
উত্তরা হতে বসুন্ধরা যাবার পথে একটা রেলক্রসিং পড়ে। অনেকেই গভীর রাতে সেখানে ৩ টা মেয়েকে রাস্তা পার হতে দেখেছে। একজন নাকি তাদের উপর দিয়ে গাড়িও উঠিয়ে দিয়েছিল। কিন্তু সে যখন গাড়ি থেকে বের হলো, ৩ টা মেয়ের নামগন্ধও ছিল না সেখানে। এক্সিডেন্ট তো দূরের কথা!
এতো গেল উত্তরার বিষয়। ঢাকা থেকে ময়মনসিংহ যাওয়ার পথেও নাকি কেউ কেউ রাতের বেলা একটা মানুষের মতো প্রাণীকে রাস্তা পার হতে দেখেছে হেডলাইটের আলোয়। মানুষের মতো প্রাণী বলার কারণ, যে জিনিসটা রাস্তা পার হয়, তার শরীর মানুষেরই মতো, লুঙ্গি আর পাঞ্জাবী পরা, কিন্তু মাথাটা হলো ছাগলের!!
নারায়ণগঞ্জে একটা শ্মশানঘাট আছে। তার সাথেই একটা মুসলিম কবরস্থান। আজ থেকে ২০-২৫ বছর আগে যারা এই এরিয়া দিয়ে রাতের বেলা গাড়ি নিয়ে যেত, তারা অনেকেই দেখত যে, তাদের গাড়ির পাশাপাশি ন্যাড়া মাথার একটা লোক দৌড়ে সাথে সাথে যাচ্ছে! গাড়ির স্পিড যতই বাড়ানো হতো না কেন, লোকটার দৌড়ানোর স্পিড গাড়ির স্পিডের সমান থাকত! সবচেয়ে ভয়াবহ ব্যাপার ছিল, লোকটা দৌড়ানোর সময় গাড়ির ড্রাইভারের দিকে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকত!!
মিরপুরে মাজারের পাশ দিয়ে একবার ৬ জন ইয়াং ছেলে-মেয়ে ফুল ভলিউমে গান বাজিয়ে হৈচৈ করতে করতে গাড়ি নিয়ে যাচ্ছিল। হঠাৎ গাড়িটার এক্সিডেন্ট হয়। ঘটনাস্থলে একজন মারা যায়। অন্যরা গুরুতর আহত হয়। পরে তাদেরকে জিজ্ঞেস করলে জানা যায় যে, তাদের গাড়িটা হঠাৎ একটা লোকের সাথে ধাক্কা খায়। লোকটা ছিল অনেকটা দরবেশের মতো। লম্বা দাড়ি-চুল, মাথায় পাগড়ি। হয়তো মাজারের সামনে দিয়ে এভাবে গাড়ি নিয়ে যাওয়াটা উনার পছন্দ হয়নি!!
গজারির বনের পাশ দিয়ে রাতের বেলা যাওয়ার সময় বনের পাশের রাস্তায় একটা মেয়েকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায়। বিয়ের শাড়ি পরা থাকে মেয়েটি। যারাই মেয়েটিকে দেখেছে, তাদের গাড়িতেই এসময়ে কোনো না কোনো সমস্যা দেখা দিয়েছে। বলা হয়ে থাকে, মেয়েটা নাকি বিয়ের আসর থেকে পালিয়ে তার প্রেমিকের জন্য এই জায়গাতে অপেক্ষা করছিলো। মেয়েটার সাথে ছিল টাকা আর সোনার অলংকার। তার প্রেমিক তাকে জবাই করে গজারির বনে ফেলে রেখে টাকা আর গয়না নিয়ে পালিয়ে যায়। মেয়েটার ছিন্নবিচ্ছিন্ন, জানোয়ার-খাওয়া লাশ কিছুদিন পর বনের ভিতর থেকে উদ্ধার করা হয়। মেয়েটি কি তবে প্রতিশোধ নিতেই তার প্রেমিকের জন্য অপেক্ষা করে রাস্তার পাশে?!
উত্তরার কথায় ফিরে আসি। যারা উত্তরাতে বহুদিন ধরে বাস করছেন, তারা জানেন যে উত্তরা ৪০-৫০ বছর আগে পুরোপুরি গ্রাম ছিল এবং বন-জঙ্গলে ভরা ছিল। তখন নাকি এসব জঙ্গলে খারাপ জিনিস বাস করতো। তখন যারা স্থানীয় বাসিন্দা ছিলেন, তারা এসব খারাপ জিনিসের দ্বারা নানাভাবে অত্যাচারিত ও ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছিলেন। এখনও উত্তরা ১২ নম্বর সেক্টরের পরের সেক্টরগুলোর অনেক জায়গা বন-জঙ্গল দিয়ে ভরা। ধীরে ধীরে সেগুলো সাফ করে আবাসন প্রকল্প গড়ে উঠছে।
আরো জানা যায়, উত্তরাতে আগে বহু পারিবারিক কবরস্থান ছিল এবং অনেক কবরস্থান ভেঙে লাশগুলোকে অন্য জায়গায় সমাহিত না করে তার উপরেই রাস্তা এবং মেইন রোড তৈরি করা হয়েছে। মনে করুন, আপনাকে কেউ জোর করে আপনার বাড়ি থেকে বের করে দিলো। আপনি তখন কী করবেন? হয় জোর করে বাড়ির দখল নিতে চেষ্টা করবেন অথবা ক্ষমতার জোর না থাকলে প্রতিশোধ নেওয়ার অপেক্ষায় থাকবেন, তাই তো??
উত্তরা আগে বন-জঙ্গলে ঘেরা ছিল। খারাপ অনেক কিছুই বাস করতো এখানে। মানুষ জঙ্গল সাফ করে এখন সেখানে দালান-কোঠা আর ইমারত গড়ে বাস করছে। কবরস্থানের জায়গার উপর নতুন করে মাটি ফেলে সেখানে ইটের বিলাসবহুল বাসস্থান বানানো হয়েছে। রাস্তা তৈরি করা হয়েছে। আগের বাসিন্দারা তাদের আবাসস্থল হারিয়েছে। তারা নিশ্চয় প্রতিশোধ নিতে চাইবে??
উত্তরার রাস্তাগুলোতে উল্টোপাল্টা ঘটনার ফলে প্রায় প্রতিদিনই ছোট-বড় রোড এক্সিডেন্ট হয়। এসব এক্সিডেন্টগুলোকে কি আগের বাসিন্দাদের প্রতিশোধ হিসেবে ধরে নেওয়া যায় না?? অদেখা এ ভূবনের কতটুকু রহস্যই বা জানি আমরা??