*কুকুরের লেয়াজ সোজা হয় না*

অনেক দিন আগের কথা। এক গ্রামে বাস করত এক গরিব কিন্তু সৎ ব্রাহ্মণ। সে প্রতিদিন নিষ্ঠাভরে পূজা করত। একদিন, তার ভক্তিতে সন্তুষ্ট হয়ে এক মুনিবর তার সামনে উপস্থিত হলেন এবং বললেন,

— “তোমার পূজায় আমি খুশি হয়েছি। বলো, তুমি কী চাও?”

ব্রাহ্মণ বিনয়ের সঙ্গে বলল,

— “আমি ধনী হতে চাই, মহারাজ।”

মুনিবর বললেন,

— “তাই হবে!”

এই বলে তিনি এক রাক্ষসকে ডাকলেন এবং আদেশ দিলেন,

— “এখন থেকে এই ব্রাহ্মণ তোমার মালিক। তার সমস্ত কথা তোমাকে শুনতে হবে।”

এই বলে মুনিবর অদৃশ্য হয়ে গেলেন।

রাক্ষসের শর্ত

রাক্ষস ব্রাহ্মণের সামনে এসে বলল,

— “হুজুর, এখন থেকে আমি আপনার দাস। আপনি যে কাজ বলবেন, আমি সঙ্গে সঙ্গে করে দেবো। তবে মনে রাখবেন, যদি আপনি আমাকে ব্যস্ত রাখতে না পারেন, তাহলে আমি আপনাকে খেয়ে ফেলব!”

ব্রাহ্মণ ভয় পেলেও বুদ্ধি খাটিয়ে বলল,

— “তাহলে যাও, আমার জন্য ভালো খাবার নিয়ে এসো।”

রাক্ষস চোখের পলকে খাবার এনে হাজির করল,

— “হুজুর, এবার কাজ দিন!”

— “ওই পাহাড়ের ওপরে একটি সুন্দর নগর তৈরি করো।”

রাক্ষস মুহূর্তেই এক বিশাল নগর বানিয়ে দিল।

— “এবার ওখানে লোক বসতি করে দাও এবং আমার জন্য একটি রাজপ্রাসাদ তৈরি করো।”

রাক্ষস কাজ শেষ করল,

— “হুজুর, এবার কাজ দিন!”

ব্রাহ্মণ যত কাজ বলছে, রাক্ষস তত দ্রুত করে ফেলছে। ব্রাহ্মণ বুঝতে পারল, এভাবে বেশি দিন চালানো যাবে না!

ব্রাহ্মণের বিপদ ও বুদ্ধি

ব্রাহ্মণ এবার নিজের পরিবারকে রাজপ্রাসাদে নিয়ে এল, পোশাক আনাল, শহরের সকলকে খাওয়াল। কিন্তু তবুও রাক্ষস বিরক্ত করে বলছে,

— “হুজুর, এবার কাজ দিন! না হলে আপনাকে খেয়ে ফেলব!”

ব্রাহ্মণ ভীষণ দুশ্চিন্তায় পড়ে গেল। তখন তার মনে পড়ল মুনিবরের কথা। সে রাক্ষসকে আদেশ দিল,

— “আমাকে মুনিবরের কাছে নিয়ে চলো।”

রাক্ষস সঙ্গে সঙ্গে নিয়ে গেল।

ব্রাহ্মণ মুনিবরের কাছে গিয়ে কাঁদতে লাগল,

— “মহারাজ, আপনি যে রাক্ষসকে দিয়েছিলেন, সে তো আমাকে শান্তিতে থাকতে দিচ্ছে না! আমি তার হাত থেকে মুক্তি চাই।”

মুনিবর একটু হেসে বললেন,

— “ঠিক আছে। বাইরে যে কুকুরটি দেখছো, ওটাকে নিয়ে যাও এবং রাক্ষসকে বলো, কুকুরের লেজ সোজা করে দাও।”

ব্রাহ্মণ কিছুটা অবাক হলেও কুকুরটি নিয়ে ফিরে এল।

— “এই রাক্ষস, যাও, কুকুরটার লেজ সোজা করো!”

রাক্ষস চেষ্টা করল, কিন্তু যতবারই লেজ সোজা করে, লেজ আবার বেঁকে যায়! সে বারবার চেষ্টা করেও সফল হতে পারল না।

— “হুজুর, আমি এই কাজ পারছি না। আপনি আমাকে যে শাস্তি দেবেন, আমি তা মাথা পেতে নেবো।”

ব্রাহ্মণ হেসে বলল,

— “তাহলে আমার একটাই শাস্তি— তুমি যেখানে ছিলে, সেখানে ফিরে যাও এবং আমাকে আর বিরক্ত করো না!”

রাক্ষস চুপচাপ ফিরে গেল।

পরিণতি

এভাবে ব্রাহ্মণ তার বুদ্ধির জোরে রাক্ষসের হাত থেকে মুক্তি পেল এবং সুখে-শান্তিতে তার রাজ্য শাসন করতে লাগল।

শিক্ষা: বুদ্ধি দিয়ে যে কোনো কঠিন সমস্যার সমাধান করা যায়!

শাঙ্গুল ও মাঙ্গুল

কাকের প্রতিশোধ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *