বোধিসত্ত্ব একবার কুকুরকুলে জন্ম নেন। স্থান সেই বাণারসী এবং রাজত্ব করছেন ব্রহ্মদত্ত। বোধিসত্ত্ব তখন শ-শ কুকুরে সঙ্গে মহাশ্মশানে থাকতেন। সাজন গোছান রথে চড়ে বাগানে বেরিয়ে রাজা ব্রহ্মদত্ত এক সন্ধায় ফিরে এলন। চামড়া দিয়ে সাজানো রথের সাজগুলো সে রাতে আর খুলে রাখা হল না। সাজ সমেত রখটি উঠানেই পড়ে রইল। রাকে জোর বৃষ্টি হল। তাতে চামড়ার সাজ ভিজে জবজবে হয়ে গেল। তখন রাজার পোষা কুকুরের দঙ্গল দোতলা থেকে নেমে এসে সেগুলো খেয়ে ফেলল। পরের দিন রাজার চাকরেরা রাজাকে বলল, ‘মহারাজ, নর্দমার মুখ দিয়ে বাইরের কুকুর ঢুকে রথের সাজ খেয়ে ফেলেছে।’ শুনে রাজা খুব রেগে গেলেন। হুকুম হলঃ ‘যেখানে যত কুকুর আছে সব মেরে ফের।’ সারা শহরে সঙ্গে সঙ্গে শুরু হয়ে গেল কুকুর হত্যা যজ্ঞ। প্রাণের ভয়ে একদল কুকুর বোধিসত্ত্বের কাছে ছুটে এল। অত কুকুরকে একসঙ্গে দেখে বোধিসত্ত্ব জিজ্ঞেস করলেন,“ তোমরা সাবই মিলে হঠাৎ শ্মশানে এলে কেন?’ তারা বলল, ‘আমাদের বাঁচান। রাজার রথের সাঁজ কুকুর খেয়ে ফেলেছে। রাজা হুকুম দিয়েছেন, কুকুর দেখলেই বধ করা হবে।’ বোধিসত্ত্ব ভেবে দেখলেন, রাজবাড়িতে ঢুকে বাইরের কুকুরের পক্ষে এ কাজ করা স হজ নয়। রাজার পোষা কুকুরই এর হোতা। মজা হল, দোষ করেও তারা নিরাপদে আছে। আর যারা কোন দোষ করেনি তারা মারা যাচ্ছে। আমার উচিত রাজাকে দেখিয়ে দেওয়া কে দোষী। এতে আমার জাতভাইদের প্রাণ বাঁচবে। তখন আর সব কুকুরকে ডেকে নিয়ে তিনি বললেন, “তোমাদের ভয় নেই। আমি তোমাদের বাঁচাবার রাস্তা খুঁজে বের করব। তবে আমি যতক্ষণ পর্যন্ত না রাজার সঙ্গে দেখা করে ফিরে আসছি ততক্ষণ তোমরা এখানে অপেক্ষা করবে।’ তারপর বোধিসত্ত্ব ইষ্টদেবতার নাম স্মরণ নিলেন। মনে মনে এই ইচ্ছা প্রকাশ করলেন, ‘রাস্তায় কেউ যেন আমাকে লাঠি বা ঢিল দিয়ে না মারে।’ ফলে তাঁকে দেখে কারো রাগ দেখা দিল না। রাজা তখন বিচারালয়ে। বোধিসত্ত্ব সেখানে ঢুকেই এক লাফে রাজার আসনের তলায় লুটিয়ে পড়লেন। রাজার চাকরেরা তাঁকে তাড়া করল। কিন্তু রাজা তাদের বাধা দিলেন। ভরসা পেয়ে বোধিসত্ত্ব রাজার আসনের তলা থেকে বেরিয়ে এলেন। রাজাকে নমস্কার করে জিজ্ঞেস করলেন, ‘মহারাজ, আপনি কি কুকুর মেরে ফেলার আদেশ দিয়েছেন?’ হ্যাঁ। কুকুররা কি অপরাধ করেছে রাজা? তারা আমার রথের চামড়ার সাজ খেয়ে ফেলেছে। কোন কুকুর খেয়েছে জানেন কি? না, তা জানি না। সত্যিকারের অপরাধীকে না চিনে সব কুকুর মারা এই আদেশ দেওয়া কি ঠিক হয়েছে? কুকুর রথের চামড়া খেয়েছে, তাই সব কুকুরকেই মারা হবে। আপনার লোক কি সব কুকুরকে মারছে, না কি কোন কোন কুকুরকে মারছে না? রাজবাড়িতে ভালো বংশের যেসব কুকুর আছে তাদের মারা হচ্ছে না। তাহলে তো সব কুকুরকে মারা হচ্ছে না। রাজবাড়ির কুকুরেরা রেহাই পাচ্ছে। এটা কি সুবিচারের নমুনা> বিচার হবে দাঁড়িপাল্লার মত সমান সমান। বেশ তো, কুকুর দলপতি, আপনিই বলুন না কে রথের চামড়া খেয়েছে? রাজবাড়ির কুকুর মহারাজ। প্রমাণ কি? আপনি রাজবাড়ির কুকুরদের এখানে আনান। আমাকে একটু ঘোল আর কুশ দিন। এরপর বোধিসত্ত্ব ঘোলের সঙ্গে কুশ রাজবাড়ির কুকুদের খাওয়ালেন। তখন তারা বমি করে ফেলল। আর বমির সঙ্গে সঙ্গে চামড়ার টুকরো উঠে এল। সব দেখে শুনে রাজা খুবই প্রীত হলেন। তিনি বললেন, ‘বাহ্, এ বেশ ভালো ব্যবস্থা।’ তারপর নিজের শ্বেতছত্র দিয়ে বোধিসত্ত্বের পূজা করলেন। বোধিসত্ত্বও রাজাকে অনেক ধর্মকথা শোনালেন।
এই জাতকের মূল কথা: স্বজাতির মঙ্গল সাধনই জীবের ধর্ম.