ক্ষুধার মন্দির–২য় পর্ব

গল্পের ৩য় অংশ পড়তে এখানে ক্লিক করুন

মাটি ঘরে থাকি মা। আমরাও যে ভাগ করে দিয়ে থুয়ে খেতে জানি। তুমিও তো মাটি দিয়েই গড়া গো মেয়ে! তবে কেন এত নোলা  তোমার?  সালাম রামুর হাত ধরে টেনে তোলে। স্বপ্ন স্বপ্ন চোখে রামু বলে কই যাবি  সামু? একটু পরেই আরতি নেত্য হবে যে! রামুকে টানতে টানতে সাহা পাড়ার রাস্তায় এনে ফিসফিস করে কি যেন বলে সামু। রামুর চোখ থেকে স্বপ্ন পালায়। দুজনেই জোর ছুটে কেশব কুড়ির বাসার উঠোনে এসে পড়ে ।

চাটাই পেতে লাইন করে খাচ্ছে সবাই। এখানেও সেই প্যান্টুলন পরা কোমরে নতুন গামছা বাঁধা দাদারা সবাইকে খাবার দিচ্ছে। ধুতি পরা কাকা জেঠারা মাঝে মাঝে হাঁক পাড়ছে , ওরে ও বাবলু সব দেখে শুনে রাখিস কিন্তু। সামু দেখে কোমরে গামছা বেঁধে নতুন শিখা ক্লাবের মুসলিম দুটি ছেলেও আছে  হিন্দু দাদাদের সাথ।

অন্য সময় এরা চে গুরুর টুপি পরে ঘুরে বেড়ায় পাঞ্জাবী পরা এতিমখানার ছেলেদের দেখলেই চেঁচিয়ে বলে, অই যে অই জঙ্গি আইছে, ধর ধর ।

একটানে পাঞ্জাবী খুলে কোমরে বেঁধে ফেলে সামু। তারপর যে লাইনে হাড় হাভাতে গরিব মিসকিনরা হাত পেতে চাটাই ছাড়া বসে  আছে তাদের সাথে গিয়ে মাটিতে বসে পড়ে। রামুকে টেনে বসায়।

মুখ বেশি উপরে  তোলে না। যদি চিনে ফেলে ধাওয়া মেরে তুলে দেয়। ষণ্ডামত একজন দাদা এসে জানায় হেই শরীফ কলাপাতা নাই আর । এগের হাতে হাতে দিয়ে দে। লাবড়া না থাকলি  খালি লুচি দে বিদায় কর।

কুইক। আমাগের আরতি নাচ আছে মনে রাখিস।

সালাম  আল্লাহ রসূল ভগবান দুর্গা সরস্বতী লক্ষ্মী কার্তিক গনেশ সবাইকে মনে মনে ডাকে। দুটো লুচি যেন সে পায়। লাবড়া লাগবে না। শুধু  দুটি লুচি। একটু যদি ছেঁড়া বা পোড়া হয় তাতেও হবে। বোন কোনদিন আস্তো লুচি খায় নাই।

হে বড় লোকের ঈশ্বর, দুটি লুচি যেন পাই। একটি বোনকে দেব একটি আমি  খাবো। রামুকে ঘুনঘুন করে হুঁশিয়ার করে দেয়, দুটো নেওয়ার চেষ্টা করবি বুঝলি । ক্যাবলার মতন হা  করে তাকিয়ে থাকবি না।

নতুন শিখা ক্লাবের ছেলেরা ঝাঁকা ভর্তি লুচি নিয়ে এসেছে।  লাবড়াও আছে যথেষ্ট । রামু হা করে তাকিয়ে দেখছে নতুন গামছা বাঁধা হিন্দু মুসলিম দাদাদের হাতে নতুন শিখা ক্লাবের  লালসবুজ ব্যাজ।

কেউ একজন রামুকে লুচি দিয়ে চেঁচিয়ে বলে , অই লাবড়া শ্যাষ । থাকলি দেয়ে যা। গামছায় মুখ মুছে দূর  থেকে একজন বলে, ধুস লাবড়া লাগবে না ওদের। লুচি একটা বেশী দে বিদায়  কর ত। বিরক্ত লাগতেছে হেভি।  সালাম আবার আল্লাহ ঈশ্বর ভগবানকে ডাকে।  তার কাছে আসতে আসতে যদি লুচিও ফুরিয়ে যায়! অই হাত পাত।

ষণ্ডা দাদাদের কেউ  সালামের মাথায় চাটি মেরে তিনটে লুচি ছুঁড়ে দেয়। সালাম লুচি নিয়েই উঠে পড়ে । তুই? কেউ একজন লম্বা হাতে ধরতে গেলেই প্রাণপণে ছুটে বেরিয়ে যায় সালাম।

তুলসি গাছের ঝাপটায় জবা ফুলের ডালে ওর মুখ বুক ছেঁচড়ে যায়। তাতেও থামে  না । লুচি তিনটে হাতের মুঠোয় চেপে এক সুনামী ঘুর্ণির মত ছুটতে ছুটতে সামু এসে  দাঁড়ায় কেশব কুড়ির বাড়ির নাগালের বাইরে। হাঁপরের মত দুলছে ওর বুক।

গল্পের ৩য় অংশ পড়তে এখানে ক্লিক করুন

সম্পর্কিত পোস্ট

দুঃখিত!