‘—-কেন বারবার ভূমিকম্প হচ্ছে?

কেন বারবার হিমালয়ের পাদদেশের ছোট্ট এই দেশটি ভূমিকম্পে কেঁপে উঠছে? বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ভূতাত্ত্বিক কারণেই এই ভূমিকম্পের উৎপত্তি। আড়াই কোটি বছর আগে পৃথিবীতে ভারতএকটি আলাদা দ্বীপ ছিল,যা দ্রুত সরে এসে এশিয়ার সঙ্গে ধাক্কা খায়।
মধ্য এশীয় টেকটোনিক প্লেটের নিচদিয়ে ভারতীয় প্লেট অতি ধীরে ধীরে ঢুকে যাওয়ার ফলে এখানকার পর্বতগুলো এখনো আকার পাচ্ছে। প্রতি বছর এই দুটিপ্লেট দুই ইঞ্চি করে পরস্পরের দিকে সরে আসছে। এতে সৃষ্টি হয় প্রচণ্ড চাপ।
টেকটোনিক প্লেট হচ্ছে ভূত্বকের বিশাল খণ্ড, যা সঞ্চরণশীল।
যুক্তরাজ্যের ওপেন ইউনিভার্সিটির ভূ-বিজ্ঞানবিষয়ক অধ্যাপক ডেভিড রথারি বলেন, হিমালয়ের পর্বতমালা ভারতীয় প্লেটের ওপর দিয়ে প্রবলভাবে ধাক্কা দিচ্ছে। সেখানে দুই থেকে তিনটি বড় ধরনের চ্যুতি রয়েছে। আর আছে কিছুখুব মৃদু গতিতে সঞ্চরণশীল চ্যুতি। এগুলোর সঞ্চরণের কারণেই ভূমিকম্পের ঘটনা ঘটেছে।

কয়েক দশক ধরেই নেপালের কাঠমান্ডুর মানুষকে ভূমিকম্পের ভয়াবহতা সম্পর্কে সতর্ক করে আসছেন বিশেষজ্ঞরা। তাঁরা বলেন, টেকটোনিক প্লেটের এই সংঘর্ষে গতকালনেপালের ভয়াবহ ক্ষয়ক্ষতির বিষয়টি অবশ্যম্ভাবী ছিল।
কারণ, সেখানকার ভূমিরগঠনই ভূমিকম্পের এই ঝাঁকিকে আরও বাড়িয়ে দেয়। নেপালে যেভাবে ঘরবাড়ি নির্মাণ করাহয়, তাএই ঝাঁকি থেকে রক্ষার জন্য যথেষ্ট শক্তিশালী নয়।

গতকালের ভূমিকম্পটির উৎপত্তিস্থলের গভীরতা ছিল কম। ভূপৃষ্ঠের মাত্র ১০ থেকে ১৫ কিলোমিটার নিচে ভূমিকম্পটির উৎপত্তি স্থল। এর ফলেই ভূপৃষ্ঠে তীব্র কম্পনের সৃষ্টি হয়েছিল। মূল ভূমিকম্পের পর চারঘণ্টা পর্যন্ত কমপক্ষে ১৪টি কম্পন রেকর্ড করেন গবেষকেরা।
৬ দশমিক৬ মাত্রার একটিসহকম্পনগুলোর মাত্রা ছিল৪ থেকে ৫। পরবর্তী কম্পনগুলোর শক্তি ৩০ গুণকমে গেলেও যেসব ভবন এরই মধ্যে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, সেগুলো পরবর্তী ছোট কম্পনেও ধসে পড়ার জন্য যথেষ্ট।
হিমালয় অঞ্চলের অধিবাসীদের বেশির ভাগই যে ধরনের অবকাঠামোতে বাসকরে, সেগুলো অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। সাধারণত এগুলো দুর্বল ইট ও চুনসুরকি দিয়ে তৈরি।
আগের অভিজ্ঞতা থেকে আরেকটি বড় ধরনের যে উদ্বেগ রয়েছে তাহলো, এখানে ভূমিধসের আশঙ্কা রয়েছে। এ ছাড়া এ পার্বত্য অঞ্চলে এমন অনেক গ্রাম রয়েছে যেগুলো পাহাড়ের ঢালে অবস্থিত। এসব গ্রাম মাটি ও পাথরের নিচে চাপা পড়ে একেবারেই ধ্বংসহয়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে।

