খুনের আগে খুন– তৃতীয় অংশ

অশোকের এপার্টমেন্টটা ইস্টার্ন বাইপাসে সন্তোষপুরের কাছে। অনেকগুলো বড় বড় টাওয়ার নিয়ে একটা গেটেড কম্যুনিটি।
গেটের মুখেই অশোক অপেক্ষা করছিল আমাদের জন্যে। সোজা নিয়ে গেল ওদের কম্যুনিটি ক্লাব-এ। টেনিস কোর্ট, সুইমিং পুল, জিম, ব্যাঙ্কোয়েট হল – সবকিছু আছে। এমনি কি একটা রেস্টুরেন্টও। সেখানেই খাওয়াল আমাদের। ক্ষমাও চেয়ে নিলো নিজের বাড়িতে খাওয়াতে পারছে না বলে। বাড়িতে শুধু চা আর কফি বানানো ছাড়া রান্নাবান্নার কোনও পাট নেই।
একেনবাবু একেবারে মুগ্ধ, “সত্যি স্যার, আপনি কি করে লিভ করতে হয় জানেন। আমেরিকায় আছেন না কলকাতায় আছেন এখানে থেকে বোঝার উপায় নেই।“
“আপনারাও চলে আসুন না এখানে। বেশ জমিয়ে আড্ডা দেওয়া যাবে।“
একেনবাবু বললেন, “লোভ হচ্ছে, স্যার । কিরকম দাম এখানে এপার্টমেন্টের ? “
“খোঁজ নিয়ে বলতে পারি। আমাদের টাওয়ারেই একটা এপার্টমেন্ট বিক্রি হচ্ছে। আপনি ইন্টারেস্টেড? “
“কি যে বলেন স্যার, তবে দামটা জেনে রাখলে মন্দ হয় না।“
অশোক একটু অবাক হয়ে একেনবাবুর দিতে তাকাতে প্রমথ বিশদ কর, “তুমি হয়তো ভুলে গেছো, ওঁর জ্ঞান তৃষা একটু প্রবলা। দাম জানতে চাইছেন সিম্পলি তথ্য সংগ্রহের জন্য, কেনার জন্য নয়।“

