কিছু না কিছু না-শেষ পর্ব

গল্পের ১ম অংশ পড়তে এখানে ক্লিক করুন।

এসব নিয়ে বণিক যখন ওয়ালি দাদের কাছে হাজির হলো, ওস্তাদ তখন ঘরের উঠোনে বসে বাটালি দিয়ে কাঠ চেঁছে সমান করছিল | লটবহর সমেত বণিককে দেখে সে কেঁদেই ফেলল |

‘আমার কপাল পুড়েছে! কবে যে এইসব অনাসৃষ্টি কান্ড বন্ধ হবে!’ তারপর বণিককে ডেকে বলল –

‘তুমি বরং দুটো পছন্দসই জানোয়ার নিজের জন্য রেখে বাদবাকি জিনিসপত্র খাইস্তানের রাজকন্যের কাছে দিয়ে এস’ |

‘অসম্ভব!’ – ঝাঁঝিয়ে উঠলো বণিক, ‘আমি পারব না’| আগের বার রাজকন্যে আমাকে বলেছিলেন তোমাকে উপহার পাঠাতে নিষেধ করতে! এবার আর আমায় দিয়ে হবে না!’

শেষ পর্যন্ত ওয়ালি দাদের কাকুতি-মিনতিতে নিমরাজি হয়েছিল বণিক | আর এইসব লটবহর যখন খাইস্তানে পৌঁছল রাজকন্যের মাথা ঘুরে গেল! আর এবার বুদ্ধিদাতারা তার কানের কাছে মুখ এনে ফিসফিসিয়ে বলল –

‘বুঝতে পারছেন না? লোকটা নিশ্চয়ই আপনার প্রেমে পাগল হয়ে গেছে, আপনাকে বিয়ে করতে চায়!’

সেই থেকে রাজকন্যার মন ছটফট করতে লাগলো ‘মহান’ ওয়ালি দাদকে এক পলক দেখবার জন্য | একদিন মস্ত এক রেশমে মুখ ঢেকে চুপকে চুপকে বেরিয়ে পড়ল রাজকন্যা, সঙ্গে শুধু এক পেয়ারের বাঁদী | খুঁজতে খুঁজতে ওরা পৌঁছে গেল ‘মহল’ ওয়ালি দাদের সেই টুটাফাটা ছোটমোট মকান থুড়ি মহান কুঁড়েঘরটির সামনে | আর সেখানকার হল হকিকত দেখে রাজকন্যে কেমন যেন ঘাবড়ে গেল | ঠিক সেই সময়ে এক অশ্বারোহী রাজকীয় যুবক এগিয়ে এলেন তার দিকে | কেমন যেন একটা উল্টোপাল্টা হওয়া বইতে শুরু করলো তার সঙ্গে সঙ্গে | একশোটা পদ্মফুল যেন ফুটে উঠলো একসাথে! একশোটা বাঁশিতে যেন মিঠে সুর বাজল! আসলে প্রথমবার চোখে চোখ রেখেই সুন্দরী রাজকন্যে নিজের কলিজার থেকেও বেশি ভালোবেসে ফেলেছে সেই খুবসুরত নওজোয়ানকে, যার আসল পরিচয়টি হলো সে নেকবাদের মহীয়ান সম্রাট! এবং যে কিনা খাইস্তানের রাজকন্যের মতই কোনো একজন রহস্যময় ওয়ালি দাদকে চর্মচক্ষে একবার দেখবে বলে খুঁজতে খুঁজতে ঘোড়া ছুটিয়ে এতদূর এসে হাজির হয়েছে! এদিকে সম্রাটের মনের অবস্থাও তথৈবচ, ঠিক রাজকন্যের দিলের মতো | ফলে পরের কয়েকটা মাস নেকবাদের সম্রাট আর খাইস্তানের রাজ্কন্যেকে একসঙ্গে দেখা যেতে লাগলো ফুলের বাগিচায়, নদীর কিনারে, দিনের আলোয়-রাতের অন্ধকারে-বিকেলে-ভরদুপুরে-পানশালায়-বাজারে-সূর্য ওঠার আগে-গোধুলির আলোয়-ঘোরার পিঠে-নৌকার খোলে | দু’জনের ওপর যেন জিন ভর করেছে বা বাজ পড়েছে! ওদের এই জিনে-পাওয়া দশাটা আরো অনেকদিন চলতেই থাকত যদি না ঘোষক এসে গ্রামে ঢ্যাঁড়া পিটিয়ে জানিয়ে যেত যে, শোনো শোনো শোনো সামনের অমুক মাসের অমুক তিথিতে খাইস্তানের রাজকন্যে আর নেকবাদের সম্রাট শুভ পরিনয়ে আবদ্ধ হতে চলেছেন | প্রজারা হইচই মাচিয়ে দিল!

এদিকে বেচারি ওয়ালি দাদ জানতই না যে ততদিনে তার নাম দেশে দেশে সবার মুখে মুখে ঘুরতে শুরু করেছে | বরং রাজকন্যে আর সম্রাট দু’জনেই তাকে নিজের নিজের প্রাসাদে বারবার নেমন্তন্ন করা স্বত্তেও সে যায়নি | কিন্তু তার টনকটা সেদিন নড়ল যেদিন সেপাইরা রাজকীয় বিয়ের উপঢৌকন হিসেবে ওয়ালি ওস্তাদের মকানের সামনে হাজির করলো একটা ছোটখাটো সোনার পাহাড় | ওয়ালি দাদ ব্যাপারটা দেখল খুব উত্সাহের সঙ্গে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে, আর তারপর কুড়ুলটা হাতে নিয়ে মকান থেকে ফটাফট বেরিয়ে গেল | আর কোনদিন কেউ তাকে দেখেনি |

[‘ও কেয়া দেখা, জিসনে লাহোর নহি দেখা!’ এ হলো সেই পাঞ্জাবের গল্প যার রাজধানী লাহোর | লাহোর বিখ্যাত তার উদারতার জন্য | তবে এ গল্প লাহোর থেকে অনেক দূরের দেদার হরিয়ালি আর শুনশান জঙ্গলের গন্ধ মাখা | পাঞ্জাবের জল-ঘাস-মাটির ওপর দিয়ে সোজা সুফী উদার হাওয়া খেলে ভালো | আর এ গল্পের বয়স সম্ভবত ইসলামের থেকেও বেশি

গল্পের ১ম অংশ পড়তে এখানে ক্লিক করুন।

দুঃখিত!