গাজী মিয়ার গাড়ি—- শামীম শাহেদ

কারও কোনো ক্ষতি করতে হলে হয় তাকে একটা বিয়ে করিয়ে দিবি, তা না হলে একটা পুরনো গাড়ি কিনে দিবি। মামার বাণীটি এভাবে অমর হয়ে যাবে ভাবতেই পারেনি গাজী মিয়া।

পার্টির বড় ভাই একদিন একটা ভাঙা প্রাইভেটকার উপহার দিয়ে বলেছিলেন, গাজী তোমারে দিলাম, চালাও। চালাও আর পার্টির কাজ করো।
গাজী মিয়া তো অবাক। গাড়ি! পার্টির কাজ করার জন্য গাড়ি!
কিন্তু দেখা গেল, গাড়ির মাত্র একটা দরজা খোলে। বাকিগুলো ফিক্সড। সামনের বাঁ-দিকের দরজাটা দিয়েই ঢুকতে হয়, বেরুতে হয়। বাকিগুলোর শুধু জানালা খোলে। সেই জানালা দিয়েও ঢোকা যায়, বের হওয়া যায়। তাতে কী! মরা হাতিও লাখ টাকা। তাই গাজী মিয়া মহা খুশি। কিন্তু বিপত্তি ঘটল সেদিন।
কথায় বলে, পুরুষের বড় প্রেস্টিজ নাকি বউয়ের কাছে।
ফুরফুরে এক বিকেলে বউকে সঙ্গে নিয়ে বেড়াতে বেরিয়েছে গাজী মিয়া। গাড়ি চলছে দুলকি চালে। গাজী মিয়া ড্রাইভার। একমাত্র সওয়ারি বউ। মনেমনে ভাবনা, আহা, জীবনটা এত ছোট কেন! কত দিনের স্বপ্ন ছিল বউকে পাশে নিয়ে কোনো এক বিকেলে গাড়িতে করে…। হঠাৎ ব্যাটারি ডাউন। পরের দৃশ্য, স্টিয়ারিং হুইলে বসে আছে বউ, আর গাজী মিয়া গাড়ি ঠেলায় ব্যস্ত। বউয়ের কাছে প্রেস্টিজ পাংচার!
কোনোমতে ঠেলেঠুলে বাংলামোটর মোড় পর্যন্ত নেয়ার পর স্টার্ট নিল গাড়িটা। তখনই সিগনাল। হঠাৎ দেখা গেল, গাড়ির দিকে তাকিয়ে এক ট্রাফিক পুলিশ মুচকি মুচকি হাসছে। ঘটনাটা খুব লাগল গাজী মিয়ার। একটু রেগে গিয়েই প্রশ্ন করলেন, কী ব্যাপার, হাসেন কেন?
আবার হাসলেন তিনি।

 
কী ব্যাপার, সমস্যা কী?
আপনার গাড়ি দেখে হাসি।
এতে হাসার কী আছে?
স্যার, আমি সিওর আপনার গাড়ির ফিটনেস নেই।
আপনার কথা ঠিক না, ফিটনেস আছে।
যদি ফিটনেস থাকে তাইলে আমি আপনারে মিষ্টি খাওয়াব।
যা হোক, সেদিন গাড়িটি ছেড়ে দিলেও গাজী মিয়া খুবই অপমানিত বোধ করেছিলেন। সেই গাড়ি নিয়ে গাজী মিয়ার ভোগান্তির অন্ত নেই। একবার শপিং শেষে রাস্তায় নেমে গাজী মিয়া দেখলেন জায়গামতো গাড়ি নেই। গাড়ি হাওয়া। কী ব্যাপার, গাড়ি কই? অনেক খোঁজাখুঁজির পর রাস্তার মাথায় গাড়ির সন্ধান পেলেন গাজী মিয়া। তদন্তে জানা গেল, ট্রাক ঢোকানোর সময় গাড়িটা খুবই ঝামেলা করছিল। তাই ড্রাইভার নিজে দরজা খুলে গাজীর গাড়ি ড্রাইভ করে সরিয়ে তারপর ট্রাক ঢুকিয়েছিলেন। গাজী মিয়া তো অবাক। চাবি তার কাছে অথচ ট্রাক ড্রাইভার গাড়ি চালায়। আজব তো!
শেষ দৃশ্য :
অনেক ঝক্কি ঝামেলার পর গাজী মিয়া এই সিদ্ধান্তে পৌঁছালেন, গাড়ির চেয়ে সাইকেলই ভালো। তাই শেষমেশ গাড়ি বিক্রি করে তার সঙ্গে পাঁচশ টাকা মিলিয়ে গাজী মিয়া কিনলেন একটা সাইকেল।
লেখক : সাংবাদিক

"আলোর পথ"-এ প্রকাশিত গল্পসমূহ ও লেখনী মূলত পাঠক, শুভাকাংখী এবং সম্মানিত আবেদনকারীদের কাছ থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে। এই কনটেন্টগুলোর উপর আমরা কোনো মেধাসত্ত্ব (copyright) দাবি করি না। যদি কোনো গল্প, ছবি বা তথ্যের কপিরাইট সংক্রান্ত বিষয়ে আপনার প্রশ্ন, সংশয় বা আপত্তি থাকে, তাহলে অনুগ্রহ করে আমাদের যোগাযোগ পৃষ্ঠায় যোগাযোগ করুন। আমরা যথাযথ আইনানুগ পদ্ধতিতে বিষয়টি পর্যালোচনা করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করব।

দুঃখিত!