খাওয়া দাওয়ার পর অশোকের এপার্টমেন্টে গেলাম। তিন বেডরুমের চমৎকার একটা এপার্টমেন্ট। বসার ঘরের পাশেই খাবার জায়গা। তার সঙ্গে লাগোয়া একটা বারান্দা। বারান্দায় দাঁড়ালে টাওয়ারগুলোর মাঝখানে যে বিশাল সবুজ মাঠটা আছে, সেটা দেখা যায়। চারিদিকে বেশ আলো-হাওয়া। মাঠে বাচ্চারা খেলাধুলা করছে।
ঘরে না বসে বারান্দাতেই চারটে চেয়ার নিয়ে আমরা বসলাম। অশোকের কাছে জানলাম, এপার্টমেন্টটা কিনেছিলেন ওর কাকা। কাকা মারা গেছেন বছর তিনেক হল। তিনি বিয়েটিয়ে করেন নি, তাই একমাত্র ভাইপো অশোকই সম্পত্তিটা ভোগ করছে।
“প্রথমে দুর্ভোগই হচ্ছিল “, অশোক বলল। “বছরের মধ্যে বার কয়েক আসি, মেরেকেটে দিন পনেরো করে থাকি। বাদবাকি সময়ে তালা বন্ধ হয়ে পড়ে থাকতো। প্রত্যেকবার এসে ঘরদোর পরিষ্কার করে বসতে না বসতেই যাবার সময়ে হয়ে যেত। দুবছর খুব ভুগেছি। তারপর হঠাৎ অনিতামাসির সঙ্গে দেখা। “
“অনিতামাসি ! আমাদের নিউ ইয়র্কের অনিতামাসি? “
“হ্যাঁ। উনিও এখানে একটা এপার্টেমেণ্ট কিনে আছেন। আমি অবশ্য আগে জানাতাম না। একদিন সকালে হাঁটতে বেরিয়ে হঠাৎ দেখা। শি হেল্পড মি এ লট। ওঁর একটি কাজের মেয়ে আছে। সেই এখন সারা বছর এই এপার্টেমেণ্টটা পরিষ্কার রাখে। আমি যখন থাকি, তখন মাঝেমধ্যে আমার জন্য চা-কফি করে দেয়। তাছাড়া এই রেস্টুরেণ্ট আছে, অনিতামাসির বাড়ি আছে – খাওয়া-দাওয়ার কোনও প্রব্লেম নেই – জাস্ট গ্রেট।“
“তুমি অতি ভাগ্যবান পুরুষ। নিউ ইয়র্কে বৌদিরা আছেন, এখানে অনিতামাসি,“ প্রমথ ফস করে বলে ফেলল।
অশোক হাসল, “তা মন্দ বল নি। বাই দ্য ওয়ে, বিকাশদাও একটা এপার্টেমেণ্ট কিনেছেন এখানে। প্রতিবছরই একবার করে আসেন। তখন বেশ জমিয়ে আড্ডা হয়।“
“অনিতামাসির সঙ্গে অনেকদিন দেখা হয় নি“, প্রমথ বলল।
“দেখা করবে নাকি? “
প্রমথ বলল, “হোয়াই নট, উনিতো আমার দূরসম্পর্কের মাসিও হন।“
“আমি জানি “, অশোক বলল, “তোমার কথা বলেন মাঝে মাঝে। কিন্তু আমি জানতাম না তোমরা কোথায় থাকো। চলো, তাহলে এখনি ঘুরে আসি।“
আমি একটু অসোয়াস্তি বোধ করছিলাম, আমার সঙ্গে অমিতামাসির পরিচয় খুব অল্পই – একদিন শুধু ওঁর বাড়িতে গিয়েছিলাম নিউ ইয়র্কে। হঠৎ এইভাবে হুট করে গিয়ে হাজির হওয়াটা কি ঠিক হবে ! একেনবাবুও মনে হল একটু বিব্রত। পুরুষ মানুষদের সঙ্গে উনি অফুরন্ত বকতে পারেন। মহিলা দেখলে গুটিয়ে যান; বিশেষ করে তাঁকে যদি আগে না চেনেন।
“আপনারা স্যার যান, আমি বরং এখানেই থাকি।“
“আমিও “, আমি বললাম।
“তাহলে তোরা থাক, আমি আর অশোক যাচ্ছি। বলবো, তোদের লজ্জা করছে বলে আসতে পারলি না।“
“কী যে বলেন স্যার, উনি হয়তো বিশ্রাম করছেন, হঠাৎ এতজন —।“
“আপনার যে এত কনসিডারেশন্স আছে সেটাতো জানতাম না ! উঠুন, আমার মাসির সঙ্গে পরিচয় হলে আপনার জাত যাবে না। বাপি তুইও ওঠ “, প্রমথ ধমক দিয়ে আমাদের দুজনকে তুলল।

গল্পের চতুর্থ অংশ পড়তে এখানে ক্লিক করুন

"আলোর পথ"-এ প্রকাশিত গল্পসমূহ ও লেখনী মূলত পাঠক, শুভানুধ্যায়ী এবং সম্মানিত অবদানকারীদের কাছ থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে। এই কনটেন্টগুলোর উপর আমরা কোনো মেধাসত্ত্ব (copyright) দাবি করি না। যদি কোনো গল্প, ছবি বা তথ্যের কপিরাইট সংক্রান্ত বিষয়ে আপনার প্রশ্ন, সংশয় বা আপত্তি থাকে, তাহলে অনুগ্রহ করে আমাদের যোগাযোগ পৃষ্ঠায় যোগাযোগ করুন। আমরা যথাযথ আইনানুগ পদ্ধতিতে বিষয়টি পর্যালোচনা করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করব।

দুঃখিত!