খুনের রহস্য

রাত দেড়টা । এতক্ষণে পাড়ার দোকান গুলো সব বন্ধ হয়ে যাওয়ার কথা । তারপরেও গভীর ঘুমে থাকা যুবকের তা মনে থাকেনা ।
সে উঠে পড়ে পাড়ার দোকান গুলোর উদ্দেশ্যে । সে খেয়াল করেনা বিছানা আগের মতই কিনা !
সিড়ি বেয়ে নামতে গিয়ে শব্দ হচ্ছে যুবক বুঝতে পারছে কিন্তু সে শুনছে না । সে ভাবছে সিগারেটের নেশায় তার মাথা খারাপ হয়ে যাচ্ছে হয়তোবা । রাস্তায় দু তিন টা কুকুর আরামে নাক ডাকছিল , কিন্তু তারা কিসের ভয়ে স্থান ছেড়েছে । যুবক ভাবে
“বাহ ভালই হলো”
যুবক এ প্রাণী গুলোকে খুব ভয় পায় । আর অল্প দূরেই পাড়ার দোকান গুলো । সোডিয়াম আলো গুলো যুবকের ওপর খুব একটা প্রভাব পড়ছে না ।অন্য সময় যুবক এ আলোতে অস্বস্তি বোধ করে । যুবক খেয়াল করলো আশ্চর্য জনক ভাবে প্রায় সব গুলোই দোকান খোলা ,
আর ক্রেতাও অনেক , যুবক ঘড়ি দেখে নেয় নাহ সময় তো ঠিকই আছে প্রায় দুটো বাজে এখন ।
সব চেয়ে বুড়ো দোকান দার পাড়ার বুড়ো মিয়া । বুড়ো হওয়ার অনেক আগেই বুড়ো মিয়া এই উপাধি খানা পেয়ে যান পাড়ার লোকের ডাকে।
চারটে সিগারেট নেয়ার পর যুবক নিজ বাড়ির উদ্দেশ্যে পা বাড়ায় , পথেই পুলিশের টহল গাড়ি ।
পুলিশ অফিস্যারঃ স্যার আপনি এতো রাতে কেন বেরিয়েছেন জানতে পারি ? আমরা কীভাবে হেল্প করতে পারি আপনার ?
যুবকঃ দেখুন অফিস্যার আমি সিগারেট নেয়ার জন্য এসেছি , চারটে সিগারেট নিয়েছি এখন বাসায় যাচ্ছি ।
পুলিশ অফিস্যারঃ আচ্ছা স্যার সিগারেট গুলো দেখাতে পারবেন ?
যুবকঃ হ্যাঁ অবশ্যই । আমার বুক পকেটেই প্যাক টা ছিল অফিস্যার এখন ঠিক পাচ্ছিনা । হয়তো কোথাও পড়ে গিয়েছে ।
পুলিশ অফিস্যারঃ আপনার গতিবিধি আমার ভাল লাগছেনা স্যার । আপনি এতো রাতে কোথায় সিগারেট পেলেন ?
যুবকঃ এইতো পেছনের দোকান টাই তো খোলা ছিল ।
যুবক ৫০ গজ পেছেনের দোকান টা বন্ধ দেখতে পায় সাথে পাড়ার সব গুলো দোকান ই বন্ধ । এতো জলদি এতো গুলো দোকান বন্ধ
হলো কী করে তা যুবকের মাথায় আসছেনা ।
যুবকঃ আচ্ছা অফিস্যার আমি আপনার গাড়ির বা পাশে একটা সাদা কুকুর দেখতে পাচ্ছি । একটু আগে দেখেছিলাম সব গুলো দোকান
খোলা । এখন্ন দেখছি বন্ধ । আমার সিগারেট গুলোও কোথায় গেলো ঠিক বুঝলাম না । আমি কী জানতে পারি বা পাশে ঐ কুকুর টা আসলেই আছে কিনা ?
পুলিশ অফিস্যারঃ সেন্ট্রি দেখোতো লোকটা কিছু খেয়েছে কিনা ? একে থানায় নিয়ে চলো , এর আচরণ আমার ভাল লাগছেনা ।
সেন্ট্রিঃ ম্যাডাম এই ভদ্রলোকের মাথায় সমস্যা আছে , আপনার আগের অফিস্যার অনেক টেস্ট করাইয়া দেখসিলো ভদ্রলোক সিগারেট
ছাড়া কিচ্ছু খায় না । কিন্তু দিনের বেলা সব ঠিক রাত্রে বেলা একলাই হাটে । এরে এর আগে ২ বার থানায় নেয়া হইসিলো । বাদ দেন ম্যাডাম , এই লোক হাটুক রাস্তায় আর কী করবেন কন ?
পুলিশ অফিস্যারঃ তাহলে চলো গাড়ি আপাতত থানার দিকেই নিয়ে চলো ।
সেন্ট্রিঃ ওকে ম্যাডাম ।
গাড়িটা যাওয়ার পর যুবক মিনিট পাঁচেক এর মত ভাবলেশ হীন ভাবে চেয়ে থাকে সাদা কুকুর টার গায়ে , যার গায়ে একটা দাগ নেই ।
একদম শুভ্র ।
যুবকের বা পকেটে চারটা সিগারেটের অস্তিত্ব খুঁজে পায় সে ।
