কোন এক গ্রামে একজন গরিব ছিল। তার কোন আত্মীয় স্বজন ছিল না। সে প্রত্যেক দিন ঐ গ্রামের একটি পুকুরে স্নান করে শিব মন্দিরে ঢুকত। যে সব ভক্ত মন্দিরে আসত, পূজো দিত তারা তাকেও দু একটি ফল খেতে দিত। কেউ কেউ পয়সা দিত। যেদিন যা পেত তাই ঐ গরিব লোকটা খেত। যেদিন পেত না সেদিন খেত না। সে না খেয়েও সেখানেই পড়ে থাকত। অন্য কোথাও যে যেতো না। একদিন এক লক্ষপতি বউকে নিয়ে শিব মন্দিরে পূজো দিতে এসেছিল। তার কোন ছেলে মেয়ে ছিল না। সে পূজো দিয়ে ফেরার সময় তার সামনে একটি কলা ফেলে দিয়েছিল কলাটি তুলে নিয়ে লক্ষপতিকে ফেরত দিতে দিতে ঐ গরিব লোকটা বলল, “এই কলা তোমার বউকে দাও।
এক বছরের মধ্যে তার একটি ছেলে হবে।” যার যা থাকে না তার জন্য তার দুঃখ থাকে বশি। যে যা চায় সে তা পায় না। লক্ষপতি সন্তান চায় কিন্তু সে তা পায় নি। লক্ষপতির সন্তানের আকাঙ্খা ছিল প্রবল। সে বউকে কলা খেতে দিল। এক বছরের মধ্যে লক্ষপতির বউ একট ছেলের মা হল। লক্ষপতি ভাবল, গরিব লোকটা সাধারন লোক নয়। অসীম ক্ষমতার অধিকারি সে। এই কথঅ ভেবে সে ঐ গরিব লোকটার কাছে গের। তাকে দেখে গরিব লোকটা বলল, “কি ছেলে রাতদিন কাঁদছে বুঝি?” লক্ষপতি তার কথা মূনে অবাক হয়ে বলল,“আপনি অসম্ভবকে সম্ভব করতে পারেন। আপনার ক্ষমতা অসীম। আপনার আশীর্বাদে আমি ধন্য হয়েছি। আপনি যা চাইবেন আমি তাই দেব। আপনি অনুগ্রহ করে কিছু নিলে আমি ধন্য হব। বলুন, আমি আপনাকে কি দিয়ে ধন্য হতে পারি।” লক্ষপতি বার বার অনুরোধ করা সত্ত্বেও গরিব লোকটি একটি কথাও প্রথমে বলল না।
অনেকক্ষণ ধরে একই কথা বলতে থাকায় গরিব লোকটি মুখ খুলল। “আমার কোন কিছুই দরকার নেই। তবে তুমি একটু ভাল হও। গরিবদের বড্ড ঠকাচ্ছ। চুরি-চামারি করে বড্ড বেশি লাভ করছ। এত লাভ করোনা। পাপ বেড়ে যাবে। তোমার অপকর্মের জন্য তোমার ছেলের অমঙ্গল হবে।” লক্ষপতি সেদিন থেকে গরিবদের ঠকানো বন্ধ করে দিল। যা যত জিনিস বন্ধক রেখেছিল সব ফেরত দিল। তারপর থেকে সাধারন ছোট খাট ব্যবসা করে সে দিন যাপন করতে লাগল। বেতালের এই কাহিনী শুনিয়ে বলল, “রাজা, গরিব লোকটার কথা ফেলে গেল কি করে? ওর কথায় এত শক্তি এল কোত্থেকে। শুধু শিব ঠাকুরের প্রসাদের উপর নির্বর করে জীবন যাপন করলেই কি এতটা ক্ষমতার অধিকারী হওয়া যায়? কি একটা ক্ষমতার অধিকারী হওয়া যায়? আমার এই প্রশ্নের জবাব জানা সত্ত্বেও যদি না দাও তাহলে কোমার মাথা ফেটে চৌচির হয়ে যাবে।”
এই প্রশ্নের জবাবে বিক্রমাদিত্য বললেন, “গরিব লোকটার প্রত্যেকটি কথা যদি ফলে যেত তাহলে গাঁয়ের লোক হয়তো অনেক দিন আগেই তাকে মাথায় করে রাখত। কোন কোন কথা মাঝে ফলে যায়। এক্ষেত্রেও তাই হয়েছে। অনেক তীর্থ ঘুরে যা হয়নি গরিব লোকটার দেওয়া ফল খেয়ে যখন সন্তান হল তখন স্বাভাবিক ভাবেই তোকে অসীম ক্ষমতার অধিকারী বলে মনে হয়েছিল লক্ষপতির। বিক্রমাদিত্যের মুখ খোলার সঙ্গে সঙ্গে বেতাল শবসহ নিয়ে ফিরে গেল সেই গাছে।