চা খাচ্ছেন। আর ভাবছেন। কত কিছু ভাবনা আসে না, চা খাওয়ার সময়। ভাবতে ভাবতে একটু মাথাও চুলকালেন। ব্যস। খসখস করে মাথা চুলকালে যা হয় তাই হল। টপ করে আম পড়ার মত চায়ে পড়ল মাথার কয়েক দানা খুস্কি। চা ও এই খুস্কি। চা শেষ। উহু। শুধু খুস্কি। চা ও শেষ খুস্কি। চাউসেস্কু। আরে না না। আমি চাউসেস্কু শব্দটা শেষে লিখিনি। ওটা যাদের চোখের দোষ আছে তাঁরা পড়লেন। চাউসেস্কু ত সেই কবে দেশের ফসল বিক্রি করা পয়সায় রোমানিয়ায় সোনার প্রাসাদে। তারপর কত কাণ্ড করে তাঁর সোনাঝরা সন্ধ্যা শেষ হল। মানুষের হাতেই মারা গেছিলেন। দ্যূত তেরিনা। এসব ত সবাই জানে। সবাই জানে শেষের সেদিন ভয়ঙ্কর ই হয়। অন্যকিছু হয় না। আচ্ছা এ প্রসঙ্গে মনে এলো একটা কথা।
এই যে এই অসীম সোনার লালসা মানুষটার ছিল তা কি পূর্ণ করা হয়েছিল তাঁর মৃত্যুর আগেও। মানে গুলি যে খেতে হয়েছিল সেগুল কি সোনার গুলি ছিল। কোন ঐতিহাসিক বন্ধুকে জিজ্ঞাসা করে দেখবেন ত এদিকে আমিও খবর রাখছি, পেলেই জানাব। তবে এটা ও ঠিক এই চাউসেস্কুর ঘটনা নয় নয় করে পঁচিশ বছর হতে চলল। অত দিন আগে লোকে অতটা মনে হয় খবর পেতনা চটজলদি। নাহলে ওনার মত লোক এই প্রবাদ টা জানতেন না যে কয়লা হল সোনা। শুধু রংটা কালো। জানলে দু চারটে কয়লা তুলে রাখতেন কেউ জানলেও কিচ্ছুটি হতনা। এই ত বর্ধমান ঢুকতে ওয়াগন থেকে কিছু লোক এন্তার কয়লা সরায় রোজ।
তাদের কে মারে। আর উনি ত ছিলেন বড় মানুষ। ট্রেন থেকে না নিয়ে একদম না হয় খনির পাট্টাটাই নিতেন বাবা। এখানে ত কত মানুষ নেয়। শান্তির সোনামুখি জীবন। এই শান্তি বলতে একটা গল্প মনে পড়ছে। কাজের সূত্রে ইরান গেছি। ইরান অব্ধি যদি রান টা করেই ফেলেছি তাহলে যা হয়, বাঙ্গালি জিনভ্রমন প্রাণী। ও জিনকে আমিও সামলাতে পারিনা। বেরিয়ে পড়লাম। পারসে-পলিস। আহা! শান্তি। সংস্কৃতি। মাধুর্য। ভাস্কর্য। ঐশ্বর্য। এইবারে থামুন। কারণ এই সমস্ত নাকি আলেকজান্ডার এক রাতে জ্বালিয়ে দিয়েছিলেন। বিখ্যাত সিরাজি খেতে খেতে রাগে ও নেশার ঘোরে। ভাবুন। এমন ও হয়। এখন ত আর রাজা, সম্রাট, বাদশাহ এসব হয়না। আমাদের এখনকার কোন আলেকজান্ডার কে এরকম করতে দেখছি বলে ত মনে পড়ছে না। তাঁরা খুব শান্ত। নির্লিপ্ত। এ তাঁদের মহানুভবতা।
আমরা দিব্বি এগিয়ে যাচ্ছি। এগোচ্ছে আমাদের সাম্যতা। জীবনের নাব্যতা। অসীমের দিকে অভিমুখ। সভ্যতার চাকা। অভিমুখ ও সভ্যতা। অসভ্যতার চাকা। আরে না না। আমি অসভ্যতার চাকা কথাটা শেষে লিখিনি। ওটা যাদের চোখের দোষ আছে তাঁরা পড়লেন। অসভ্যতার চাকা লেখা যেত, যদি ওরকম রাগী কিন্তু সাম্রাজ্য-হীন আলেকজান্ডার ঘুরে বেড়াত চারিদিকে। বাড়ি জ্বালিয়ে দিত অল্প রাগে, নেশা করে। ঘোড়ায় তুলে নিত সিরাজের সাথে কাবাব করে খাবে বলে বা পিষে দিত অনাহুত উপেক্ষিত সব মানুষ গুলোকে যারা আপনার চারপাশে আছে। এই ধরুন যদি বাড়ি থেকে বেরিয়ে হাঁটছেন। চারপাশ দেখতে দেখতে যাচ্ছেন। আর আপনার মুখটা কালো হয়ে গেল সবকিছু দেখে। শুনে। সেরকম হয় কি! কত কিছু যে বাজারে আছে। আপনাকে কালো হতে দেবেই না এই বিশ্ব সংসার। শুধু বাড়ি এসে একটু খরচ করলেই হল।
