ক্ষুধা

রাত ২.০০টা। ঘুমহীন রাত কেটে যাচ্ছে উকিল মিয়ার। প্রত্যেকটা মুহুর্ত যেনো বিষমাখা ছুরির মাতন বুকের গহব্বরে! ভালো লাগেনা একদমই উকিল মিয়ার! ছোটবেলা থেকেই মানুষের কিল-ঘুষি খেয়ে খেয়ে মানুষ হয়েছে সে। বড় হয়েছে ডাষ্টবিনের আশেপাশে বেড়ে ওঠা কুকুরের সংস্পর্শে।
গত দুইদিন না খেয়ে আছে সে। মানুষের টাকা চুরি করে পেট ভরাতে খারাপ লাগে এখন তার। আগে খারাপ লাগতো না। এখন কেন লাগে উকিল মিয়া ভেবে পায় না। গতদুই দিন ধরে তার চৌর্যবিদ্যা বন্ধ রেখেছে। যার ফল স্বরুপ তাকে অনাহারে থাকতে হচ্ছে। না খেয়ে মরে যাবে তবুও আর নিজের বিবেককে জলাঞ্জলি দিবে না উকিল মিয়া। যদি এমন হতো, ক্ষুধাকে মানুষ জয় করতে পারতো! তাহলে মানুষকে এতটা কাঠখড় পুড়িয়ে বাঁচতে হতো না।
চোখ বুঝে ঘুমানোর নিস্ফল চেষ্টা করতে লাগল সে। একসময় তন্দ্রামত লেগেছে বোধয়। সে দেখল, তাকে নিয়ে একটা পরী উরে উরে বেড়াচ্ছে। তার হাতে হাত রেখে আকাশে ভেসে ভেসে সুরের মূর্ছনায় মাতাল করে রাখছে মেঘমালাকে।
-তুমি আমাকে কোথায় নিয়ে যাচ্ছ?
-যে দেশে গেলে তোমার ক্ষুধা লাগবে না। তোমাকে অনাহারে বিনিদ্র রাত কাটাতে হবে না।
-আছে কি এমন দেশ?
-হুম চলো! গেলেই দেখতে পাবে।
পরীটা উকিল মিয়া কে নিয়ে একটি ফুলের বাগানে নামল। আহ কি সুন্দর চারিপাশ! শুধু ফুল আর ফুল। উকিল মিয়ার প্রিয় দূর্বা ফুলও দেখতে পেল।
-এ আমাকে কোথায় নিয়ে এলে তুমি?
-এটাই সেই দেশ। যেখানে কোন ক্ষুধা নেই।
-এটা দেশ? আমার তো মনে হচ্ছে ফুলের বাগান!
উকিল মিয়া দেখল। একটা লোক গান গাচ্ছে আর তার পাশে কয়েকজন ঘুরে ঘুরে নৃত্য করছে। দূরে কিছু লোক সাতার কাটছে। অসংখ্য ঝর্ণার পানি মুক্তোর মত ঝরে পড়ছে।
চারপাশে কত সুন্দর সুন্দর ফল। কেউ খায় না। নিচে কতক পরে রয়েছে। উকিল মিয়া একটা ফল মুখে নিয়ে কামড় দিল। কোন রকম স্বাদ নেই।
★★★
পরদিন অনেক দেরিতে ঘুম ভাঙ্গল উকিল মিয়ার। কি আজব স্বপ্ন দেখেছে উকিল মিয়া। আবছা আবছা মনে আসছে। তাতেই বিভোর থাকে উকিল মিয়া। স্বপ্ন তো স্বপ্নই। স্বপ্নের কথা চিন্তা করে মাথা নষ্ট করে লাভ নেই। তারচেয়ে বরঞ্চ বাসা থেকে বের হওয়া যাক। যদি কোন কাজ পাওয়া যায়! তিনদিন ধরে অনাহারে সে।
★★★
অভ্যেসবশত এক লোকের পকেট মারল উকিল। অনেকদিনের অভ্যাস সহজেই কি আর যেতে চায়? মানিব্যাগটা ফেরত দেওয়ার জন্য ঘুরল সে। কিন্তু লোকটাকে দেখতে পেল না। মানি ব্যাগে প্রচুর টাকা রয়েছে। সে কিছু টাকা ধার হিসেবে নিল। পরে যদি লোকটাকে খুজে পায় তাহলে দিয়ে দিবে। পাশেই একটা হোটেল দেখতে পেল। হোটেলে ঢুকেই অনেকগুলো অর্ডার দিল। আশে পাশের লোকজন অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে। এত খাবার দিয়ে লোকটা কি করবে? অনেক ক্ষুধার্ত উকিল মিয়া। হাত ধোয়ার অবসরটুকু যেন নেই। তাড়াতাড়ি টপাটপ মুখে পুরতে লাগল। কিন্তু খাবারে কোন স্বাদ নেই!
-ওয়াক থু! কি খাবার দিছো এগুলা? কোন স্বাদ নেই?
-কি বলেন স্যার?
-হ্যা সব খাবার পানসে!
-কই দেখি তো?
(হোটেল বয় মুখে দিল)
-স্যার খাবার তো ঠিকই আছে!
উকিল আবারে খাবার মুখে দিল কিন্তু কোন স্বাদ পেল না। সে আশ্চর্য হয়ে খেয়াল করলো তার তিন দিনের ক্ষুধা ক্ষুধা ভাব টা নিমিষেই চলে গেছে! ক্ষুধারলেশ মাত্র নেই তার!

"আলোর পথ"-এ প্রকাশিত গল্পসমূহ ও লেখনী মূলত পাঠক, শুভানুধ্যায়ী এবং সম্মানিত অবদানকারীদের কাছ থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে। এই কনটেন্টগুলোর উপর আমরা কোনো মেধাসত্ত্ব (copyright) দাবি করি না। যদি কোনো গল্প, ছবি বা তথ্যের কপিরাইট সংক্রান্ত বিষয়ে আপনার প্রশ্ন, সংশয় বা আপত্তি থাকে, তাহলে অনুগ্রহ করে আমাদের যোগাযোগ পৃষ্ঠায় যোগাযোগ করুন। আমরা যথাযথ আইনানুগ পদ্ধতিতে বিষয়টি পর্যালোচনা করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করব।

সম্পর্কিত পোস্ট

দুঃখিত!