বিকেলে গিয়ে দেখি একেনবাবু ঘন ঘন পা নাচাচ্ছেন, আর ঝালমুড়ি খাচ্ছেন।
“এই যে স্যার, এসে গেছেন“। বলে, চিৎকার জুড়লেন, “এই কোথায় আছ, আরও দু-প্লেট ঝালমুড়ি লাগবে।“
ভেতর থেকে একেনবৌদির গলা শুনলাম, “ওঁদের জন্য লুচি হচ্ছে।“
একেনবাবু বললেন, “দেখলেন তো স্যার, আপনাদের জন্য লুচি, আর আমার জন্য ঝালমুড়ি।“
“আপনার একটু শাস্তি হওয়াই উচিত ,” প্রমথ বলল। এবার বলুন কি অবস্থা ওদিকের? “
“কোনদিকের? “
“আঃ, এই চুরির ব্যাপারটা ! “
“ও হ্যাঁ, বিমল গেছে একটা জিনিস চেক করতে, সেটা পজিটিভ হলেই মনে হয় কেসটা সলভড।“
“কি চেক করতে? “
আগে লুচি আসুক না, স্যার।
আপনি একটা যাচ্ছেতাই! প্রমথ বলল।
“মনে হচ্ছে, আপনার একটা থিওরি আছে,” আমি বললাম।
“তা আছে স্যার।“
“তা সেটা বলুন না।“
“কিন্তু সেটা তো সত্যি নাও হতে পারে স্যার।“
“আপনি কি মশাই ধর্মপুত্তুর যুধিষ্ঠির যে কোনও অসত্য বলতে পারবেন না? “ প্রমথ খিঁচিয়ে উঠলো।
“তা নয় স্যার। ঠিক আছে, তার আগে একটা ধাঁধা বলি।“
“ধাঁধা! “
“ হ্যাঁ স্যার, শুনুন না। রাজসিং, ভীমসিং আর জয়সিং মরুভূমির মাঝখানে তিনটে তাঁবু ফেলে রাত কাটাচ্ছে। রাজসিং-এর স্যার বহুদিনে ইচ্ছে জয়সিংকে খুন করে। জয়সিং যখন ঘুমোচ্ছে, তখন তাঁর তাবুতে ঢুকে, খাবার জলে বিষ মিশিয়ে তল্পিতল্পা গুটিয়ে সে অদৃশ্য হল। এদিকে ভীমসিংও জয়সিংকে মারার ফন্দি করেছিল। রাজসিং বেরিয়ে যাবার একটু পরে ভীমসিং তাঁবুর মধ্যে ঢুকলো। ভীমসিং ঠিক করেছিল যে, জয়সিং-এর খাবার জল ফেলে দেবে, যাতে তেষ্টায় জয়সিং মারা যায়। জলটা বাইরে ফেলে শূন্য কলসি রেখে ভীমসিং পালালো। কদিন বাদে জলের অভাবে জয়সিং মারা গেল। তাহলে খুনি কে? “
“খুনি ভীমসিং, কারণ রাজসিং মারা গেছে তেষ্টায়, বিষের জন্য নয়।“ আমি উত্তর দিলাম ।
একেনবাবু মাথা চুলকে বললেন, “কিন্তু স্যার, বিষাক্ত জল ফেলে দেওয়াটা কি অন্যায়? ঐ জল খেলেতো সঙ্গে সঙ্গে জয়সিং-এর মৃত্যু হত। অন্যপক্ষে স্যার জল না পেয়েও জয়সিং কয়েকদিন বেঁচে ছিলো। সময়ের মধ্যে কেউ জল নিয়ে এলে, আপনারাই বলতেন ভীমসিং-এর জন্যই জয়সিং বেঁচে গেল।“
“দিস ইস ননসেন্স, রাজসিং-এর মতো ভীমসিংও দোষী – দুজনেই খুন করতে চেয়েছিল। এই স্টুপিড ধাঁধাটা নিশ্চয় খামোকা আমাদের শোনাচ্ছেন না।“ প্রমথ একটু রেগেই বলল।
“না স্যার, তবে গীতার মৃত্যুর সঙ্গে এর একটা সূক্ষ্ম যোগ আছে। এখন আদালত কি বলে সেটাই ইন্টারেস্টিং।“
“তারমানে? “
“তারমানে স্যার গীতাকে কেউ বিষ খাইয়ে মারার চেষ্টা করছিল। দিলীপের জন্য সেই মৃত্যুটা তাড়াতাড়ি হল এইটুকুই। অবশ্য দিলীপ হত্যা না করলে, আরও কিছুদিন হয়তো বেঁচে থাকতো মেয়েটা। তখন যদি ডাক্তারি চিকিৎসায় কেউ কিছু করতে পারতো —- তবে মনে হয় না স্যার। যে কথা বলছিলাম স্যার, আমার মতে দিলীপের মতো আরেকটা লোকও দোষী। ভালোর দিক থেকে দেখতে হলে গীতা অনেক কম কষ্ট পেয়ে মরল।“
“আপনি হেঁয়ালি ছেড়ে একটু ঝেড়ে কাশুন। এই টেনশন আমার বেশিক্ষণ সহ্য হবে না। তখন আপনাকে পস্তাতে হবে।“
“কি হচ্ছে তোমাদের,” বলে একেনবৌদি হাসিমুখে লুচি হাতে প্রবেশ করলেন।
“এই লোকটার সঙ্গে কি করে ঘর করেন বলুন তো বৌদি, একেবারে ডিসগাস্টিং ! “
বৌদি প্রমথর দিকে তাকিয়ে সস্নেহে মিষ্টি হেসে বললেন, “কি করি বলুন ভাই? “
“ডিভোর্স করুন, আবার কি করবেন, আমরা সাক্ষী দেবো।“
“আমাকে জড়াস না,” আমি প্রমথকে বললাম। তারপর একেনবাবুকে উদ্দেশ্য করে বললাম, “প্রমথর কথা ছাড়ুন, আপনি বলুন।“
“বলছি, বলছি, এবার ও এসেছে, সুরু করছি।“
একেনবৌদি বসলেন।
“গীতার মৃত্যু সম্পর্কে বিমল যা বলেছে স্যার, তাতে আমার কোনও সন্দেহ নেই যে, দিলীপই গীতাকে গলা টিপে মেরেছে। সে সত্যিই মারতে চেয়েছিল কিনা, না অ্যাক্সিডেণ্টালি সেটা ঘটেছে – সেটা বলা সম্ভব নয়। যেটা সত্য স্যার, সেটা হল গীতাকে দিলীপ রেপ করেছে এবং দিলীপের হাতেই গীতার মৃত্যু হয়েছে। তবে এটাই পুরো স্টোরি নয় স্যার।“
“মানে সাব-প্লট আছে, “ প্রমথ টিপ্পনী ছাড়ল।
“ঠিক বলেছেন স্যার। সেটাই আমাকে ভাবাচ্ছিল। মাসিমা গীতাকে খুবই পছন্দ করতেন। গীতা বিয়ে করে পাছে অন্য কোথাও চলে যায়, সেইজন্যে নিজেই উদ্যোগী হয়ে গীতার বিয়ে দিতে চাইছিলেন। ইচ্ছে ছিল ড্রাইভার বিশ্বনাথের সঙ্গে গীতার বিয়ে দেন। বিশ্বনাথকে তো দেখেছেন স্যার বেশ ভদ্র চেহারার ছেলে। মাসিমা বুঝতেন যে, বিশ্বনাথ গীতাকে পছন্দ করতো। ফ্র্যাঙ্কলি স্যার, গীতা সত্যিই বেশ সুন্দরী।“
“আপনার আস্পর্ধা তো কম নিয়। গিন্নীর সামনে এসব বলছেন!“
“কি মুশকিল, আমার যা চেহারা, গিন্নী ছাড়া আর কে আমার ভার নেবেন বলুন? “
আমি বিরক্ত হয়ে বললাম, “প্রমথ তুই চুপ করবি, ওঁকে বলতে দে।“
“হ্যাঁ, স্যার, যা বলছিলাম। আপনাদেরও গীতাকে দেখে ভালো লাগতো, বলুন স্যার, লাগতো না? “
সত্যকে অস্বীকার করা যায় না । তাই চুপ করে রইলাম।
“আমার ধারণা স্যার, গীতা যে বিশ্বনাথকে অপছন্দ করতো তা নয়। বস্তির অন্যান্য যেসব পুরুষ ওর প্রতি আকৃষ্ট – তাদের থেকে বিশ্বনাথ অনেক বেশী বরণীয়। কিন্তু ওর স্বপ্ন ছিল বস্তির জীবন থেকে বেরিয়ে আসার। ওর রূপ ছিল স্যার। তাই কাব্য করেই বলছি, ওর আশা ছিল, সেই রূপে মুগ্ধ হয়ে কোনও রাজকুমার হঠাৎ এসে ওকে বরণ করে নেবে। বস্তি থেকে উঠে যাবে রাজপ্রাসাদে। যেটা আমি বলতে চাচ্ছি স্যার, ওর নজর ছিল বাবুদের দিকে। তাঁদের যদি কেউ ওকে বিয়ে করে। তাই বিশ্বনাথের প্রসঙ্গ যখন মাসিমা তুলতেন ও রাজি হত না। এই সময়ে স্যার, ব্রহ্মচারী সত্যানন্দের আবির্ভাব। সত্যানন্দ ব্রহ্মচারী হয়েও সংসারের বাঁধন একেবারে ত্যাগ করতে পারেন নি। মনে হয় তিনি মাসিমার কাছে ঘন ঘন আসতে শুরু করেন, মায়ের ভালোবাসার স্বাদ নিতে। মাসিমার কাছে বেড়াতে এসে তিনি ধীরে ধীরে গীতার প্রতি আকৃষ্ট হয়ে পড়লেন। নিজের সঙ্গে অনেক বোঝাপড়া করার চেষ্টা করলেন সত্যানন্দ, কিন্তু শেষে কামনার কাছে হার মানলেন। সুপুরুষ সত্যানন্দ গীতার বুকেও নিশ্চয় ঝড় তুলত স্যার। আপনাদের খেয়াল হয়েছিল কিনা জানি না, দরজা খুলে সত্যানন্দকে দেখে গীতার মুখে যে ভাবটা দেখেছিলাম, তাতে আমার কোনও সন্দেহ নেই।“
“আমিও দেখেছি,” আমি বললাম।
“কিন্তু সন্ন্যাসীদের কামনা করা মহা পাপ গীতা জানতো। এই পাপবোধের দরুনই গীতা নিজেকে সংযত রাখতে পেরেছিল। কিন্তু এরমধ্যে একদিন গীতাকে নিভৃতে পেয়ে সত্যানন্দ প্রস্তাব দিলেন। যেটুকু জেনেছি, গীতা তাতে সম্মত হয় নি। গীতা যেদিন মারা যায়, সেদিন সন্ধ্যায় সত্যানন্দ মাসিমার কাছে গিয়ে কনফেস করেন যে, দিন দশেক আগে গীতাকে উনি বিয়ে করতে চেয়েছিলেন; গীতা ওকে ফিরিয়ে দেয়। ভালোকথা, আপনাদের মনে আছে স্যার, ঠিক কতদিন আগে মাসিমার বাড়িতে আমরা লাস্ট খেতে গিয়েছিলাম? “
আমি একটু হিসেব করে বললাম, “দশ দিন আগে।“
“ঠিক স্যার। অর্থাৎ গীতার মৃত্যুর আট দিন আগে। সেদিনই মাসিমা বলেছিলেন যে, সত্যানন্দ আগের দিন এসেছিলেন মুখ কালো করে; অথচ তার দিন দুই আগেও হসিখুশী ছিলেন। অর্থাৎ গীতার সঙ্গে ওঁর এইসব কথাবার্তা তার দিন-দুয়েকের মধ্যেই হয়েছে।“
“এটা নিয়ে এতো ঘোঁট পাকাচ্ছেন কেন, সত্যানন্দতো স্বীকারই করেছেন দশদিন আগে গীতাকে প্রোপোজ করেছেন!“ প্রমথ বিরক্ত হয়ে বলল।
“বলছি স্যার, কারণ এটা খুব ইম্পর্টেণ্ট পয়েণ্ট, তাই ডবল চেক করা দরকার। ওঁর হিসেবেও তো ভুল হতে পারে।“
“ইম্পর্টেন্সটা আমার মাথায় ঢুকছে না, কিন্তু বলুন।“
“আপনার মনে আছে স্যার, বিমল বলেছিল যে, গীতার এক মাসি গীতার জন্য একটা সম্বন্ধ এনেছিলেন। গীতা নাকি তখন তাঁকে বলেছিল, ও বস্তির কাউকে বিয়ে করবে না, ওকে একজন বিয়ে করে প্রাসাদে নিয়ে যাবে।“
“হ্যাঁ, মনে আছে,” প্রমথ বলল।
“সেই ঘটনাটা ঘটেছিল গীতা মারা যাওয়ার দু ‘সপ্তাহ আগে। এটা আমি বিমলকে দিয়ে আবার চেক করেছি। অর্থাৎ যখন ওর মাসির সঙ্গে এসব কথা হয়েছিল, তখনও সত্যানন্দ ওকে বিয়ের প্রস্তাব দেন নি, দিয়েছিলেন তার চার দিন বাদে। হতে পারে, গীতা আঁচ করতে পেরেছিল যে, সত্যানন্দ ওকে বিয়ে করতে চান । মেয়েরা স্যার, এগুলো বেশ ইনস্টিংটিভলি বোঝে। কিন্তু তাই যদি হয়, তাহলে গীতা পাপপুণ্যের কথা ভেবে সত্যানন্দকে ফিরিয়ে দিল কেন? সেটাই আমার মাথায় ঢুকছিল না স্যার। তারপর হঠাৎ আমার মনে হল, অন্য কেউ কি গীতাকে এর আগে বিয়ের প্রস্তাব দিয়েছিলেন? “ প্রশ্নটা ছুঁড়ে আমাদের দুজনের দিকে তাকালেন একেনবাবু।
মানুষের কিরকম সাইকোলজি — আমি প্রমথর দিকে তাকাচ্ছি, আর প্রমথ আমার দিকে।
“আরে না না স্যার, আপনাদের কথা হচ্ছে না। আর কে হতে পারে? “
“অশোক?,” প্রমথ বলল।
“কিংবা অজিত রায়,” আমি যোগ করলাম।
“অথবা অন্য কেউ স্যার, ওখানকার সবাইকে তো আমরা চিনি না। কিন্তু আমার বিশ্বাস, তাঁরই ভরসায়, গীতা শুধু মাসিকে ফিরিয়ে দেয় নি, সত্যানন্দকে ফিরিয়ে দিয়েছিল। প্রশ্ন হল, তিনি কে, আর তিনি কি শুধু গীতার সৌন্দর্যে মুগ্ধ হয়েই বিয়ে করতে চেয়েছিলেন, না অন্য কোনও বিশেষ উদ্দেশ্য ছিল? এটা নিয়েই আমি ভাবছিলাম স্যার। তারপর ব্যাপারটা ক্লিয়ার হতে শুরু করল। যখন জানলাম, যে পুতুল দুটো মাসিমার বাড়ি থেকে চুরি হয়েছে, তার দাম প্রায় কোটি টাকার কাছাকাছি। যিনিই পুতুল দুটো চুরি করুন না কেন, তিনি এগুলোর বাজার দর সম্পর্কে খুব ভালো করে জানতেন । তিনি এটাও জানতেন যে, কাজ হাসিল করতে গেলে বাড়ির কোনও লোককে হাত করা দরকার। এগুলোর বাজার দর অজিতবাবুর পক্ষে জানা খুবই সম্ভব। কিন্তু ঐ পর্যন্তই। একে তো উনি বয়স্ক লোক, তারওপর চব্বিশঘণ্টা ইণ্টারনেটে মুখ গুঁজে থেকে আর আট দশটা দোকান সামলে স্ত্রী চরিত্র বোঝার কতো সময় পেয়েছেন সেটা প্রশ্ন। আর গীতাই বা ওঁকে পছন্দ করবে কেন? যেটা আমরা জানি স্যার, মেয়েদের সঙ্গে মেলা মেশার ব্যাপারে অশোকবাবু হচ্ছেন মাস্টার। আমি মোটামুটি শিওর স্যার, সত্যানন্দকে গীতা ফিরিয়েছিলেন পাপপুণ্য বোধের জন্য নয়, কারণ অশোকবাবু গীতাকে বিয়ে করবেন বলে ইতিমধ্যেই কথা দিয়েছিলেন।“