বা পাশে চেয়ে দেখে বুড় মিয়া হাসছে , বুড়ো মিয়ার দোকান আবার খুলেছে । সাথে বাকি গুলোও । সবাই তার দিকে তাকিয়ে হাসছে ।
যুবকের মাথায় কিছু আটছেনা ।
যুবক হাটা ধরে নিজ গন্তব্যে , যুবকের আর কিছু ভাল লাগে না । সে সিগারেট ধরায় , সাদা কুকুর টা ঠায় আগের জায়গায় দাঁড়িয়ে থাকে ,
সে প্রতিদিন এভাবেই যুবকের ধোয়া ওঠা দৃশ্য উপভোগ করে । তারপর সে উধাও হয় ।
যুবক সিড়ি বেয়ে ওপরে আসে , সেই দু তিনটা কুকুর গুলো আগের জায়গায় ফিরে এসে বিশ্রাম নেয় । যুবক তার রুমে এসে চেয়ারে বসে আরেকটা সিগারেট শেষ করে । আধ ময়লা জ্যাকেট টা নিয়েই সে বিছনার দিকে এগোয় । যুবক এই প্রথম অনেক দিন পর স্তম্ভিত হয় ।
তার ই মতো দেখতে একজন তার বিছানায় শুয়ে আছে । যুবক সম্বিত হারায় ।
কিরে যাবিনা আজ কাজে ?
না বোধ হয় ! কাল রাতে একটা দুঃস্বপ্ন দেখলাম , দেখালাম আমি পাড়ার দোকান টায় ,
আজব স্বপ্ন বুঝবিনা তুই । মন খুব খারাপ ।
এতে মন খারাপের কী আছে ? স্বপ্ন তো স্বপ্নই চল উঠি । এখন স্যালারী বাড়ার সময় ,
অজথা কামাই দিলে চলবে না ।
হুম চল ।
প্রতি সন্ধ্যার পরেই যুবকের কাছে সব কেমন একই রকম মনে হয় । মনে হয় একই আছে । মুহূর্তের ঘ্রাণ গুলো গত এক দশক ধরে একই রকম আছে , যা প্রতিটা ঋতুতেই বদলে যাওয়ার কথা ।
রুমমেট ঘুমোচ্ছে এখন । যুবক পায়চারী করছে ছোটো বারান্দা টায় । কিছুক্ষণ গুন গুন করছিল সে । তারপর ভাবলো একটা বই পড়লে মন্দ হয় না।
কয়েক পাতা ওলটানোর পর যুবকের চোখ যায় তার বিছানা টার দিকে । কেউ একজন শুয়ে আছে , না ঘুমোচ্ছে । তারই বিছানায় গত রাতের মতই । মৃদ আলোয় ঘুমন্ত লোকের অবয়ব বোঝা যাচ্ছে না ।
যুবক খুব দ্রুতই বিছানার দিকে পা বাড়ায় । বারান্দা থেকে বিছানা টার অতটুকু দূরত্বই যুবকের মনে কয়েক ক্রোশ মাইলের অস্থিরতা জন্মায় । কাছে গিয়ে যুবক অবলোকন করে বিছানায় যে শুয়ে আছে সে আর কেউ নয় স্বয়ং যুবকই ।
যাকে ঘুম থেকে ওঠানো যায়না । একদম মৃত মানুষের মতই যার কোনো শ্বাস পড়েনা ।
যুবক আজ এ রহস্যের মিমাংসা করবেই ।
লুকিয়ে রাখা ধারালো ছুরিটা বের করে যুবক । বসিয়ে দেয় সেই ঘুমন্ত বডিটার বুকে ।
যুবক শেষ রাতে একটা সিগারেটে চুমক বসায় , ঘুমিয়ে পড়ে সে ।
সকাল ৭ টার দিকে গ্রিনভিউ এপার্টমেন্ট এর বাইরে এম্বুলেন্স দেখা যায় । পুলিশের বড় বড় কর্মকর্তা রা চাঞ্চল্য কর একটি ঘটনা উদঘাটনে আসে এই এপার্টমেন্টে ।
২৩ বছরের এক যুবক কে হত্যা করে তার রুমম্যাট । তার রুমম্যাট পালায় নি এ হত্যা কান্ডের পর । কিন্তু হত্যাকারীর কাছ থেকে পুলিশ কোনো তথ্যই এখন পর্যন্ত আদায় করতে পারেনি।

"আলোর পথ"-এ প্রকাশিত গল্পসমূহ ও লেখনী মূলত পাঠক, শুভাকাংখী এবং সম্মানিত আবেদনকারীদের কাছ থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে। এই কনটেন্টগুলোর উপর আমরা কোনো মেধাসত্ত্ব (copyright) দাবি করি না। যদি কোনো গল্প, ছবি বা তথ্যের কপিরাইট সংক্রান্ত বিষয়ে আপনার প্রশ্ন, সংশয় বা আপত্তি থাকে, তাহলে অনুগ্রহ করে আমাদের যোগাযোগ পৃষ্ঠায় যোগাযোগ করুন। আমরা যথাযথ আইনানুগ পদ্ধতিতে বিষয়টি পর্যালোচনা করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করব।

দুঃখিত!