জিওহ্যাজার্ডসের প্রতিষ্ঠাতা ও গবেষক ব্রায়ান টাকার বলেন, কাঠমান্ডু ও এর আশপাশের অঞ্চল পুরোনো হ্রদের শুকনো ভূত্বক দিয়ে তৈরি, যার ফলে ক্ষয়ক্ষতি বেশি হতে পারে। এখানকার মাটি খুবই নরম যাভূকম্পনের মাত্রা বাড়িয়ে দেয়। শুধু কাঠমান্ডু নয়; তেহরান, হাইতি, লামা, পেরু, পাদাং, ইন্দোনেশিয়াও একই রকম ঝুঁকিরমুখে রয়েছে। এসব অঞ্চলে টেকটোনিক খাঁজরয়েছে। এখানকার ভবন তৈরির মানএবং ভূমিকম্পের প্রস্তুতিও পর্যাপ্ত নয়।

জিওহ্যাজার্ডস ইন্টারন্যাশনাল নামের যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক একটি বেসরকারি সংস্থার মতে, প্রতি ৭৫ বছর পর পর নেপালসহ ওই অঞ্চলে ভূমিকম্প আঘাত হানছে। ৮১ বছর আগে ১৯৩৪ সালে ৮ দশমিক১ মাত্রার একটি ভূমিকম্পে নেপালের ১০ হাজার মানুষমারা যায়।
এর উৎপত্তিস্থল ছিলএভারেস্ট থেকে ছয় মাইলদক্ষিণে। ১৯৮৮ সালে ৬ দশমিক৮ মাত্রার আরেকটি ভূমিকম্পে এক হাজার মানুষমারা যান।

জিওহ্যাজার্ডসের প্রতিষ্ঠাতা ও সভাপতি ব্রায়ান টাকার বলেন, নব্বইয়ের দশকে তার প্রতিষ্ঠান পূর্বাভাস দিয়েছিল যে ১৯৩৪ সালের মতো ভূমিকম্প যদি আবার ঘটে তবে ৪০ হাজারের বেশি মানুষমারা যাবে। কারণ নেপালের শহরগুলোতে বড় বড় দালানকোঠা উঠছে যা সহজেই ভেঙে যাবে।
চলতি মাসেই জিওহ্যাজার্ডস তাদের তথ্যে জানিয়েছে, নেপালে জনসংখ্যা বৃদ্ধির হারসাড়ে ছয় শতাংশ এবং কাঠমান্ডু অন্যতম বড় শহর হিসেবে গড়ে উঠেছে। শুধুকাঠমান্ডুতেই ১৫ লাখমানুষ বাসকরছে।

এশিয়া অঞ্চলে ভূতত্ত্ব নিয়ে গবেষণা করছেন কলোরাডো বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক রজারবিলহাম। তিনি বলেন, গতকালের ভূমিকম্পএক থেকে দুই মিনিট স্থায়ী ছিল। কাঠমান্ডুর নিচ দিয়ে প্রায় ৭৫ মাইল পর্যন্ত বিস্তৃত চ্যুতির মধ্যে ভূত্বকের এই খাঁজটি প্রায় ১০ ফুট পর্যন্ত সরে গেছে।

এতে পুরো কাঠমান্ডু শহরটিই দক্ষিণ দিকে পায়১০ ফুট সরে যায়।

(তথ্যসূত্র: নিউইয়র্ক টাইমস,সিএনএন,ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস)

"আলোর পথ"-এ প্রকাশিত গল্পসমূহ ও লেখনী মূলত পাঠক, শুভানুধ্যায়ী এবং সম্মানিত অবদানকারীদের কাছ থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে। এই কনটেন্টগুলোর উপর আমরা কোনো মেধাসত্ত্ব (copyright) দাবি করি না। যদি কোনো গল্প, ছবি বা তথ্যের কপিরাইট সংক্রান্ত বিষয়ে আপনার প্রশ্ন, সংশয় বা আপত্তি থাকে, তাহলে অনুগ্রহ করে আমাদের যোগাযোগ পৃষ্ঠায় যোগাযোগ করুন। আমরা যথাযথ আইনানুগ পদ্ধতিতে বিষয়টি পর্যালোচনা করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করব।

দুঃখিত!