কয়েকজন আবেদার কথা

হযরত আহম্মদ ইবনে আবিল হাওয়ারী বলেন, আমার স্ত্রী রাবেয়া সামিয়ার বিভিন্ন অবস্থা সৃষ্টি হত। যখন তাঁর মধ্যে রব্বুল আলামীনের মোহাব্বত বিরাজ করত তখন সে  কয়েকটি বয়াত পাঠ করত। যার অর্থ হল-

তিনি এমন প্রিয় যার কোন তুলনা নেই। আমার অন্তর শুধু তাকেই ভালবাসে। তিনি আমার দৃষ্টি হতে অদৃশ্য কিন্তু আমার অন্তরে সদা বিরাজমান!

হযরত আহম্মদ বলেন, একদিন আমি তাকে বললাম, আমার মত সারা রাত কথা বলো না। যখন আমাকে রাতের বিনিদ্র ইবাদতের জন্য আহবান করা হয় তখনই আমি গাত্রোত্থান করি। বর্ণনাকারী বলেন, একদিন আমি তাকে বললাম, তোমার মত সারা রাত তাহাজ্জুদ পড়তে আমি আর কাউকে দেখিনি। সে জবাব দিল, স্বামী! এমন কথা বল না। যখন আমাকে রাতে বিনিদ্র ইবাদতের জন্য আহ্বান করা হয় তখনই আমি গাত্রোত্থান করি। বর্ণনাকারী বলেন, একদিন আমি খানা খেতে বসেছি।

আমার স্ত্রী নামায পড়ছিল। সে সালাম ফিরিয়ে আমাকে নসীহত  করতে লাগল। আমি বললাম, আমাকে একটু নিরিবীলি আহার করতে দাও। সে বলল, প্রিয়! তুমি আমি   এখনো এমন দরজা হাসিল করিনি যে, আখেরাতের আলোচনায় আহারের প্রতি আমাদের বিতৃষ্ণা সৃষ্টি হয়ে যাবে। অতঃপর সে বলল, আমি তোমাকে স্বামীর মত ভালবাসি না, বরং তোমার প্রতি আমার ভালবাসা ভ্রাতৃসূলভ। যে কোন কিছু রান্না করলে আমাকে আহারের জন্য আহ্বান করে বলত, প্রিয় এটা তাসবীহ পাঠ করতে করতে রান্না করা হয়েছে, তুমি খাও।

একবার সে আমাকে বলল, আমার দ্বারা তোমার কোন সেবা হচ্ছে না। তুমি অন্যত্র বিয়ে কর। তাঁর অনুমতি পাওয়ার পর আমি আরো তিনটি বিয়ে করলাম। অথচ সে আমাকে গোশত রান্না করে খাওয়ায়ে বলত, স্ত্রীদের হক আদায় কর। হযরত আহমদ (রহঃ) বলেন, আমার সে স্ত্রী অনেক সময় বলত, আমি জান্নাতের হুর ও জ্বিন সম্প্রদায়কে দেখতে পাই। কথিত আছে সে এক বুজুর্গ মহিলা বার্ধক্যজনিত কারণে নামায রোজা ইত্যাদি এবাদত  বন্দেগীতে অপরাগ হয়ে পড়লেন। এ সময় তিনি এক ব্যক্তিকে কয়েকটি শের পাঠ করতে শুনলেন।

সে গুলোর   অর্থ হল- ” তোমার হৃদয়ে যদি আখেরাতের জন্য কোন  দুশ্চিন্তা থাকে তবে চোখে পানি বর্ষন কর। নিছক হা-হুতাশ করলে জান্নাত পাওয়া যাবে না। তোমার সাধ্য অনুযায়ী ইবাদত বন্দেগীতে কোষেশ করতে থাক। হাত পা গুটিয়ে বসে থেকো না। এটিই আল্লাহ ওয়ালাদের তরীকা। এ বাক্যগুলো শোনার পর বৃদ্ধা কমজোর দেহে প্রাণের পূনরায় শক্তির সঞ্চার হল। আবার সে আগের মত  নামায রোজা শুরু করল। অতঃপর পরবর্তী জীবনে আর কখনো সে নামায রোজায় শৈথিল্য প্রদর্শন করেননি। শেষ জীবনে সে মাঝে মাঝে একটি বয়াত পাঠ করে রান্না করত। বয়াতটি হল-

” মুর্খ লোকেরা আখেরাতের ভয় হতে যে পরিমাণ উদাস হবে? আখেরাতে তাকে ঠিক সে পরিণামই ভীত হতে  হবে,” একদা হযরত ফোজায়েল ইবনে আয়াজ (রহঃ) ঐ মহিলার নিকট এসে দোয়া চাইলে তিনি বললেন, হে ফোজায়েল! আল্লাহর সাথে আপনার এতটুকু সম্পর্ক নেই যে, আপনি দোয়া করলে তা কবুল হবে? একথা শুনা মাত্র হযরত ফোজায়েল (রহঃ) চিৎকার দিয়ে মাটিতে লুটিয়ে  পড়লেন। এক বুজুর্গ বর্ণনা করেন, গভির রাতে আমার স্ত্রী আমাকে ডেকে বলত রাতের অবশান হয়ে যাচ্ছে। দীর্ঘ পথ অতিক্রম করতে হবে। অথচ পথের সমান কিছুই সংগ্রহ করা হয়নি। নেককারদের কাফেলা অনেক দূর। এগিয়ে গেছে, শুধু আমরা পেছনে পড়ে আছি।

এক বুজুর্গ বর্ণনা করেন, আমি এক মহিলাকে বিয়ে করলাম। সে এশার নামাযের পর ভাল কাপড় পরে  ও সুগন্ধি মেখে আমার নিকট এসে মুখে হাসি ফুটাতে বলত, আমাকে কাছে চাও কি? আমি যদি হ্যাঁ বলতাম, তবে সে আমার সাথে থাকত। আর না বললে সাথে সাথে সাজ গোজ ত্যাগ করে ফরজ পর্যন্ত নামাযে দাঁড়িয়ে থাকত।

কথিত আছে যে, জওহোরাহ নামে এক বাদশার এক বাঁদী ছিল। বাদশাহ তাকে আজাদ করে দিলে সে হযরত আবু আব্দুল্লাহ তোরাবীর (রহঃ) ইবাদত খানায় গিয়ে তাঁর সাথে বিয়ের বন্ধনে আবদ্ধ হল। অতঃপর সেও স্বামীর সাথে  ইবাদতে মশগুল হয়ে গেল। এক রাতে সে স্বপ্নে দেখল, জান্নাতে সুন্দর সুন্দর অনেক প্রাসাদ নির্মান করা হয়েছে। সে জিজ্ঞেস করে জানতে পারল, যারা তাহাজ্জুদের নামায পড়ে, তাদের জন্যই প্রাসাদ নির্মান করা হয়েছে। এ স্বপ্ন দেখার পর হতে সে রাতে নিদ্রা ত্যাগ করে নিয়মিত তাহাজ্জুদে অভ্যস্ত হয়ে গেল। গভীর রাতে সে তাঁর  স্বামীকে ডেকে বলত, হে আবু আব্দুল্লাহ; আর কতকাল ঘুমিয়ে থাকবে? কাফেলা অনেক দূর চলে গেছে। অতঃপর সে একটি বয়াত পাঠ করল যার অর্থ হল-

“মঞ্জিলে পৌছাতে আরো অনেক পথ অতিক্রম করতে  হবে। যারা রাত জেগে ইবাদত করে তাদের জন্য আরামদায়ক তাবু প্রস্তুত করা হয়েছে। লোকেরা রাতের নিদ্রা হারাম করে ইবাদত করছে আর আমি গাফেল অবস্থায় ঘুমাচ্ছি। এটা আমার দুর্ভাগ্যের দলীল। 

You may also like...

দুঃখিত, কপি করবেন না।