কিন্দাহ গোত্রকে দাওয়াত প্রদান
হযরত ইবনে রোমান ও হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আবি বকর (রাঃ) বলেন, উকাযের মেলায় রাসূল (সাঃ) কিন্দার লোকদের নিকট গমন করিলেন। তিনি তাহাদের ন্যায় নম্র স্বভাবের আর কোন আরবগোত্র ইতিপূর্বে পান নাই। তিনি তাহাদের নম্র ও সহাস্য ব্যবহার দেখিয়া তাহাদের সহিত কথা বলিতে লাগিলেন। তিনি বলিলেন, আমি তোমাদিগকে এক আল্লাহর প্রতি দাওয়াত দিতেছি যাহার কোন শরীক নাই এবং এই আহবান করিতেছি যে, তোমরা যেরূপ নিজেদের হেফাযত করিয়া থাক সেইরূপ আমার হেফাযত কর। অতঃপর যদি আমি জয়লাভ করি তবে তোমাদের পূর্ণ এখতিয়ার থাকিবে (আমার পক্ষ হইতে তোমাদের প্রতি কোন জবরদস্তি করা হইবে না।) গোত্রের অধিকাংশ লোক বলিল, কতই না সুন্দর কথা!
তবে আমরা আমাদের বাপ-দাদার মাবুদদেরই পূজা করিব। তাহাদের মধ্যে সর্বকনিষ্ঠ ব্যক্তি বলিল, হে আমার কওম, অন্যরা অগ্রগামী হইবার পূর্বে তোমরা এই ব্যক্তির প্রতি অগ্রগামী হও। খোদার কসম, আহলে কিতাবগণ বলিয়া থাকে যে, হারাম শরীফ হইতে একজন নবী আবির্ভূত হইবেন এবং তাঁহার আবির্ভাবের সময় ঘনাইয়া আসিয়াছে। কওমের মধ্যে এক চক্ষু বিশিষ্ট একজন কানা লোক ছিল। সে বলিল, আস, আমার কথা শুন, যাহাকে তাহার কওম বাহির করিয়া দিয়াছি, তোমরা তাহাকে আশ্রয় দিবে? তোমরা কি সমগ্র আরবের সহিত যুদ্ধের ঝুঁকি লইতে চাও? না এমন কাজ করিতে যাইওনা।
রাসূল (সাঃ) অত্যন্ত বিষণ্ণ মনে ফিরিয়া আসিলেন। কিন্দার লোকেরাও দেশে ফিরিয়া গেল। দেশে যাইয়া তাহারা কওমের অন্যান্য লোকদের সহিত এই ব্যাপারে আলাপ আলোচনা করিল। এক ইহুদী শুনিয়া বলিল, তোমরা এক সুবর্ণ সুযোগ হারাইয়াছ। তোমরা যদি সর্বাগ্রে তাহার কথা মানিয়া লইতে তবে আরবের নেতৃত্ব লাভ করিতে। আমরা আমাদের ধর্মীয় কিতাবে তাঁহার দেহাবয়ব ও গুনাগুণ সম্পর্কে বর্ণনা পাই। তারপর সেই ইহুদী ক্তাব হইতে রাসূল (সাঃ)-এর দেহাবয়ব ও গুনাগুণ পড়িয়া শুনাইতে লাগিল এবং যাহারা তাঁহাকে দেখিয়াছে তাহারা কিতাবের বর্ণনার সহিত রাসূল (সাঃ)-এর হুবহু মিল রহিয়াছে বলিয়া স্বীকার করিল। অতঃপর ইহুদী বলিল, আমরা আমাদের কিতাবে ইহাও পাই যে, তিনি মক্কায় আবির্ভূত হইবেন এবং ইসলামের অর্থাৎ মদীনায় হিজরত করিবেন। এই সকল কথা শুনিয়া তাহারা একমত হইল যে, আগামী হজ্জের মৌসুমে তাঁহার সহিত সাক্ষাৎ করিবে। কিন্তু তাহাদের এক সর্দার তাহাদিগকে সেই বৎসর হজ্জে যাইতে নিষেধ করিয়া দিল। অতএব তাহাদের কেহই আর সাক্ষাৎ করিতে পারিলে না। উক্ত ইহুদী মারা গেল। মৃতুর সময় তাহাকে লোকেরা হযরত মুহাম্মাদ (সাঃ)-কে সত্য বলিয়া স্বীকার করিতে এবং তাঁহার উপর ঈমান আনিতে শুনিল। (আবু নুআঈম)