পার্থক্য শুধু, আলেকজান্ডার রা খরচ করে ঐ ঘোড়া গুলোকে তাজা রাখতে আর আপনি আপনার কালো মুখ ঢাকতে খরচা করেন। যাক গে। এও ত সবাই জানে। ফালতু ফালতু সময় খরচ করা। কত রকম খরচ হয় সে নিয়ে কথা বলা। আচ্ছা এই থামলাম। আচ্ছা খরচা বলতে একটা কথা মনে হচ্ছে। একটু বলে নি। একটা ছোটবেলার গল্প বলি। এই একটা গল্প হলে না, যা তা সুবিধা হয়। যে বলে তার। যে শোনে তাঁর ও। ত যাই হোক। ছোটবেলা একটা শিল্প-মাধ্যম আমাদের মনে খুব জনপ্রিয় হয়েছিল। আমাদের মানে তারা যারা গান বাজনা শুনতাম কিন্তু গাইতে বাজাতে পারতাম না। আর ছবি আঁকার তুলি নিয়ে পেন্সিলে লেখার মত চেপে ধেবড়ে একাকার করে শেষ টায় ও কাজে ক্ষান্ত দিয়েছিলাম। আর খেলার মাঠ থেকে প্রায় বিতাড়িত হয়েছিলাম কারণ ভালো করে বলে লাথি মারা হত না বলে। ত এই রকম একটা ছোটবেলার বঞ্চিত ছেলে মেয়ের দল আবিষ্কার করলাম যে কোলাজ বলে একটা বস্তু আছে। যেখানে খবরের কাগজ থেকে কিছু একটা কেটে সেঁটে দাও দিব্বি একটা বিচ্ছিন্ন যখন একা কিন্তু সব মিলিয়ে সঙ্ঘবদ্ধ মানে দাঁড়ায়।
আচ্ছা এখানে জানিয়ে রাখি, কোলাজের অনেক রকম কাঠামো বা আকার ও প্রকার আছে তা যেমন সবাই জানে, আমরা তখন জানতাম না। তাই ঐ আর্ট পেপারে খবর কাগজ ছেঁড়া আর জোড়া অব্ধি আমাদের জানা চেনা আর কি। এই রকম একদিন কোলাজ বানাতে গিয়ে একটু অবাক হলাম। আর সেটা বলার জন্য এই গল্প। তা হল, খবরের কাগজে দেখি প্রায় অনেক ঘটনাই বছরের বিভিন্ন সময়ে উৎসবের বর্ণনার মত একরকম। যেমন ধরুন প্রতি বছর দু চারটে মিছিল হলে কলকাতা শহরে পদপিষ্ট হয় মানুষ। হাসপাতালে রোগী যেতে পারেনা। শিশুর শ্বাস কষ্ট হয় রাস্তার মাঝে। ইত্যাদি। আপনারা সবাই জানেন। সবটাই আগের প্রত্যেক বার ই হয়েছে। তাহলে খবরের কাগজ এত পাতা খরচ করে কেন। এক লাইনে খবর হয়না – এবার আলাদা কিছু হয়নি, বিস্তারিত যে কোন আগের কাগজে দেখুন।
আমরাও একটা পুরনো কাগজ বার করে পড়ে নিলাম। মানে এর আগের মিছিলের একটা দিনের কাগজ। সেখানে অচল মানুষের কাহিনী আছে। কলঙ্কিনী কলকাতার মুখ আঁকা আছে। আরে না না। আমি কলঙ্কিনী কলকাতা কথাটা শেষে লিখিনি। ওটা যাদের চোখের দোষ আছে তাঁরা পড়লেন। কলকাতা কেন আমরা ত তিলোত্তমা পৃথিবীর বাসিন্দা তাই না। দ্যূত তেরি না। আমরা কোথাকার বাসিন্দা, কেমন আছি, এসব কি কাউকে বলতে হয়। আমরা সবাই জানি। বুঝি। সময় মত ভীরু, সাহসী আর এড়ানো স্বভাব হই। মারতে হলে মারি। গিলতে হলে গিলি। সব কিছুতেই পরাধীনতার গ্লানি, না না থুড়ি স্বাধীনতার ছানি, ধুর আমার চোখ টা গেল না কি, বলতে চাইছি স্বাধীনতার হলুদ জ্যোৎস্না। ইতিহাসের হলুদ পাতা। ধুর ধুর। এসব উটকো কথায় না গিয়ে বরঞ্চ একটা গরুর রচনা লিখব আজ ঠিক করেছি। সেটাতে মন দিই।
আছা তার আগে একটা গল্প মনে পড়ে গেল। আরে না না বিশ্বাস করুন এটা আগের টার মত বোরিং না। একটু ইসের গন্ধ আছে। প্লিজ। প্লিজ। সরটে সারবো। বিশ্বাস করুন। ঐ ইতিহাসের কথায় মনে পড়ল। ছোটবেলা ইশকুল জীবনে আমার এক বান্ধবী ছিল। খুব ইতিহাস পড়তে ভালোবাসতো। কিন্তু সব চরিত্র ছেড়ে ও কিভাবে যেন ঔরংগজেব হবে ঠিক করেছিল। যে গুন টা ওকে পাগল করেছিল তা হল উনি নাকি বিশ্বে নিজেকে ছাড়া কাউকে বিশ্বাস করেন না। বেচারি বড় হয়ে কোন সাম্রাজ্য ধ্বংস করবে। এখন ত সব ই গণতন্ত্র। নাহ। চাউসেস্কু, আলেকজান্ডার, ঔরংগজেব, আমার বান্ধবী এসব করতে করতে গরুর রচনাটাই শুরু করা হলনা। গরু কেন আর লেজ নারে না, কিভাবে চার পা থেকে দু পা হল আর রবিবারে মুরগী কে বলল চিকেন সে গল্প টা একদিন শোনাবোই। আপনার ত চায়ে খুস্কি পড়ল। আর এক কাপ হয়ে যাক।