কুরআনের খিদমত
পবিত্র কুরআনের খিদমত করা এবং চিরকালের জন্য সুশৃঙ্খলভাবে লিখিত আকারে নকল করে রাখাও একটি ধর্মীয় গুরুত্বপূর্ণ কাজ ছিল। না হয় পরবর্তী আমলে এ নিয়ে সমস্যা সৃষ্টি হওয়ার আশঙ্কা ছিল। কারণ হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) এর আমলে অনেক হাফেজ মৃত্যুবরণ করেছিলেন। এর পর আবার ১২০০ শত কোরআনের হাফেজ ইয়ামামার যুদ্ধেই ইন্তেকাল করলেন। তখন অনেকের কাছেই আংশিকভাবে পবিত্র কুরআন শরীফ লিখিত ছিল।
হযরত আবু বকর (রাঃ) এর আমলে বিশেষত ইয়ামামার যুদ্ধের পর সর্বপ্রথম হযরত ওমর (রাঃ) হযরত আবু বকর (রাঃ) কে পবিত্র কুরআন শরীফ হেফাযত করার জন্য অনুরোধ করলেন। পবিত্র কুরআন শরীফ হেফাযতের দায়িত্ব মহান আল্লাহ্ রাব্বুল আলামীন নিজ দায়িত্ব্বে রেখেছেন বলে ওয়াদা করেছেন। এ জন্য হযরত আবু বকর (রাঃ) বলেছেন, যে কাজ হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) নিজে করলেন না সে কাজ আমি কিভাবে করতে পারি।
কিন্তু দেশের অবস্থা খুব খারাপ দেখে হযরত আবু বকর (রাঃ) এ কাজের দিকে গুরুত্ব প্রয়োজন মনে করলেন। শেষ পর্যন্ত হযরত আবু বকর (রাঃ) পূর্ণ উৎসাহ নিয়ে এ কুরআন শরীফ হেফাযত করতে মনোযোগী হলেন। অতঃপর তিনি কাতেবে ওহী হযরত যায়েদ ইবনে সাবিত আনসারী (রাঃ)-কে এ গুরুত্বপূর্ণ কাজে নিয়োগ করেন এবং হযরত যায়েদ সাবিত আনসারী (রাঃ) পূর্ণ উদ্যেগ নিয়ে এ কাজ করতে আরম্ভ করলেন। বিভিন্ন এলাকা হতে লিখিত অংশসমূহ যোগাড় করে কিতাবের আকার দান করতে আরম্ভ করেন।
আল্লামা ইবনে আজার আসকালানী (রাঃ) ফতহুল বারী কিতাবে কিখেছেন যে, হযরত আবু বকর (রাঃ) এর আদেশে হযরত যায়েদ ইবনে সাবিত (রাঃ) অনেক স্থান এবং অনেক ব্যক্তির সহযোগিতা নিয়ে পবিত্র কুরআনের বিভিন্ন অংশ এক সঙ্গে করে কিতাবে রূপান্তর করেছিলেন। বর্তমান পবিত্র কুরআন মাজীদের যে সব কপি আছে, তা হযরত ওমর (রাঃ)-এর পরামর্শে, হযরত আবু বকর (রাঃ) এর নির্দেশ এবং হযরত যায়েদ ইবনে সাবিত (রাঃ) নিঃস্বার্থ চেষ্টার ফসল। খুবই সাবধানতা অবলম্বন করে এ কিতাব নকল করা হয়।
মসজিদে নববীতে হাফেজগণের সহযোগিতা নিয়ে পবিত্র কুরআন নকল করার কাজ সস্পন্ন করা হত। এ পবিত্র কিতাব পুরাপুরি পূর্ণ হলে হযরত আবু বকর (রাঃ) তা রাষ্ট্রীয় ট্রেজারিতে সংরক্ষণ করলেন। এর পর তা হযরত ওমর (রাঃ) এর হেফাযতে আসে। হযরত উসমান (রাঃ) এর অনেক কপি নকল করে নানান দেশে প্রেরণ করে কুরআনের খেদমত করেন।