
শেখ আমীরশাহ খুব বিচক্ষণ মৌলবী ছিলেন, হিন্দুশাস্ত্রেও তার বেশ দখল ছিল। তারই জোরে গোপালকে তিনি অনেক সময়ে ঠকাবার চেষ্টা করেন। অবশ্য তার ফলে নিজেই জব্দ হন সর্বদা, কিন্তু তাতে লজ্জা নেই তার। বার বার গোপালকে ঠকাবার চেষ্টা করেও বুদ্ধিমান গোপালকে কোনমতেই ঠকানো যায় না বরং শেখ আমীরশাহই বারবার ঠকেন। একদিন গোপাল ভিন গায়ে এক বন্ধুর বাড়িতে গেছে। শেখ আমীরশাহ্ও সেই বন্ধুর বাড়িতে সেইদিন নিমন্ত্রিত। গোপাল গিয়ে বন্ধুর বাড়িতে পৌছে দেখে শেখ আমীরশাহ ভোজনে বসেছেন।
গোপাল জিজ্ঞাসা করলেন, ‘কী খাচ্ছেন মৌলবী সাহেব? শেখ সাহেব শান্ত্রের মারফত রসিকতা করবার লোভ সম্বরণ করতে পারলেন না এবার। বললেন ‘এই যে গোপাল, তোমাদের অবতার ভোজন করছি।’ তিনি মাছ খাচ্ছিলেন, এবং মৎস হলো দশ অবতারের প্রথম অবতার। গোপালেরও শাস্ত্রজ্ঞান বেশ প্রখর, একথা শেখ সাহেব বেশ ভালোভাবেই জানেন। গোপাল অর্থনা অন্যরকম বুঝবার ভাণ করলেন। তিনি বললেন, ‘অবতার? তৃতীয়-অবতার নিশ্চয়ই?’ শেখ সাহেব তোবা, তোথা’ করে লাফিলে উঠলেন ভোজন ত্যাগ করে। কারণ, হিন্দুদের তৃতীয় অবতার হলেন বরাহ বা শুকর অবতার এবং শুকরের মাংস হল মুসলমানের পক্ষে নিষিদ্ধ খাদ্য। বেশ জব্দ হয়েই সেদিন শেখ সাহেবকে উপোসেই থাকতে হল, কারণ শেখ সাহেব আর কিছুতেই সেদিন খেলেন না। এদিকে গোপাল বন্ধুর বাড়িতে বেশ পেট ভরেই খেয়ে মুচকি মুচকি হাসতে হাসতে বিদায় নিল। এবারও শেখ সাহেব হলেন ভীষণ জব্দ। তিনি খুব ব্যথিত হয়ে প্রতিজ্ঞা করলেন আর কোনদিনও গোপালের সঙ্গে খারাপ রসিকতা বা খারাপ ব্যবহার করবেন না মনে মনে বললেন।