কোরআনের আকর্ষণ

পবিত্র কোরআন মানবজাতির জন্য পথ প্রদর্শনের মাধ্যম এবং সত্য ও মিথ্যার পার্থক্য নির্ণয়কারী। পবিত্র কোরআনে বলা হয়েছে এই কোরআন বিশ্ববাসীর জন্যে উপদেশ বা জাগরণের মূল উৎস। মার্কিন চিন্তাবিদ ইরভিং পবিত্র কোরআন সম্পর্কে বলেছেন-“এই গ্রন্থ আটলান্টিক মহাসাগর থেকে প্রশান্ত মহাসাগর পর্যন্ত সকল জনগণকে শান্তি ও সুখ-সমৃদ্ধির পবিত্র ছায়াতলে আশ্রয় দিয়েছে।” পবিত্র কোরআন সম্পর্কে বিখ্যাত দার্শনিক আল্লামা তাবাতাবায়ী লিখেছেন, জ্ঞানীদের জন্য কোরআন যেন এক অলৌকিক সম্পদ-ভান্ডার এবং আইন প্রনেতাদের জন্য এটি সবচেয়ে সামাজিক আইনের আঁধার। এই গ্রন্থে রয়েছে নীতিনির্ধারক বা রাজনীতিবিদদের জন্য সবচেয়ে নবীন ও নজিরবিহীন নীতি । অন্যদিকে বিখ্যাত বিজ্ঞানী আইনষ্টাইন পবিত্র কোরআন সম্পর্কে বলেছেন, কোরআন বীজগণিত, জ্যামিতি বা গণিতের বই নয়, বরং এ গ্রন্থে রয়েছে এমনসব বিধান যা মানুষকে সুপথ বা সত্যের পথে পরিচালিত করে, এই পথ হচ্ছে এমন পথ, যা নির্ধারণ করা ও যার সংজ্ঞা দেয়া বিশ্বের শ্রেষ্ঠ দার্শনিকদের পক্ষেও সম্ভব নয়। কোরআনের শিক্ষাগুলো হলো ইসলামের বিকাশ ও উন্নয়নের মূল চালিকাশক্তি। আর তাইতো, ইসলামের প্রাথমিক যুগ থেকে আজ পর্যন্ত অনেক ইসলাম বিরোধীও কোরআনের প্রতি আকৃষ্ট হয়েছেন। অনেক অমুসলিম চিন্তাবিদ কোরআন নিয়ে গবেষণাও করেছেন। কোরআনের প্রতি মানুষের আকর্ষণ সম্পর্কে আমরা একটি বিশেষ অনুষ্ঠান প্রচার করেছি। অনুষ্ঠানের শেষে ছিল এক নতুন বন্ধুর সাক্ষাৎকার।

রাসূল যখন ইসলামের দাওয়াত দিচ্ছিলেন ,তখন কুরাইশ মুশরিকরা রাসূলের বিরুদ্ধে সকল প্রচেষ্টা চালিয়েছিল। এমনকি তারা রাসূলের কাছে যাতে কেউ আসতে না পারে সেজন্যে মানুষজনকে বাধা দিত। কিন্তু মুশরিকদের এতো বাধা-বিপত্তি উপেক্ষা করেও মানুষ কোরআনের মোহনীয় মাধুর্যে বিমুগ্ধ হয়ে যেত। এরফলে মুশরিকদের মনে একটা প্রশ্ন জাগলো যে, এমন কী আছে কোরআনে যে, যে-ই শোনে সে-ই মুগ্ধ হয়ে যায়। মক্কার মুশরিকদের মধ্যে অন্যতম ক’জন ছিল আবু জেহেল, আবু সুফিয়ান এবং আখনাস। এরা দিনের বেলা ঠিকই অন্যদেরকে রাসূলের কাছে যেতে বাধা দিত আর রাতের বেলা নিজেরাই গোপনে গোপনে কোরআন তেলাওয়াত শোনার জন্যে রাসূলের ঘরের পাশে গিয়ে লুকিয়ে থাকতো।

একরাতে এদের তিনজনই যার যার মতো লুকিয়ে লুকিয়ে কোরআন তেলাওয়াত শুনলো। তেলাওয়াত শোনার পর যখন তারা বেরিয়ে এলো, তখন সবার সাথে সবার দেখা হলো এবং সবার কাছেই সবার গোপনীয়তা প্রকাশ হয়ে পড়লো। ফলে পরস্পরকে তিরস্কার করতে লাগলো এবং তারা শপথ করলো যে এই ঘরে আর কখনো আসবে না। মুখে তার একথা বললেও কোরআনের প্রতি আকর্ষণের কারণে তারা তাদের শপথের কথা রাখতে পারলো না। তাই পরের রাতেও তিনজনই রাসূলের নিজ মুখে আল্লাহর বাণী শোনার জন্যে বাইরে বেরিয়ে এলো। পরপর তিনদিন এই ঘটনার পুনরাবৃত্তি হলো। কোরআনের প্রতি তাদের আকর্ষণ সৃষ্টি হলেও ঈর্ষাপরায়নতা ও গোঁড়ামির কারণেই তারা সত্য গ্রহণ করা থেকে বিরত ছিল।

ওয়ালিদ ইবনে মুগীরা ছিলেন আরবের শ্রেষ্ঠ সাহিত্য সমালোচক। একবার কুরাইশদের একটি দল ওয়ালিদকে নিয়ে রাসূলের কাছে গেল বিতর্ক করতে । কুরাইশরা অপেক্ষায় ছিল এই বুঝি ওয়ালিদ রাসূলকে পরাস্ত করে বসলো। রাসূল কোরআনের একটি আয়াত তেলাওয়াত করলেন। ওয়ালিদ প্রথম দিকে অহঙ্কারের সাথে আয়াত শুনছিলো। কিন্তু পরক্ষণে দেখা গেল রাসূলের মুখে তেলাওয়াতের শব্দ যতোই বৃদ্ধি পেতে লাগলো,ওয়ালিদ ততোই শান্ত এবং আত্মসমর্পিত হতে শুরু করলো। ওয়ালিদ বললো : “কী মধুর ! এটা কিছুতেই মানুষের বানানো বক্তব্য হতে পারে না।” আয়াতের মাধুর্য ওয়ালিদের ভেতর এতোটাই প্রভাব বিস্তার করলো যে, সে পরিবর্তিত হয়ে গেল। মুশরিকরা তাকে ভয় দেখালো, সাবধান করে দিল। কিন্তু ওয়ালিদ বললো , “মুহাম্মাদের কাছ থেকে যেসব কথা আমি শুনেছি , সেসব কথা এতো আকর্ষণীয় যে অন্য কারো কথার সাথে তার তুলনা হয় না। তার বক্তব্যকে ঠিক কবিতাও বলা যায় না, আবার গদ্যও বলা যায় না, গদ্য-পদ্যের উর্ধ্বে তাঁর বক্তব্য গভীর অর্থপূর্ণ, মিষ্টি-মধুর, কল্যাণময় ও প্রভাব বিস্তারকারী। তাঁর বক্তব্য এতোই উচ্চমানের যে, কোনোকিছুই তারচেয়ে উন্নত হতে পারে না।”

এবার আমরা আরেকজন জ্ঞানী ও বিজ্ঞ লোকের কথা বলবো যিনি রাসূলের কণ্ঠে কোরআন তেলাওয়াত শোনার সাথে সাথেই ইসলাম গ্রহণ করেন। ঐ লোকটি ছিলেন আদ দাউস গোত্রের সরদার তুফাইল ইবনে আমর। তিনি একজন কবিও ছিলেন। একবার তিনি মক্কার আসার পর মক্কার সর্দাররা তাকে মুহাম্মদ (সাঃ) এর সাথে দেখা করতে নিষেধ করে দিলেো। তারা জানালো, মুহাম্মদের কথা মক্কায় ভীষণ বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি করেছে। কোরাইশ নেতাদের কথামতো তুফাইল ইবনে আমর মহানবীর সংস্পর্শ এড়িয়ে চলতে লাগলেন। কখনও তিনি মহানবীর মুখোমুখি হলে চোখ বুঁজতেন এবং কান বন্ধ করতেন। ঘটনাক্রমে একদিন যখন মহানবী (সাঃ) কাবা ঘরে নামায পড়ছিলেন, তখন তাঁর কণ্ঠ নিঃসৃত কোরআনের আয়াতগুলো তুফাইলের কানে প্রবেশ করলো। মুহুর্তেই আয়াতগুলো তাঁর হৃদয়ে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করলো। নামায শেষে যখন নবীজী কাবাঘর থেকে বের হয়ে বাড়ীর দিকে রওনা হলেন, তখন তুফাইল তার পিছু পিছু নবীজীর বাড়িতে গেলেন। বাড়ীতে পৌছার পর তিনি আবারো আয়াতগুলো তেলাওয়াত করার জন্য নবীজীর প্রতি অনুরোধ জানালেন। মহানবী কোরআনের আয়াতগুলো পুনরায় তেলাওয়াত করলেন। অভিভূত তুফাইল সাথে সাথে ইসলাম গ্রহণ করলেন।

এবার আমরা জামাদ নামে ইয়েমেনের একজন জাদুকরের কথা বলবো যিনি রাসূলের কণ্ঠে কোরআন তেলাওয়াত শোনার সাথে সাথে ইসলাম গ্রহণ করেছিলেন। জাদুকর জামাদ ইয়েমেন থেকে মক্কার আসার পর কুরাইশ নেতাদের বললেন, মুহাম্মদের ওপর যে দুষ্ট দেবতার আছর হয়েছে তা সে ছাড়িয়ে দেবে। কুরাইশ নেতারা এ কথা শুনে খুশী হলো। জামাদ মহানবী (সাঃ) এর কাছে গিয়ে হাজির হয়ে বললো, আমি শুনেছি আপনার ওপর নাকি দুষ্ট দেবতার আছর করেছে, আমি তা ছাড়িয়ে দিতে চাই। মহানবী এ কথা শুনে কোন রাগ না করে বললেন, আপনার যা করার করবেন, তার আগে আমার কথা শুনুন। একথা বলে নবীজী পবিত্র কোরআন থেকে কয়েকটি আয়াত পাঠ করলেন। আয়াতগুলো শুনে জামাদ অভিভূত হয়ে গেল এবং আয়াতগুলো আবারো পাঠ করার অনুরোধ করলো। মহানবী আয়াতগুলো দ্বিতীয়বার যখন পাঠ করা শেষ করলেন তখন জামাদ চিৎকার করে বলে উঠল, ‘ আমি বহু ভবিষ্যদ্বক্তা. জাদুকর ও কবির কথা শুনেছি কিন্তু আল্লাহ সাক্ষী এই কথাগুলোর কোন তুলনা নেই। ‘ এরপর জামাদ বললো, হে মুহাম্মদ! আপনার হাত বাড়িয়ে দিন, আমি ইসলাম গ্রহণ করছি। কোরআনের প্রতি আকর্ষণ সম্পর্কে এরকম আরও বহু ঘটনা ইসলামের ইতিহাসে আছে এবং বর্তমানেও এ ধরনের ঘটনা ঘটছে। আর তাইতো মুক্তিপাগল মানুষরা প্রতিদিনই কোরআনের ছায়াতলে সমবেত হচ্ছে।

সম্রাট শাহজাহান ও মমতাজের প্রেমকাহিনীর পেছনের ইতিহাস

বরকতময় টাকা

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *