে দিয়েছে এমন লাগতে থাকে। সোফা থেকে নেমে ফ্লোরে বসে সোফায় পিঠটা হেলিয়ে বসে সে। একবার মনে হয় লুঙ্গির গিঁটটা একটু আলগা করে দিলে তার পেটের ভেতর জমে থাকা বিষাক্ত বাতাসটা বের হয়ে যাবে, হাঁসফাঁস ভাবটা কমে আসবে। তিনি তাদের শোবার রুমের দরজাটা ভিড়িয়ে দিয়ে লুঙ্গির গিঁটটা আলগা করেন কিছুটা। তার পেটে বেশ কিছুদিন ধরেই কেমন থলথলে ভাব এসেছে খেয়াল করেছেন তিনি। হাঁটতে গেলে মাথাটার সাথে সাথে ভুড়িটাও কেমন ঝুলতে থাকে।মনে হয় হাঁটার সময় ভুঁড়িটা টুপ করে খুলে কোথাও পড়ে যাবে। পেটের থলথলে ভাবের সাথে সাথে শরবত খাওয়ার কারণে কেমন একটা ঢক ঢক আওয়াজও পেটের ভেতরে টের পাচ্ছেন তিনি। খোলা জানালা দিয়ে মনে হয় কয়েক লক্ষ মশা ঘরে ঢুকেছে। তিনি তার বউকে বলেছিলেন সন্ধ্যার আগে আগে জানালাগুলো লাগিয়ে দিতে। কিন্তু কে শোনে কার কথা। নেট লাগানো ছিল। তার ছেলে তানভীর পেন্সিল দিয়ে খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে সম্ভবত কয়েক জায়গায় ছিঁড়েছে কিংবা কোনো অপকর্ম করেছে। সারাক্ষণ কিছু না কিছু দুস্টামি সে করছেই।কিন্তু আজ বাসায় ফেরার পর থেকে তো ওকে চোখেই পড়েনি। নিশ্চই স্যারের কাছে পড়ছে না হয় তার তার দাদুর ঘরে। নার্সারির বাচ্চাদের এত পড়তে হয় দেখলে মায়াই লাগে। শখ করে রেজাউল করিম সাহেব ছেলেকে ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলে ভর্তি করিয়েছেন না হলে কলিগ বা রিলেটিভদের কাছে প্রেস্টিজও থাকে না। আর তার বউ তো তাদের বাচ্চা পৃথিবীর আলো বাতাস পাবার আগে থেকেই বলেছিলো আমাগো পোলা পাইনরে কিন্তু ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলে পড়ামু! ন্যাও এহন পড়াও। খরচ সামলাইবো কে বুঝবা! মুর্খ মহিলা! প্রোমোশন দূরের কথা টেম্পোরারি সাস্পেন্ড বা দুদকের তদন্তের তলে পড়লে যে কি হবে ভাবলে তার পেটটা গুড় গুড় করে ওঠে! বড় স্যাররে তেল মাইরা সবাই কত্তো বেনেফিটেড হইল আর হালায় আমি! পুরাই এক্টা ফাউল হইয়া গেলাম! ধরাম করে দরজা খোলার আওয়াজে রেজাউল করিম সাহেব চমকে ওঠেন। পাপাআআআআ বলে তার ছেলে তানভীর ঝাঁপিয়ে পড়ে তার ওপরে। পেছন পেছন তার বউ বিবিও ঢোকে। বলে – তোমার আজ হইছেটা কি? ঘর আন্ধার কইরা প্যাঁচার মত বইয়া রইছ ক্যান? চোক্ষে টর্চ লাগাইছ নি? আর বিড়বিড় কইরা কি কও? তহনও মনে হইল কিছু জানি কইতাছ! হ আইজকাল তো তুমি বেশিই শুনতাছো ! লুঙ্গির গিঁট লাগাতে লাগাতে রেজাউল করিম সাহেব তার ছেলেকে কোলে জড়িয়ে নিলে তানভীর ছটফটিয়ে বলে ওঠে উমম্ ছাড়ো ছাড়ো পাপার গায়ে
