কিসমতের বিচার–হুমায়ুন কবীর ঢালী-শেষ পর্ব

গল্পের ১ম অংশ পড়তে এখানে ক্লিক করুন।

এই ব্যাটা ভুল হবে কেন? তুই একলাই কুত্তা পালছ নাকি? আমি পালি না? আমার বাড়ির কুত্তা কোনোদিন তোদের বাড়িতে ঢুকছে নাকি?
জ্বী ঢুকেছে কয়েকদিন। কিসমতের সরল জবাব।
চোওওওপ। মুখে মুখে তর্ক করিস। শহরে আইসা চালাক হইয়া গেছ?
কিসমত খুঁজে পায় না, কখন সে মুখে মুখে তর্ক করল। মনে হয়, বড়লোকদের সাথে কথা বলা মানেই মুখে মুখে তর্ক। তাই চুপ থাকাই ভালো মনে করল কিসমত।
চুপচাপ জলি ম্যাডামের বাড়িতে ঢুকে সুন্দরকে গেটের বাইরে নিয়ে আসে সে। সুন্দর বাইরে বেরিয়েই ঘটিয়ে দেয় আরেক কাণ্ড। ম্যাডামের সামনে গিয়ে উচ্চৈস্বরে ঘেউ করে তাকে তিরস্কার করে। ম্যাডাম ভয়ে কিছুটা দূরে সরে যায়। দূরে গিয়ে ফের কিসমতকে গালাগাল দিতে থাকে।
এই ব্যাটা ফাজিল, তোর কুকুর এখান থেকে নিবি নাকি তোর মালিকের কাছে বিচার দেব?
ম্যাডামের কাছে কিসমত এখন একজন আসামী। তাই কিসমত যা বলবে তাই অপরাধ হিসেবে বিবেচিত হবে। তারচে বরং চুপ থাকা ছাড়া কোনো গতন্ত্যর নেই মনে করে সুন্দরকে নিয়ে সে চুপচাপ দাড়িয়ে থাকে।
এদিকে ম্যাডাম বকবক করেই যাচ্ছে। কিসমত শুনেও না শোনার ভান করে। ম্যাডাম কিছুক্ষণ বকবক করে কোনো জবাব না পেয়ে নিজ বাড়ির গেটে মাথা ঢুকায়।
মনে মনে হাসে কিসমত। হাসতে হাসতে সুন্দর আর বাদশাকে নিয়ে প্রতিদিনের মতো ঘুরতে বেরিয়ে যায়।

চার.
ভালোয় ভালোয় বিকালের ভ্রমণ শেষে দুই গৃহপালিত কুকুর নিয়ে বাসায় ফিরে আসে কিসমত। কিন্তু তাকে নিয়ে ঝামেলার শুরু বাসায় ফিরে আসার পর। অবশ্য গেট দিয়ে ঢুকে পাশের বাসার ম্যাডামকে দেখেই কিসমত বুঝতে পেরেছিল যে কিছু একটা ঝামেলা তার জন্য অপেক্ষা করছে। তাই হলো। গেট দিয়ে ঢুকতে না ঢুকতে তার মালিক ম্যাডাম তাকে ডাকল। সুন্দর আর বাদশাকে যার যার ঘরে রেখে ম্যাডামের কাছে এগিয়ে গেল কিসমত।
কাছে আসতেই মালিক ম্যাডাম তাকে বলল, কিসমত মিয়া?
জ্বি ম্যাডাম।
তুমি নাকি জলি আপার সাথে বেয়াদবি করেছ?
কিসমত কী জবাব দেবে বুঝে ওঠতে পারল না। কথা বলতে গিয়ে আবার কী ভুল হয়ে যায় কে জানে! যদিও তার বলতে ইচ্ছে করছে যে, ম্যাডাম আমি কোনো বেয়াদবি করি নাই। যদি কোনো বেয়াদবি করে থাকে সে আপনের সুন্দর; আর বাকি বেয়াদবি করেছে আপনের জলি আপা। কিন্তু প্রকাশ্যে মুখের উপর ম্যাডামকে এ কথা বলার সাহস তার নাই। সে জানে গরীব হলে যেমন পদে পদে ভুল তেমন বিপদ। তারচে চুপ থাকাই ভালো।
কিসমতের চুপ থাকার সুযোগটি কাজে লাগাল জলি ম্যাডাম।

সে মালিক ম্যাডামকে উসকানি দিয়ে ক্ষ্যাপাতে চেষ্টা করল। সে বলল, দ্যাখেন আপা কেমন বেয়াদপ ফাজিল, আপনের কথার জবাব দেয় না।
জলি ম্যাডাম সফল হয়। কিসমতের ওপর ক্ষেপে যায় তার মালিক ম্যাডাম।

এই বেয়াদব কোথাকার।

কথা বলছিস না কেন?–ছোটলোকের বাচ্চাদের নিয়ে এই এক ঝামেলা জলি আপা। গ্রাম থেকে এসে ভাত-কাপড় পেয়েই চালাক আর বেয়াদব হয়ে যায়। এখন মন চাচ্ছে এক থাপ্পর দিয়ে ওকে বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দেই।
মালিক ম্যাডামের কথায় খুব আহত হল কিসমত।

এখানে চাকরি করার পর মালিক ম্যাডাম সম্পর্কে যে ধারণা ও শ্রদ্ধা ছিল তা মুহূর্তে উধাও হয়ে গেল তার মন থেকে। এখানে চাকরি করার পর সে কখনো ম্যাডামের কাছ থেকে কটু কথা যেমন শুনেনি, দেখেনি কোনো খারাপ ব্যবহার। অথচ আজ ম্যাডামের যে কী হলো! আসলে বড়লোকদের চরিত্র বোধহয় একই হয়।

কারোটা তাড়াতাড়ি ধরা যায়, কারোটা ধরা পড়ে একটু দেরিতে। সুন্দর আর বাদশার কোনো দোষ না ধরে শুধু শুধু তাকে অপমান করছে। বিনা কারণে সে অপমান সহ্য করবে? দুমুঠো ভাতের জন্য? এমন ভাত না খেলেই কি নয়? দরকার হয় গ্রামে গিয়ে না খেয়ে মরে যাবে সে।

তবু বিনা কারণে বড়লোকদের অপমান সহ্য করবে না।
কিসমতকে চুপ থাকতে দেখে ম্যাডাম ফের বলল, এই বজ্জাত, কথা বলিস না ক্যান? যা এখনই জলি আপার পায়ে ধরে মাফ চা আর দশবার কানে ধরে উঠবস কর, নয়ত এখুনি তোকে চাকরি থেকে বরখাস্ত করে দেব।
কিসমত আরেকবার আহত হল ম্যাডামের কথা শুনে।

না, এখানে চাকরি করে সে বারবার আহত হতে চায় না। তাই দুই ম্যাডামকে অবাক ও বোকা বানিয়ে কিসমত বলল, না আমি মাফ চামু না, কানে ধরে উঠবসও করব না।

আমি কোনো অন্যায় করি নাই। আমাকে বরখাস্ত করনেরও দরকার নাই। আমিই নিজ থাইকা আপনের চাকরি ছাইড়া দিলাম। আপনের কুকুর নিয়া আপনেই থাকেন। আমি গেলাম।

খোদা হাফেজ।
দুই ম্যাডাম কী বলবে কিছুই বুঝে ওঠতে পারল না। তার আগেই কিসমত গেট দিয়ে বেরিয়ে গেল।

সমাপ্ত

গল্পের ১ম অংশ পড়তে এখানে ক্লিক করুন।

সম্পর্কিত পোস্ট

দুঃখিত!