কিসমতের বিচার–হুমায়ুন কবীর ঢালী-১ম পর্ব

গল্পের শেষ পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক করুন।

এক.
দেখতে খুব সুন্দর সোনালী এক কুকুরছানা। যে একবার দেখেছে সেই সুন্দর বলে স্বীকৃতি দিয়েছে। সবাই সুন্দর বলতে বলতে তার আসল নামটাই ঢাকা পড়ে গেছে। কুকুরছানার নাম হয়ে গেছে সুন্দর। পাড়ায় যারা নতুন, তারা অবশ্য সুন্দরের নাম শুনে অবাক হয়। সুন্দর কারও নাম হতে পারে? তাও আবার কুকুরছানার?

নামে সুন্দর হলেও কাজেকর্মে কতটা সুন্দর তা নিয়ে বিতর্ক রয়েছে বেশ। বিতর্কের কিছু কারণও রয়েছে। যেমন কুকুরছানার পছন্দ কারণে-অকারণে মাটি খোঁড়া, শিশুদের পেছনে ছুটে চলা, এমনকি তাড়া করা এবং হাঁস-মুরগি দেখলে ছোঁ মারা।
সুন্দরের আছে এক বন্ধু। নাম বাদশা। তারই বয়েসী। অবসর সময়ে বাদশার সাথে খেলা করাও তার পছন্দের আরেকটি বিষয়। সুন্দর আর বাদশা দুজনই গৃহপালিত প্রাণী হয়ে বাস করছে পাড়ার ধনাঢ্য ব্যবসায়ী আবদুল মান্নান সাহেবের বাড়িতে। মান্নান সাহেবের ছোট ছেলে পবন সুন্দরকে তার এক বন্ধুর কাছ থেকে এবং বাদশাকে কাঁটাবনের এক দোকান থেকে কিনে এনেছে।

সুন্দর আর বাদশার সেবা-যত্নের জন্য নিয়োগ দেয়া হয়েছে কিসমতকে। কিসমতের কাজ হচ্ছে প্রতিদিন ভোরে সুন্দর আর বাদশাকে ঘুম থেকে ডেকে তোলা, তাদের নাস্তা দেওয়া। নাস্তা শেষে বাগানে ওদের নিয়ে বেড়ানো। দুপুরে, যখন ঘড়ির কাঁটা ঠিক একটার ঘরে যাবে, তখন বাদশা ও সুন্দরকে গোসল করানো এবং প্রতিদিন লেকের পাড়ে কিংবা মাঠে ঘুরতে নিয়ে যাওয়া।

কিসমত গাঁও-গেরামের মানুষ। এসব অভিজাত দামি কুকুরছানাকে কীভাবে লালন-পালন কিংবা সেবা-যত্ন করতে হয় সে জানত না। তাই প্রথম প্রথম একটু সমস্যাই হয়েছে বলা যায়।
এখন আর কোনো সমস্যা হয় না।

 

দুই.
প্রতিদিন সুন্দর আর বাদশাকে যথাযথ সেবা-যত্ন করে যাচ্ছে কিসমত। তার সেবাযত্নে সুন্দর আর বাদশা দিনেদিনে অনেক বড় হয়েছে। এ-কদিনে কিসমতের সাথে ওদের বেশ ভাব জমে গেছে। বলা যায়, ওরা কিসমতের একপ্রকার অনুগত হয়ে গেছে। তবে কিসমত যা বলে তা বাদশা পুরোপুরি মানলেও সুন্দরকে প্রায়ই অবাধ্য হতে দেখা যায়। অর্থাৎ এখনও ছোটবেলার স্বভাব পুরোটাই বহন করে চলেছে সুন্দর।

সুন্দরকে কিসমত যদি বলে দৌড় দাও, সুন্দর হাঁটতে থাকে। শিশুদের পেছনে ছুটতে বারণ করে কিসমত যদি বলে, সুন্দর নট মুভ। সুন্দর তা না শুনে শুরু করে লেটস মুভ। অনেকটা ব্যাকরণের বিপরীত শব্দ সাজানোর মতো। মাটি খুঁড়তে নিষেধ করলে খোঁড়ার জন্য আরও বেশি ব্যস্ত হয়ে ওঠে।
এই নিয়ে কিসমত আছে মহাবিপদে। আশেপাশের লোকজন কিসমতকে বকাঝকা করে, ধমক দেয়। লোকজনের বকাঝকা নিয়ে কিসমতের মন খারাপ। কিসমত বুঝতে পারে না, কুকুরের অন্যায়ের জন্য সে কেন বকাঝকা আর ধমক খাবে।

তিন.
আজ দুপুরে আরও বড়রকমের একটা ঝামেলা হয়ে গেছে পাশের বাড়ির জলি ম্যাডামের সাথে। ম্যাডাম তাকে রীতিমতো দু’চারটা চড়-থাপ্পরও দিয়েছে। কিসমতের অপরাধ সুন্দর তার পেছনে পেছনে ছুটে গিয়েছে।

জলি ম্যাডাম কোত্থেকে এসে মাত্র গাড়ি থেকে নেমেছে, আর অমনি সুন্দর তার হাত থেকে ছুটে গিয়ে ম্যাডামের পেছনে পেছনে তার বাড়িতে ঢুকে গেছে। আর যায় কোথায় কিসমত। ম্যাডাম গেটের বাইরে ফিরে এসে সুন্দরের চেয়েও ভয়ানক ভঙ্গি ধারণ করে, বিচিত্র সাধু-কথ্য-চলতি ভাষায় কিসমতকে আক্রমণ করে বসল।

ওই ব্যাটা গাঁইয়ার বাচ্চা, দেখিস না তোর কুত্তার বাচ্চা কুত্তা আমার পেছনে পেছনে বাড়িতে ঢুইকা পড়ছে। তোগো বদমাশ কুত্তা ক্যান আমাদের বাড়িতে ঢুকবে? ছোটোলোকের জাত, ইতরের ছাও, অসভ্য-জানোয়ার–একটা থাপ্পর দিয়া সব কয়টা দাঁত ফেইলা দেব।

ম্যাডামের বিরতিহীন গালাগাল আর রুদ্রমূর্তিতে কিসমতের ভেতরটা যেমন শুকিয়ে কাঠ হয়ে গেল, তেমন সে ভয়ও পেল। ভয়ে ভয়ে আর অনুনয়ের সাথে ক্ষমা চাইল জলি ম্যাডামের কাছে।
ম্যাডাম, আমার ভুল হইয়া গেছে। এইবারের মতো মাফ কইরা দেন?
কিন্তু তার অনুনয়ে কোনো কাজ হয়নি। জলি ম্যাডাম ধারাবাহিকভাবে অগ্নিমূর্তি রূপ ধারণ করে কিসমতের উপর ঝাঁপিয়ে পড়েছে। কিসমতকে চড়থাপ্পর দিতে শুরু করেছে।

গল্পের শেষ পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক করুন।

সম্পর্কিত পোস্ট

দুঃখিত!