পঁচা গন্ধ।! বলে কোল থেকে নেমে দৌড়ে চলে যায় ডাইনিং এর দিকে। রেজাউল করিম নিজের শরীরের দিকে তাকালে দেখতে পান গায়ের স্যান্ডো গেঞ্জি গরমে ঘামে গায়ের সাথে লেপ্টে আছে। তার বউয়ের চোখে চোখ পড়লে বিবি বলে- তোমার লগে ঝগড়ার করনের ইচ্ছা নাই রাইত কইরা। তোমার আব্বায় ভাত খাইব। জানোই তো রাইতে তোমারে ছাড়া আব্বায় খায় না। খাইতে আহো। বারবার আমি খাওন গরম করতে পারুম না। রেজাউল করিমের তার স্ত্রীর উপর আবার আরেক দফা মেজাজ খারাপ হয়। মাগীর হোগায় বেশি দেমাগ হইছে, কথায় কথায় এইডা পারুম না অইডা পারুম না। মন চায় লাত্থি মাইরা… বাকি কথাটা মনে মনে তিনি আর শেষ করেন না। ডাইনিং রুমের দিকে পা বাড়ান। খাবার টেবিলে এমনিতেও রেজাউল করিমের বেশি কথা বলা পছন্দ না। কিন্তু তার বিরাশি বছর বয়সী বৃদ্ধ বাবা দেশের চলমান রাজনীতি থেকে শুরু করে নিজের শরীর স্বাস্থ্য, সাংসারিক, মহল্লার সব কথাই তার সাথে শেয়ার করার জন্য জমিয়ে রাখলেও আজকে বেশ আশ্চর্যজনক ভাবে খাবার টেবিলে তার কাশির শব্দ ছাড়া নীরবতা বিরাজ করছে। এমন কি তানভীরও কেমন চুপচাপ বলে রেজাউল করিমের ভেতরের অস্বস্তিটা হাত পা ডালপালা বিস্তার করে বেরিয়ে আসতে চাচ্ছে ভেতর থেকে। হঠাৎ করে ঘরের ভেতর দিয়ে পরী উড়ে যাওয়ার মত নিস্তব্ধতা নামিয়ে দিয়ে তার বাবা জিজ্ঞেস করলেন – বাবা পঁচু, তোমার নামে আশেপাশের মাইনসের কাছে এই সব কি শুনতাছি? এই কথা শুনে রেজাউল করিমের গলায় মটরশুঁটি দিয়ে বেশি করে কাঁচা মরিচের ঝালে রান্না করা দেশি কই মাছ দিয়ে মাখা ভাতের নলা আটকে যায়। এই প্রথম পঁচু নামটা শুনে তার খারাপ লাগে না। দুর্বল ভাবে হলেও সে জানতে চায়- কি আবার শুনবেন? কেশে গলা পরিষ্কার করে তার বাবা বলেন- শুনলাম তুমি নাকি ঘুষ খাইছ? তাই প্রোমোশন পাও নাই? চাকরীও হারাইতে পারো? ওদিকে বিবিও জানতে চায় তানভিরের আব্বা, সত্যিই তুমি ঘুষ খাইছ? ধুর কি সব বলতাছো তোমরা? ভাতটাও খাইতে দিবা না নাকি সারাদিন পর? তানভীরের খিলখিল হাসির শব্দে রেজাউল করিমের হাত থেকে ভাতের বাকি নলা পড়ে যায়। বলে – পাপা, আমি জানিইই ঘুষ মানে কি? দুর্বল গলায় তিনি বলেন, কি বাবা? ঘুশ মানে হাগু! হিহিহি রেজাউল করিমের সত্যিই মনে হতে থাকে তার মুখে দেয়া ভাতের নলায় আসলে দুর্গন্ধ যুক্ত কিছুই মিশে আছে। আসলেই তার মুখ ভর্তি হয়ে আছে মলে! আর ওদিকে তানভীরের হাসির একটানা খিলখিল শব্দে তার মনে হতে থাকে পুলিশের গাড়ির সাইরেন বাজতে বাজতে বোধহয় এদিকেই আসছে!