“মাই, এক ট্যাক্সি লে লুঁ” ? ভিখুর একহাতে তার মায়ের বাঁহাতখানা আর অন্য হাতে সুদৃশ্য একটি ব্যাগ যাতে তার মায়ের জামা-কাপড় আর আছে শোনপাপড়ি, মোতিচূরের লাড্ডু। এতোয়ারি আজ অনেকদিন পর বোনের বাড়ি যাচ্ছে যে। তার হাঁটুর ব্যথার তেল আনার একটা বিশেষ ইচ্ছাও আছে আজ এই যাওয়ার পিছনে।
ছেলের কথায় এতোয়ারি ঘাড় ঘুরিয়ে ভিখুকে দেখে মন্তব্য করে, “বিলকুল তেরা বাপ পে গ্যয়া, তেরা বাপ ভি না তেরা যেয়সা হি না সমঝ থা। চার পৈসা জেব পে আয়া কি নহি , টেসকি চড়নে চলা”, “বেটা লছমি কি মরয়াদা কর্”। বাবার কথা আবছা মনে থাকলেও তার সাথে বাবার মিল-অমিল ভিখুর মনে নেই বিশেষ। সে একটা চুয়ান্ন নম্বরের খোঁজ করছিলো যে বাসটা তাদের ধোপার পুকুর স্টপেজে নামাবে তার মৌসির বাড়ি। সেখানে আছে মৌসি, ছবিয়া আর রামসুরত, ছবিয়ার বর, ঘরজামাই। নইলে মৌসির দুকান সামলাবে কে ? এতোয়ারির ডাকে ঘাড় ঘোরায় ভিখু, “মালিশ কা তেল লেনেকো না ভুলনা”। ভিখু জানে মালিশের তেল নিতে মা নিজেই কখনোই ভুলবে না। আর ভিখু তো মা কে মৌসির বাড়িতে দিয়ে চলেই আসবে ফিরতি বাসে। তার পেরাইভেট ডাক বিলির কাজ আছে না।
ডানহাতে ঝাঁকানি খেয়ে ভিখুর চিন্তার সুতো ছেঁড়ে, দেখে মা এক ভুজিয়াওয়ালাকে দেখিয়ে বলছে, “এ ভিখু মুঁগফল্লি লে লুঁ ? তেরা বাপু ভি বাহর যাতে তো মুঁগফল্লি জরুর লাতে থে”। কি আর করে ভিখু, বলে “কিতনা” ? “পানশো”, ভিখু বোঝানোর চেষ্টা করে, “খরাব হো যায়েগা মাই, কিড়া পর যায়েগা”। আসলে চিনাবাদাম ভিখুর খুব একটা পছন্দ নয়। “ঢাইশো জরুর লেও”, অগত্যা আড়াইশো গ্রাম চিনা বাদামের প্যাকেটেটা মায়ের হাতে দিতেই ছেলেমানুষের মতো এতোয়ারি একমুঠো মুখে পুরে দেয়, আর আধফোকলা দাঁতে চেষ্টা করে চিবানোর। দাম মেটাতেই সামনে চুয়ান্ন নম্বর বাস দেখে ভিখু তরবরিয়ে মাকে তাড়া দেয়, “জলদি উঠ মাই”, বলেই প্রায় খালি বাসটার ফুটবোর্ডে উঠে পরে। ভুজিয়াওয়ালার পয়সা মেটাতে গিয়ে মায়ের হাত সে আগেই ছেড়েছিলো। এখন বাসে উঠতে না উঠতেই বাস ছেড়ে দিয়েছে দেখে ভিখুর খেয়াল হলো তার বুড়ি মা বাসের অনেক পিছনে প্রায় দৌড়চ্ছে, একটা ছোট্ট বালিকার মতো। এতোয়ারি প্রায় দিগ্বিদিক জ্ঞানশূন্য হয়ে চেঁচাচ্ছে, “এ ববোয়া, এ মেরা বেটা……”। বাস আসলে ঠিক মতো স্টপেজে দাঁড়ায়নি। এবার ঠিকঠাক দাঁড়িয়ে পড়লো। ভিখু তাড়াতাড়ি ফুটবোর্ড থেকে নেমে হাত ধরলো তার মায়ের। মা তার হাঁফাচ্ছিলো কিন্তু এক অদ্ভুত স্বস্তিতে ভরা ছিলো সারা মুখমন্ডল।
হাত ধরেই বাসে ওঠালো ভিখু ওর মাকে। একটা সীট দেখে দু’জনে বসলো। একটু অবাক চোখে মাকে দেখে ভিখু বললো, “তু তো বচ্চিকে মাফিক দৌড় রহি থি, কহাঁ গয়া তেরা ঘুটনু কা দর্দ”, প্রায় ফোকলা হাসিতে গাল ভরিয়ে এতোয়ারি তার কাঁধে মাথা রেখে বললো, “মুঁগফল্লি খিলায়া না তু, জোশ মিল গয়া রে ববোয়া”।
"আলোর পথ"-এ প্রকাশিত গল্পসমূহ ও লেখনী মূলত পাঠক, শুভাকাংখী এবং সম্মানিত আবেদনকারীদের কাছ থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে। এই কনটেন্টগুলোর উপর আমরা কোনো মেধাসত্ত্ব (copyright) দাবি করি না। যদি কোনো গল্প, ছবি বা তথ্যের কপিরাইট সংক্রান্ত বিষয়ে আপনার প্রশ্ন, সংশয় বা আপত্তি থাকে, তাহলে অনুগ্রহ করে আমাদের যোগাযোগ পৃষ্ঠায় যোগাযোগ করুন। আমরা যথাযথ আইনানুগ পদ্ধতিতে বিষয়টি পর্যালোচনা করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করব।