খরগোশ ও ব্যবসায়ী

এক সময় একটি খরগোশ প্রতিবেশী পাখিদের তার বাড়িতে নিমন্ত্রণ করেছিল । তাদের মধ্যে ছিল সঙ্গীত-প্রিয় সোনা বৌ আর মগজহীন কাক। তারা মনের সুখে নেচে, গেয়ে, পান ও আহার করে চলল । হঠাৎ খরগোশের মাথায় এক বুদ্ধি এল। সে বলল, ‘আজ আমাদের জন্য এক আনন্দঘন মুহুর্ত। কিন্তু এখনো আমরা চরম মুহুর্তে আসি নি। চলো, আমরা একটা মজা করি।” সকলে এক সঙ্গে এক বাক্যে বলে উঠল, ‘খুব ভালো, খুব ভালো।’ গায়ের লোমের তৈরি যে তাবু খাটানো আছে তার সামনে দু’জন ব্যবসায়ী বসে রয়েছে দেখতে পাবে। একজন মোটা, অন্যজন রোগা । তারা ভীষণ নিষ্ঠুর । টাকা-পয়সার প্রতি ভারি লোভ। তাই প্রতি বছর টাকা কামাই করতে আমাদের এই তৃণভূমিতে আসে। দেখো, এখন তারা খুব মনোযোগ দিয়ে সুয়ানফান নিয়ে টাকা-পয়সার হিসেব করছে।

সুয়ানফান হল টাকা-পয়সা হিসেব করার জন্য বাঁশ ও কাঠের তৈরি যন্ত্র । ওরা হিসেব করে দেখছে আরও কত টাকা কামানো যায়, আর কীভাবে কত লোককে ঠকানো যায়। ভাই কাক, তুমি কি সাহস করে গিয়ে মোটা ব্যবসায়ীর মাথার ওপর বসতে পারবে? ওকে একটু শায়েস্ত করা দরকার।” কাজটি খুব সহজ ভেবে কাক বলল, “সে আর এমন কি কঠিন কাজ! খরগোশ আরও বলল, ‘তুমি যদি তা করতে পার তাহলে খুব মজা হবে। কিন্তু মনে রাখবে, যখন তুমি মোটা ব্যবসায়ীর মাথায় প্রথম বসবে সে খুব বিরক্ত হবে। আর বলবে, উঃ কী দুর্ভাগ্য! একটা কাক এসে কিনা বসল আমার মাথার ওপর। ওকে ভাগাও, ভাগাও । যখন রোগা ব্যবসায়ী তোমার কাছে আসবে তখন তুমি একটুও সময় নষ্ট না করে উড়ে যাবে।

কিন্তু একটু পরেই দ্বিতীয়বার বসবে। রোগা ব্যবসায়ী তখন সুয়ানফান দিয়ে তোমাকে মারতে চেষ্টা করবে। কারণ ওর হাতের কাছে ওটাই কেবল থাকবে। অন্যকিছু নেওয়ার সময় পাবে না। ঠিক তখুনি তুমি আবার উড়ে যাবে। তখন সত্যিই মজার ঘটনাটি আমরা দেখতে পাব ।’ তারা সবাই তখন খাবার ফেলে মজা দেখার জন্য বাইরে গেল । কাক উড়ে গিয়ে মোটা ব্যবসায়ীর টেকো মাথার ওপর গিয়ে বসল। মোটা ব্যবসায়ী ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে চিৎকার করে উঠল, উঃ, কী দুর্ভাগ্য! একটা কাক এসে কিনা বসল আমার মাথার ওপর। খাজাঞ্চি, শিগগির কাকটাকে ভাগিয়ে দাও।” রোগা ব্যবসায়ী ছিল তার খাজাঞ্চি । সে হিসেবের খাতা তুলে কাককে তাড়িয়ে দিল । কাক উড়াল দিয়ে কা কা করতে করতে মোটা ব্যবসায়ীর টেকো মাথার ওপর ঘুরতে লাগল। মোটা ব্যবসায়ী ভুরু কুঁচকে উঠে গিয়ে খাজাঞ্চির পাশে বসে হিসেবের কাজে মনোযোগ দিল ।

একটু পরে কাক উড়ে এসে আবার তার টেকো মাথার ওপর দ্বিতীয়বারের মতো বসল। মোটা ব্যবসায়ী চিৎকার করে বলে উঠল, উঃ, কী দুর্ভাগ্য আমার । আবার আমার মাথার ওপর কাক এসে বসল ,’ সে তার খাজাঞ্চিকে বলল, তুমি কি চোখে দেখতে পাও না? কাকটিকে মারছ না কেন? ওকে মারো।’ মোটা ব্যবসায়ীর রাগ দেখে খাজাঞ্চি একটুও সময় নষ্ট না করে হাতের কাছের সুয়ানফানটি দিয়ে কাককে মারল এক বাড়ি। কিন্তু চট করে কাক গেল উড়ে আর সুয়ানফানের আঘাত পড়ল টেকোর মাথায় । তার মাথা ফেটে গিয়ে দরদর করে রক্ত পড়তে লাগল।

এরি মধ্যে অন্য পাখিরা এসে জুটেছে তামাসা দেখার জন্য। তারা হাসতে হাসতে গাছ থেকে পড়ে যায় আর কি! আর খরগোশ আনন্দে ঘাসের ওপর গড়াগড়ি ডিগবাজি খেতে লাগল। কাক ফিরে এলে সবাই মিলে খরগোশের বাড়িতে গিয়ে আবার নাচ-গান শুরু করল । খাওয়া-দাওয়া চলল আবার , লোভী ব্যবসায়ী দু’জন আর হিসেব শেষ করতে পারল না। লোকজনকে ঠকানোর চিন্তা মাথায় উঠল। মোটা ব্যবসায়ীর মাথার ঘা শুকোতে সময় লাগল এক মাস। ততদিনে চাষীদের গম তোলার কাজ শেষ। তাদের আর পানির দামে গম বিক্রি করতে হল না।

আরো পড়তে পারেন...

রহস্য গল্প – মুহম্মদ জাফর ইকবাল

গহর মামা আমাদের খুব দুর সম্পর্কের মামা; কিন্তু আপন মামাদের থেকে তাঁর সঙ্গে আমাদের বেশি…

রসিক বাস্তবতা

প্রচন্ড নিম্ন চাপে ধরেছে লোকটির! আশে পাশে কোন পাবলিক শৌচাগার নাই যে কর্মটি আরামের সাথে…

ছোট্ট তানিশা

ছোট্ট তানিশা, আজ খুব খুশি । আজ সে তার বাবা মায়ের সঙ্গে শপিং করতে যাবে,…