ক্ষুধার মন্দির–শেষ পর্ব

গল্পের ১ম অংশ পড়তে এখানে ক্লিক করুন।

হোক তার নাক হাতির শুড়ের মত। তবু মা পাবে তো সে। তার মা । এক ভাগ খাবার পাঁচভাগ করে রাসিদাসি যখন খেতে দেয় তখন ওর বুক ফুলে ওঠে। ও নিশ্চিত আনন্দে বোঝে এই মা। মা এইরকমই হয়।গলির মোড়ে সালাম থরথর করে কাঁপে আর ভাবে গরীবের জন্যে কেউ নাই ।

না ভগবান না আল্লাহ। আর থাকলেও তারা সবাই মন্দির মসজিদে থাকে।

তাদের সময় কোথায় গরীব পাড়ায় এসে গরীবগুবরোদের অবস্থা দেখে। রামু একটু লাবড়া পেয়েছে। সালাম বুদ্ধি দেয়, খাসনা ভাই।

এটুকু মা আর বোনের জন্যে নিয়ে যাই চল। আমরা ত আবার খাবো।” দুজনে হিহি করে হাসে। ওরা  এবার ক্ষিতিশ মহাজনের বাড়ি যাবে। শবে বরাতের রাতেও ওরা এইভাবে রুটি হালুয়া  তুলে আনে।

আর মাটির ঘরের বারান্দায় ধূলো মাখা মা বোন যখন হাসি হাসি মুখ করে খায় ওদের বুকের ভেতর আনন্দের নৌকাবাইচ বয়ে যায়। ঈদের সময় দুটো তিনটে শাড়ি সে নানান ভুজুং ভাজুং করে যোগাড় করে। রাসিদাসি সেই শাড়ি পেয়ে  সালামকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে ভাসায়। মাঝে মাঝে কোন বড় লোক মুসলমান যখন এতিমখানায় খাবার দেয় সালাম করুণ মুখে বেশি করে চেয়ে নেয়। পলিথিনের ব্যাগে খাবার নিয়েই সে ছুটে আসে নদীপারে।

সেখানে জলটানার কাজ করে রমেশ। কাজ শেষে ভাঙ্গা নৌকার পেটের ভেতর বসে চাড়ার টানে একতারা বাজিয়ে লালনের গান গায়। মজুরারা শোনে আর মাথা নাড়ে। সেই খাবার পাঁচ ভাগ করে দেয় রাসিদাসি মা। ওরা সোনামুখ করে খেয়ে নেয় । রমেশের বাবা বলে মানুষই ভগমান বুঝলি রাসি। মানুষের দেওয়া কিছু ফেলতি নাই গো।

রাসিদাসি কোলের ভেতর রাধু আর দুই পাশে রমেশ  সালামকে নিয়ে ধূলো উঠোনে বসে দেখে আলোকিত মন্দির মসজিদ গির্জা পেরিয়ে চাঁদ হেঁটে এসেছে  ওদের উঠোনে। একই চাঁদ । হিন্দু মুসলিম খ্রিষ্টান বৌদ্ধ সাদা কালো সবার জন্যে এক চাঁদ এক সূর্য। ক্ষুধাও এক। সালামের ক্ষুধা আর রমেশের ক্ষুধা এক। সে ঘুম  ঘুম ছেলেমেয়েদের মাথা কোলে কাঁধে ছুঁয়ে ভাবে, একখান  ক্ষুধার মন্দির হলি ভারি ভাল হত। তারা সবাই যায়ি বাস করত সেহানে।

সবাই কুড়ায় টুকায় ভাগ করি খাতো। তাগের দুগগা ছেঁড়া শাড়ি পরি হাড় জিরজিরে ছাওয়াল মাইয়া নিয়ি অভাবি বাপের খোলোটে ধুলো পায়ি বসি থাকত। কলমি শাকের অতেলা ভাজি আর চাডডি মোটা  লাল ভাত খায়ি চোখের জলে ভাসি যাতি যাতি কতো ,

আসছি বচ্ছর আমারে একদিনের জন্যি হলিও বাড়ি আইনো কিন্তু ও  মা জননী, ও পরাণের প্রিয় বাপ। আমারে যেনো ভুলি যায়িও না তুমরা । আমিও যে   তুমাদের অভাবী মাইয়া গো। শাকপাতা কুড়ায়কাছায় হুই নদীপারি বাঁচি থাহি।

চিংড়ির পোনা ধরে জীবন চালায় বাপ ভাই মা বোন।   রাসিদাসি কতকাল বাপের বাড়ি যায় না। যদু যোগালি চাঁদের আলোয় দেখে  ঘুমের ভেতর কেঁদে ভাসাচ্ছে তার বউ রাসিদাসি।

তার কোলের ভেতর রাধু, পিঠে মুখ গুঁজে ঘুমাচ্ছে সালাম তার পাশে রমেশ। সে ছেঁড়া কাঁথাটি ভাল করে জড়িয়ে দেয়    ছেলেমেয়ে বউয়ের গায়ে। হে মা ধরিত্রী তোমার ফেলানো ছাড়ানো খাবার খেয়ে  আসছে বছর আমরা যেন এরমভাবে একসাথি বাঁচি থাকতি পারি।

 

গল্পের ১ম অংশ পড়তে এখানে ক্লিক করুন।

দুঃখিত!