কে, কে ওখানে??◄

আমার জীবনে একাধিক ভৌতিক ঘটনা ঘটেছে।। কোন রকমের নোটিশ ছাড়াই আমার স্ত্রী ঘোষনা দিল সে চাকুরী ছেড়ে দিয়েছে। সরকারি চাকুরি না হওয়া পর্যন্ত আর চাকুরি করবে না। এখন থেকে পতিসেবা করবে। কিছুদিনের মধ্যে যেন বাসা নেই। পরদিন ইউএনও এর সাথে দেখা করে আমার নামে কোর্য়াটারে একটা ফ্লাট বরাদ্দের অনুরোধ করি। কারন তিনি এর সভাপতি। যেহেতু ফ্লাট খালি ছিল তাই কয়েক দিনের মধ্যে ফ্লাট পেয়ে গেলাম। সপ্তাহ খানেকের মধ্যে ডর্মিটরী ছেড়ে কোর্য়াটারে উঠে গেলাম। পাশাপাশি দুটো দোতলা বিল্ডিং।
প্রত্যেকটায় ৪টা করে ফ্লাট। ডর্মিটরী থেকে বিল্ডিং দুটো ৩০০গজের মতো পশ্চিমে অবস্থিত। আমার ফ্লাট টা ছিল নীচ তলায়। দুটো বেড রুম, অকটা ডাইনিং, একটা ড্রইং রুম এই নিয়ে আমার ফ্লাট। এর পিছন দিকটা জঙ্গলে পরিপূর্ন। তার পরেই একটা পরিত্যক্ত পুকুর। কিছুদিন পরে আমার স্ত্রীকে নিয়ে আসলাম। বিল্ডিংয়ের জানালা গুলো ছিল কাঁচের। আমরা ফ্লাটের সামনের দিকের বেডরুমে ঘুমাতাম। মাঝেমধ্যে পিছনের বেডরুমে রাত ১.00-১.৩০টা পর্যন্ত কাটাতাম। নতুন বাসায় আনন্দেই দিন কাটছিল। প্রায় ছয় মাস পর এক রাতে প্রথম বিপত্তি দেখাদিল। রাত ১টার দিকে সামনের বেডরুমে শুয়ে টিভি দেখছি হঠাত্‍ পিছনের বেড রুমে ঝনঝন করে কিছু পরার শব্দ হলো। আমি ডাইনিং রুমের বাল্ব অন করে বেড রুমের দড়জা খোলা মাত্র দড়জা দিয়ে ঢোকা আলোয় স্পষ্ট দেখলাম মানুষের ছায়ার মত কিছু একটা জানালার দিকে চলে গেল। বেডরুমের বাল্ব অন করে দেখি রুমে কিছু নেই। জানালার পর্দাটা কাঁপছে। পর্দাটা সরিয়ে দেখি জানালাটা বন্দ। বিছানার দিকে তাকিয়ে দেখি চাঁদরটা অগোছালো। চাঁদরটা ঠিকঠাক করে বাল্ব অফ করে সামনের বেড রুমে চলে আসি। স্ত্রীকে বলি ডাইনিংয়ে ইদুরে খাবারের ঢাকনা ফেলেছে।
এর কিছু দিন পর রাত ১টার দিকে সেই পিছন দিকের বেডরুমে আমি শুয়ে আছি। আমার স্ত্রী কাপড় ভাঁজ করছে আর আমার সাথে টুকটাক কথা বলছে। জানালার পর্দা ফাকা করা ছিল। ও জানালার দিকে তাকিয়ে হঠাত্‍ ‘কে?’ বলে চিত্কাফর করে আমার গায়ের উপরে এসে পরে। ওর সারা শরীর থরথর করে কাপছিল। আংগুল দিয়ে জানালা দেখিয়ে বলে, ঐখানে কে যেন চাঁদর মুড়ি দিয়ে দাড়িয়ে রুমের মধ্যে তাকিয়ে আছে। আমি উঠে জানালার দিকে যেতে চাইলে ও বাধা দেয়। তারপরেও টর্চ নিয়ে জানালার কাছে গিয়ে আলো ফেলে দেখি কোথাও কিছু নেই। তবে জানালা ঘেসা সুপারী গাছের সাথে জড়ানো লতাগুলো অস্বাভাবিক ভাবে কাঁপছে। সেটা আমার স্ত্রীর চোঁখও এড়ায়নি। ওকে এই বলে বোঝাতে চেষ্টা করি যে, ওটা বাতাসে দুলছিল! কিন্তু কে শোনে কার কথা। এর পরে সামনের রুমে চলে আসি। পরদিন ঐ বেডরুমটা লক করে দেই। মাঝেমধ্যে ঐ রুমে অদ্ভুত সব শব্দ হতো। আর এদিকে আমার স্ত্রীর মধ্যে কেমন একটা চেন্জ লক্ষ করলাম। কথা বলা একে বারে কমিয়ে দিল।
প্রায় রাতেই ঘুমের মধ্যে চিত্কাকর দিয়ে উঠত। এভাবে আরও কিছু দিন কাটার পর অবস্থা বেগতিক দেখে ওকে শ্বশুর বাড়ি রেখে আসি। এর পর একা একা এভাবে বেশ কিছু দিন কেটে যায়। একদিন অনেক রাত করে ঘুমাই। হঠাত্‍ একটা শব্দে ঘুম ভেঙ্গে যায়। দেখি চারদিক পরিস্কার। বুয়া রুম ঝাড়ু দিচ্ছে। তাকে জিঞ্জেস করলাম সে রুমে ঢুকলো কিভাবে। সে জানালো সব কটা দড়জা থোলা ছিল। আমি অবাক হয়ে গেলাম। ঘরের সব কিছু চেক করে দেখি ঠিক আছে। কিন্তু দড়জা গুলো কে খুল্লো তা বুঝতে পারলাম না। এর মধ্যে ১/১১ চলে আসলো। আমাকে বদলী করে দেয়া হলো। বাসা ছেড়ে চলে যাই নতুন কর্মস্থলে। আমার স্ত্রী এখনও মাঝেমঝে ঘুমের ঘোরে কেপে কেপে ওঠে! উল্লেখ্য, এখন পর্যন্ত এটাই আমার জীবনে ঘটে যাওয়া শেষ ভৌতিক ঘটনা। সবাই আমার জন্য দোয়া করবেন, যেন এমন ঘটনা আর না ঘটে।

►বন্ধুত্ব◄

►করুন পরিনতি◄

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *