সকাল বেলায় একেনবাবুর ফোন, “স্যার, আপনি কি এখন ফ্রি আছেন?“
আজ শনিবার ৯-ই অগাস্ট। সকালে একবার পিসিমাকে দেখে আসবো ভাবছিলাম। অনেকদিন ধরে বলছেন, যাচ্ছি যাবো করে যাওয়া হয় নি। আজ সকাল থেকেই মন প্রস্তুত করে বসে আছি।
“কেন বলুন তো ?“ একেনবাবুকে জিজ্ঞেস করলাম।
“মাসিমা, ফোন করেছিলেন, একটা বিশেষ দরকারে আমাদের সঙ্গে কথা বলতে চান।“
মাসিমা মানে অনিতামাসি, আর ‘আমাদের‘ কথাটা অবশ্যই গৌরবার্থে। একেনবাবুকে কেউ ডাকলেই সেটা আমাদের ডাকা হয়। এ নিয়ে ওঁকে খ্যাপালে উনি বলেন, “কী যে বলেন স্যার, আপনারা ছাড়া, আমি অচল।“
এটা শুনলেই প্রমথ তেলেবেগুনে হয়। “একটু ঝেড়ে কাশুন না মশাই। ভাব দেখাচ্ছেন আমাদের সাহায্য ছাড়া আপনি রহস্যভেদ করতে পারবেন না। আসলে দরকার হচ্ছে শুধু বাপির গাড়ি। ট্যাক্সিতে উঠবেন না পয়সা খর্চা হবে বলে, আর বাসে ওঠেন না ভিড় আর ঝাঁকুনির জন্য।“
“শুনছেন স্যার প্রমথবাবুর কথা “, আমার দিকে করুণ ভাবে তাকিয়ে একেনবাবু সাপোর্ট চান।
“চুপ কর “, আমি প্রমথকে ধমক দিই। “অকারণে তুই ওঁকে খোঁচা দিস ।“
“বেশ করি দিই, তুই আর জ্ঞান দিস না। যা না, বেচে ফেল তোর গাড়ি, দেখি কত ডাক পড়ে তোর ! “
“তোর তো গাড়ি নেই, তোকে কেন ডাকেন একেনবাবু? “
“সেটা ভদ্রতায় বাধে বলে “, প্রমথ অম্লান বদনে বলে।
প্রমথ আমার ছেলেবেলার বন্ধু। এতদিন হয়ে গেল, এখনও সেই বন্ধুত্ব অটুট আছে। নিউ ইয়র্কে তো আমরা একসঙ্গেই প্রায় সাত বছর কাটিয়েছি। সেখানেই এক শুভক্ষণে একেনবাবুর সঙ্গে আমাদের পরিচয়। সেই কথা অনেকবার লিখেছি, আবার সেই পুরনো কাসুন্দি ঘাঁটার অর্থ হয় না।
একেনবাবুকে জিজ্ঞেস করলাম, “কি ব্যাপার, হঠাৎ অনিতামাসি ডেকে পাঠালেন? “
“ঠিক জানি না স্যার, ফোনে কিছু বলতে চাইলেন না, বললেন দরকারটা জরুরি ।“
“ঠিক আছে, আমি আসছি।“
“প্রমথবাবুকেও ফোন করেছি, উনিও যাবেন। আমার এখানেই চলে আসছেন।“
তাতে অবশ্য আমি অবাক হলাম না। প্রমথটা পেটুক, জানে সকালে গেলে ব্রেকফাস্টটা জুটবে। সত্যি, একেনবৌদি রাঁধেন অমৃত। শনিবার সন্ধ্যায় আর রবিবার সকালের আড্ডাটা সেইজন্যেই একেনবাবুর বাড়িতে আমাদের হয়। আমি দুয়েকবার আমার বাড়িতে সবাইকে আসতে বলেছি। প্রমথই খ্যাঁকখেকিয়ে উঠেছে, “তোর ওখানে ভজুর অখাদ্য রান্না আমি খেতে পারবো না।“
আমাদের পুরনো রান্নার লোক ভজু খুব একটা খারাপ রান্না করে না। তবে একেনবৌদির রান্নার সঙ্গে তুলনা নিশ্চয় করা যায় না। কিন্তু প্রমথর সব মতামতই ডিজিট্যাল – হয় ভালো, নয় খারাপ। ভালো খারাপের মধ্যেও যে অনেক রকম রকম-ফের হতে পারে – সেটা ওর চিন্তাধারার মধ্যে পড়ে না।