গাবলুমামা কঁকিয়ে উঠল, “আচ্ছা আপা, বাবা-মা কি আর নাম খুঁজে পেল না। গাবলু একটা নাম হল? আমি এবার আমার নাম পাল্টাব।”
মা হা করে তাকিয়ে রইল।
মামার দৃঢ় ধারণা এই নামের কারণেই তার চাকরি-বাকরি হচ্ছে না। তাই সিদ্ধান্ত নিয়েই ফেললেন নাম পাল্টানোর। আমাকে দেখে সবাইকে শুনিয়ে বললেন, “হ্যারে তিতলি, গালিব খান নামটা শুনতে বেশ লাগে, না?”
আমি কোনো ঝামেলায় না গিয়ে সায় দেই।
বিকেলে মন্টিটা হাঁপাতে হাঁপাতে এসে বলল, “গাবলুমামা, জান, আজ স্কুল ম্যাচে আমি দুটো গোল দিয়েছি।”
মামা বিছানা থেকে তড়াক করে লাফিয়ে উঠে বলল, “দেখ মন্টি, আমি এখন আর তোদের গাবলুমামা নই। আমি এখন গালিব খান।”
রাতে খাবারের টেবিলে সবার সামনে কথাটা উঠতেই আপু ফিক করে হেসে দিল। মামা একটা গাট্টা মারতেই ও চুপ হয়ে গেল।
বাবা গম্ভীর হয়ে বললেন, “মুখে বললে তো হবে না, গাবলু। এফিডেবিট করে আইনমাফিক করতে হবে। বাপ-দাদার নাম পাল্টানো অত সহজ নয়।”
“তাই না হয় করা হোক।”
বুড়ো আঙুল দেখিয়ে সায় দিল ভাইয়া। মামার সবচেয়ে ভালো বন্ধু। মামা-ভাগ্নে বলে কথা।
বাবা আর কথা বাড়ালেন না।
পরদিন বিকেলে কলিংবেল বাজতেই কাজের ছেলে পল্টু দৌড়ে গেল।
মা চেঁচিয়ে বললেন, “কে এসেছে রে পল্টু?”
পল্টুর চটপট উত্তর, “গাবলুমামা।”
ঘরে ঢুকেই মামা পল্টুকে এমন ধমক লাগলেন, “খবরদার আর কখনও গাবলুমামা বলবি না। আমি এখন গালিব খান।”
বেচারা পল্টু পালিয়ে বাঁচল।
ঠিক দুসপ্তাহ পরের ঘটনা। রাতে খাবার টেবিলে বসে সবাই খাচ্ছি। মা, মামার দিকে তাকিয়ে মনখারাপ করে বললেন, “তোর আর চাকরি হল না।”
বাবা বললেল, গাব…. সরি, মিস্টার গালিব তোমার ওই সিম্পসন কোম্পানির চাকরির কী হল? ওটা তো হওয়ার কথা।”
মা খাওয়া বন্ধ করে বললেন, “এখনও তো কোনো চিঠিপত্তর এল না।”
চিঠির কথা শুনেই রান্নাঘর থেকে পল্টু বেরিয়ে এসে জানাল, “একটা চিঠি এসেছিল মামার নামে।” পল্টু হাসি হাসি মুখে বলল, লোকটা কইল, এখানে গাবলু খান নাম কেউ থাকেন? আমি সোজা না জবাব দিয়া কইলাম, আমারে আপনি মার খাওয়াইতে চান?”
মামা তিন লাফে পল্টুর কাছে গিয়ে বললেন, “হায়! হায়! কী করেছিস, নিশ্চয়ই ওটা আমার অ্যাপয়ন্টমেন্ট লেটার ছিল। এখন কী হবে!” বলেই মামা মাথা চাপড়াতে লাগলেন।
মা এইবার রেগে গিয়ে বললেন, “দেখলি বাবা-মার অমর্যাদা করলে কী ফল হয়?