ক্ষুধার মন্দির–৩য় পর্ব

গল্পের শেষ অংশ পড়তে এখানে ক্লিক করুন।

যে এতিমখানায় সালাম থাকে সেখানে খাবার দেয় নাম মাত্র। তারা বেশির ভাগ এতিমই কুড়িয়ে বাছিয়ে কাম কাজ করে চেয়ে চিন্তে কখনোবা চুরি চামারি করে খুঁটে খায়। ছোট বলে কেউ সালামকে কাজ  দেয় না। আর এতিমখানার দেওয়া সবুজ পুরানো পাঞ্জাবী টুপি দেখলে সবাই দূর দূর করে  বকে  দেয়, সরকারের খাস আর ভিক্ষে করিস। দাঁড়া সুপারকে বলে দেব। এরা জানে না সুপার ওদের কি নির্মম মার দেয়। সমস্ত কাপড় খুলে ন্যাংটো করে বেতের বাড়ি মারতে মারতে বেহুঁশ করে ফেলে রাখে দুদিন।

অতি দুরন্ত বেয়াড়া যারা তাদের  পুরুষাঙ্গে লেঠিপেটা করে। কতজনের মলদ্বারে লাঠি ঢুকিয়ে ছোট হুজুর উল্লাস করে আর বড় হুজুর উদাস দৃষ্টিতে একমনে তসবিহ গুনে চলে।

মরন চিৎকার করে তখন কত যে আল্লাহ রসুলকে ডাকে ওরা।

কেউ আসে না।

দুই কাঁধে বসা দুই ফেরেশতা মুনকির নাকিরও একবারের জন্যেও ছোট হুজুরকে বলে না, ওরে শয়তান দাঁড়া তোর কুকর্মের কথা আল্লাহকে বলে দিচ্ছি খবিস কোহানকার!

বরং বড় হুজুর  চোখের ইশারায় মুখের ভেতর গামছা গুঁজে দিতে বলে ছোট হুজুরকে। অথচ কোরান  হাদিসে নাকি আছে এতিমের হক সবার আগে।

তাই অনেকেই পালিয়ে যায়। মজুর   খাটে। ভিক্ষে করে। কেউ  কেউ গ্রামে  চলে যায়। খেতে খামারে আত্মীয় পরিজনের লাথি ঝ্যাঁটা খেয়ে পরগাছার মত বাঁচার চেষ্টা করে। গরীবের ঈশ্বরও যে বড় গরীব হয়। তার দেওয়ার হাত রামুর বাবার মতই ফুটো, নাই নাইয়ে ভরা।

সালাম ঠিক করেছে সেও পালাবে। কিন্তু কোথায় যাবে জানে না।

তার কেউ নেই।

বাপ মায়ের নাম কি তাও জানে না। কেবল শুনেছে কোন এক  গ্রামের মামারা তাকে  এতিমখানার দরোজায় ফেলে দিয়ে চলে গেছে। বাগেরহাট  নাকি গোপালগঞ্জে  তার বাড়ি কেউ বলতে পারে না।

শুধু বড় সুপার তাকে মাঝে মাঝে ডাকে, “অই নুরুর ব্যাটা যাতো সুপারি পাড়ি আন। কাঁচা সুপারি খাতি বে হক  সাধ হতিছে দিলে।” সে নুরুর ব্যাটা । কোন গাঁও জানে না। মা কে তাও জানে না। ভাই বেরাদার বোন আছে কিনা তাও অজানা ।

শুধু এতিমখানার পাশে কামার পাড়ার রমেশকে চেনে সে । ক্ষুধা তাদের এক করেছে। একটি বিস্কুট যদি কুড়িয়ে পায় সে  আর রমেশ ভাগ করে খায়। একদিন ক্ষুধার জ্বালায় কাঁদতে দেখে রমেশ তাকে শুকনো রুটি আর গুড় খেতে দিয়েছিল। এরপর থেকে খাবার পেলেই রমেশ তাকে  ভাগ করে খেতে দেয়। রমেশের মাকে তার মা ডাকতে ইচ্ছা করে ।

কিন্তু রমেশ বলেছে, মা ডাকলি তোর হুজুর তোর পিঠির খালচামড়া তুলি দিবেনে। তুই  খালাই  ডাক ভাই। বড় হলি আমরা পালায়ে যাবানি।

তহন মা বাপ বুনকে সাথি নিয়ি  গড়াই  নদীর তীরি লালনের দ্যাশে ঘর বাইন্ধে সবাই মিলি একসাথি থাকপানি। তুই আমি রামুসামু দুই ভাই। তহন মন খুলি মারে মা ডাকিস তুই ।”   সালামের চোখে  গরম জলের  ফোয়ারা নামে।

রাসিদাসির একপাশে কার্তিক না হয় গনশা হয়ে সে সারা জীবন থাকতে চায়।

 

গল্পের শেষ অংশ পড়তে এখানে ক্লিক করুন।

দুঃখিত!