“দাঁড়ান, দাঁড়ান, হিসেবে মিলছে না, ” প্রমথ বলল। টেবিল থেকে একটা কাগজ তুলে লিখতে শুরু করল, “গীতা মারা গেছে শুক্রবার, মানে ৮ই- অগাস্ট। অশোক এখান থেকে কবে গেছে? “
আমি আমি একটু ভেবে বললাম, “মঙ্গলবার, ৫ তারিখে।“
“বেশ। ও এখানে এবার অল্প কয়েক দিন ছিল। ধরে নিচ্ছি পাঁচ থেকে সাত দিন। তারমানে, আসামাত্রই ও যদি গীতাকে প্রোপোজ করে থাকে, তাহলেও তো সেটা গীতা মারা যাবার আট দশ দিনের আগে হচ্ছে না।“
“তা হচ্ছে না স্যার, কিন্তু এবার এসে নয়, গীতাকে উনি কথা দিয়ে গিয়েছিলেন আগেরবার -এবারের দু-সপ্তাহ আগে যখন এসেছিলেন। অশোকবাবু নারীচরিত্র বোঝেন স্যার। এই রকম অন্যায় কাজ গীতা একমাত্র তার ভাবি স্বামীর জন্যেই করবে – এটা তিনি বুঝতে পেরেছিলেন। তাই আগেরবার এসে গীতাকে বিয়ে করবেন কথা দিয়েছিলেন এবং অনেক বুঝিয়ে সুঝিয়ে রাজি করিয়েছিলেন পুতুলগুলো সরাতে।“
“মাই গড্, কিন্তু পুতুলগুলো গীতা সরালো কবে? “ আমি জিজ্ঞেস করলাম।
“রবিবার গীতা যখন আলমারি ঝাড়পোঁছ করছিল তখনও আমি দেখেছি স্যার, পুতুলগুলো ছিল। আমার ধারণা সরিয়েছিল মঙ্গলবার সকালে যেদিন অশোকবাবু আমেরিকা যান। আমার বিশ্বাস, এইবারে সেইজন্যেই উনি খুব অল্প কয়েকদিনের জন্য এসেছিলেন। অশোকবাবুর প্ল্যান ছিল ব্রিলিয়াণ্ট। গীতা পুতুলগুলো সরিয়ে ওঁকে দেওয়া মাত্র জানাজানি হবার আগে উনি সেগুলো নিয়ে অদৃশ্য হবেন। আর যখন ফিরে আসবেন তখন গীতা বিয়ে করার জন্য বেঁচে থাকবে না। সাপও মরবে, লাঠিও ভাঙবে না।“
“হোয়াট!“ প্রমথ চেঁচিয়ে উঠলো, “আপনি কী বলতে চান – অশোক ঐ খুনি লোকটাকে ভাড়া করেছিল? “
“না স্যার, সেটা হলে ধরা পড়ার সম্ভাবনা থাকতো। ব্যবহার করেছিলেন থ্যালিয়াম।“
“থ্যালিয়াম? “আমি অবাক হয়ে প্রশ্ন করলাম।
“হ্যাঁ স্যার, আমার সন্দেহ হচ্ছিল, তাই শ্বাসরোধে মৃত্যু হয়েছে জানা সত্যেও বিমলকে ফরেন্সিক অটোপ্সি করতে বলেছিলাম। সন্দেহটা ভুল নয় স্যার, গীতার পেটে থ্যালিয়াম পাওয়া গেছে, সেটা কোত্থেকে এসেছে, সেটা খোঁজার চেষ্টা হচ্ছে।“
“থ্যালিয়াম তো মারাত্মক বিষ! “ প্রমথ বলল।
