ক্রীতদাস হিসেবে হযরত ইউসুফ (আঃ)

হযরত ইউসুফ (আঃ) গভীর কুপের নিচে অন্ধকারাচ্ছন্ন স্থানে বসে শুধু আল্লাহ্‌র জিকিরে মশগুল থাকতেন। হযরত জিব্রাইল (আঃ)-তাঁর জন্য সময়মত খাবার পরিবেশন করতেন এবং সান্তনা প্রদান করতেন। এমন কি তাঁকে জানিয়ে দিলেন যে, আল্লাহ তায়ালা তাঁকে আগামীতে নবুওয়াতী প্রদান করবেন। এবং সেই সাথে এক বিশাল রাজ্যের অধিপতি হিসেবে সম্মান দান করবেন। যে রাজ্যটি পৃথিবীর সর্বশ্রেষ্ঠ সম্পদশালী রাজ্য বলে প্রতিষ্ঠিত হবে। তখন তাঁর সৎ ভাইয়েরা তাঁর নিকট আত্মসমর্পণ করবে এবং তাঁর করুণা ভিক্ষা করবে। তবে এ সমস্ত নেয়ামত প্রদান করার পূর্বে আল্লাহ তায়ালা তাঁকে ধৈর্য, সহিষ্ণুতা, উদারতা ও ত্যাগ-তিতক্ষার ক্ষেত্রে উপযুক্ত এক ব্যাক্তিত্ব হিসেবে তৈরি করার উদ্দেশ্যে কঠিন দুঃখ-কষ্ট ও নির্যাতনের সম্মুখীন করবেন। এ কঠিন সময় ধৈর্য ও আল্লাহ্‌র সাহায্য প্রার্থনার মাধ্যমে তাঁকে কৃতকার্য হতে হবে। হযরত ইউসুফ (আঃ) জিব্রাইল (আঃ)-এর নিকট সমস্ত খবর শুনে আল্লাহ্‌র দরবারে শুকরিয়া আদায় করলেন।

হযরত ইউসুফ (আঃ)-কে কূপে নিক্ষেপ করার পর তাঁর ভাইয়েরা দৈনিক দু একবার কূপের নিকট এসে পরিদর্শন করে যেত ইউসুফ (আঃ) জীবিত আছে কোন পথিক তাঁকে উদ্ধার করে নিয়েছে। এ বিষয়ে তাঁদের মনে নানা রকম সন্দেহ ছিল। এভাবে একাধারে তিন দিন অতিবাহিত হবার পরে একদল বনিক পথ ভুলে এই কূপের নিকট এসে পৌঁছে। তাঁরা ছিল অত্যন্ত ক্লান্ত ও তৃষ্ণার্ত। তাই পানির জন্য তাঁরা কূপের নিকট এসে কূপের মধ্যে রশি বেঁধে বালতি ফেলল। কিছুক্ষণের মধ্যে বালতি উত্তোলন করে সকলে অবাক হল। পানির বদলে বালতির মধ্যে বসা ছিল একটি সুদর্শন বালক। বালকটির সৌন্দর্য ও লাবণ্য দেখে দলপতি মালেক বিন জিগর অবাক হলেন। তিনি জীবনে এত সুন্দর ও রূপসমৃদ্ধ কোন মানুষকে দেখেন নি। তাই তিনি অতি আদর করে বালকটিকে এক নির্জন স্থানে নিয়ে ভাল ভাল খাবার দিলেন এবং সংক্ষিপ্ত ভাবে তাঁর পরিচয় জেনে নিলেন।

 এ সময় তাঁর ভাইয়েরা সেখানে উপস্থিত হয়ে বণিকদের এবং ইউসুফ (আঃ)-কে দেখতে পেল। তখন তাঁরা বলল, এই ছেলেটি আমাদের ঘরের গোলাম। সে দুদিন পূর্বে কাজের ভয়ে ঘর থেকে পালিয়ে এসেছে। আমরা দুদিন যাবত তাঁকে তন্য তন্য করে খুঁজে বেড়াচ্ছি। শেষ পর্যন্ত এ জঙ্গলে আশ্রয় নিয়েছিল। সম্ভবত বাঘের তাড়া খেয়ে সে কূপে পতিত হয়েছে। এখন হয় তাঁকে ফেরত দাও না হয় উপযুক্ত মূল্য দিয়ে খরিদ করে নিয়ে যাও। এ ধরনের গোলাম রেখে আমাদের লাভ নেই। হযরত ইউসুফ (আঃ) ভাইদের মন্তব্যের প্রতিবাদে কিছু বলতে আরম্ভ করেছিলেন। ভাইয়েরা তখন তাঁকে বিরাট ভাবে ধ্মক দিয়ে বলল, মুখ থেকে যদি কোন কথা বলার চেষ্টা করিস তবে এখনই শেষ করে দিব। হযরত ইউসুফ (আঃ) ভাইদের ধ্মকের সামনে আর কোন কথা বলবেন না।

মালেক বিন জিগর ইউসুফ (আঃ)-এর ভাইদের শরীরের অঙ্গ প্রত্যঙ্গ দেখে কিছুটা ভীত হলেন এবং বললেন এ গোলাম খরিদ করার আমার তেমন ইচ্ছে নেই। তবে আমার নিকট অল্প কিছু টাকা আছে। এতে যদি তোমার তাঁকে বিক্রয় কর, তবে আমি নিতে পারি। অন্যথায় তোমরা তাঁকে নিয়ে যাও। হযরত ইউসুফ (আঃ)-এর ভাইয়েরা চিন্তা করল ওকে ফেরত নেয়া আদৌ সম্ভব নয়। সে দাম পাওয়া যায় তাতে বিক্রয় করে দেয়াই উত্তম। বনিক কাফেলার সাথে বিদেশ চলে গেলে সমস্ত ল্যাঠা চুকে যাবে এবং আমাদের উদ্দেশ্য সঠিক ভাবে বাস্তবায়িত হবে।

সূত্রঃ কুরআনের শ্রেষ্ঠ কাহিনী

You may also like...

দুঃখিত, কপি করবেন না।