হ্যাঁ স্যার,” একেনবাবু বলে চললেন, “অশোকবাবু জানতেন গীতা মিষ্টি ভালোবাসে। মাসিমার বাড়িতে সেটা থাকে না। উনি অজস্র মিষ্টি কিনে রেফ্রিজারেটর ভরে রাখলেন। যাতে উনি আমেরিকায় চলে গেলে, ঘর পরিষ্কার করার সময় গীতা সেগুলো খেতে পারে। গীতা ভাবল ভাবী স্বামী আদর করে ওর জন্য এতরকম মিষ্টি কিনে রেখে যাচ্ছে। জানতো না স্যার, যে ওগুলোতে মেশানো আছে মারাত্মক থ্যালিয়াম বিষ। এই বিষ ধীরে ধীরে শরীরে প্রবেশ করবে, আর কিছুদিনের মধ্যেই স্টমাক ফ্লু-র উপসর্গ দেখা দেবে, চুল পড়তে শুরু করবে, শেষে দুরারোগ্য নিমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হবে। এবার ভেবে এ দেখুন স্যার, অশোকবাবু বসে আছেন আমেরিকাতে। দিন দশ বারো বাদ গীতার মৃত্যু হল কোনও একটা বাজে ফ্লু-তে, কেন লোকে ভাববে এই মৃত্যুর সঙ্গে অশোকবাবু জড়িত? আর পুতুল তো সবসময়েই চুরি হতে পারে। তবে এক্ষেত্রে স্যার, পুতুলগুলো ছিল অসম্ভব দামী। আমি তো জানতামই না যে কোনও পুতুল এতো দামি হতে পারে। সেদিন বাড়ি ফিরে ইণ্টারনেটে গুগ্ল করে জানলাম এই ধরণের জিনিসের খোঁজ খবর এদেশে খুব অল্প লোকেই রাখেন স্যার।“
প্রমথ বলল, “আপনার এই থিওরিটা সত্যি কিনা জানতে পারবেন কবে?“
“হয়তো কালকেই। মাসিমার কাছ থেকে অশোক বাবুর এপার্টমেণ্টের চাবি নিয়ে বিমল রেফ্রিফজারেটরে রাখা বেশ কিছু মিষ্টি পাঠিয়েছে পুলিশ ল্যাব-এ টেস্ট করতে।“
পরের দিন একেনবাবুর কাছে খবর পেলাম টেস্টের ফল পজিটিভ। অশোকের নামে ওয়ারেণ্ট বেরিয়েছে। ইণ্টারপোলের সাহায্য নিয়ে ওকে খোঁজা হচ্ছে। এ প্রসঙ্গে শুধু আর একটা কথা। খুনের আগে খুন নাম দিয়ে একেনবাবুর এই কাহিনীটা লিখছি শুনে প্রমথ বলল, নামটার কোনও অর্থই হয় না। কথাটা ভুল নয়, তবে কিনা সব খুনই অর্থহীন।
গল্পের প্রথম অংশ পড়তে এখানে ক্লিক করুন
"আলোর পথ"-এ প্রকাশিত গল্পসমূহ ও লেখনী মূলত পাঠক, শুভানুধ্যায়ী এবং সম্মানিত অবদানকারীদের কাছ থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে। এই কনটেন্টগুলোর উপর আমরা কোনো মেধাসত্ত্ব (copyright) দাবি করি না। যদি কোনো গল্প, ছবি বা তথ্যের কপিরাইট সংক্রান্ত বিষয়ে আপনার প্রশ্ন, সংশয় বা আপত্তি থাকে, তাহলে অনুগ্রহ করে আমাদের যোগাযোগ পৃষ্ঠায় যোগাযোগ করুন। আমরা যথাযথ আইনানুগ পদ্ধতিতে বিষয়টি পর্যালোচনা করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করব।