ভোর সকালে বাড়ির কাজের মেয়ে মানদা আবর্জনার বালতি নিয়ে সবে নীচে সিঁড়ির দরজা খুলেছে‚ তারপরেই হাউমাউ চিৎকার‚ ‘হেই মা‚ কী অলক্ষুণে কাণ্ড গো!’
বসার ঘরে বাবা তখন সবে চায়ের কাপে চুমুক দিয়েছেন। মা কাজে ব্যস্ত। মানদার সেই চিল চিৎকারে সব ফেলে ছুটলেন। বাদ থাকেনি পাপুনও। তারপর ব্যাপার দেখে অবাক। সিঁড়ির মুখে কালো রঙের ছোট এক তুলতুলে বিড়ালছানা। সন্দেহ নেই‚ খানিক আগে কেউ পাঁচিল টপকে ফেলে গেছে। ইতিমধ্যে সেটা সিঁড়ির কাছে চলে এসেছে। দরজা খোলার আওয়াজে টালমাটাল পায়ে বাচ্চাটা আরও এগিয়ে আসছিল‚ আঁতকে উঠে মানদা কয়েক পা পিছিয়ে গেল। ওইটুকু এক বিড়ালছানা‚ দেখলেই কোলে নিতে ইচ্ছে হয়‚ তাকে এত ভয় পাওয়ার কী আছে‚ পাপুন বুঝে উঠতে পারল না। অবাক হয়ে বিড়ালছানাটার দিকে দু’পা এগিয়ে গিয়েছিল‚ মা হাউমাউ করে উঠলেন‚ ‘পাপুন‚ যাসনে ওদিকে। মানদা‚ লক্ষ্মী মা আমার‚ আপদটাকে এখুনি বাইরে ফেলে আয়।’
‘কী সব্বনেশে কতা গো!’ মায়ের কথায় মানদা প্রায় আঁতকে উঠল। ‘ও আমি পারব না মা। কেটে ফেললেও না।’
দু’জনের কথায় ততক্ষণে ব্যাপারটা খানিক বোধগম্য হয়েছে পাপুনের। তবে কী কারণে বিড়ালছানাটা অলক্ষুণে‚ বুঝে উঠতে পারেনি। মায়ের মুখের দিকে তাকিয়ে কিছু বলতেও ভরসা হচ্ছিল না। ওপাশে বাবার দিকে তাকাল। বাবা নিঃশব্দে দাঁড়িয়ে ছিলেন। মুখ দেখেই বোঝা যাচ্ছে‚ ভয়ানক দোটানায় রয়েছেন। সামান্য ইতস্তত করে শেষে বললেন‚ ‘ওইটুকু বাচ্চা‚ এখনই এত ব্যস্ত হওয়ার কী আছে রমলা? ঘরে তো আর যায়নি।’
‘কী বলছ তুমি!’ বাবার কথায় মা প্রায় ঝঙ্কার দিয়ে উঠলেন‚ ‘তাই বলে ওই অলক্ষুণে জিনিস বাড়িতে থাকবে! তুমি বাপু যে করেই হোক কাউকে ডেকে বিদেয় করো। ছেলেপুলে নিয়ে ঘর।’
এরপর বাবার যে আর মতামত নেই‚ বিলক্ষণ জানে পাপুন। বিড়ালছানাটার পরিণতির কথা ভেবে মনটা ভীষণ খারাপ হয়ে গেল। এই যখন অবস্থা‚ তখন দাদুর আবির্ভাব। চ্যাঁচামেচির শব্দে কখন যে নেমে এসেছেন‚ লক্ষ করেনি কেউ। হঠাৎ বললেন‚ ‘বউমা‚ থাক না এখন। একটু বড় হলে আপনিই চলে যাবে।’
এ বাড়িতে দাদুর উপর কেউ কথা বলে না। মা’ও কিছু বলতে পারেননি। খানিক গুম হয়ে থেকে চলে গিয়েছিলেন। বিড়ালছানাটাকে তাই আর বিদেয় হতে হয়নি।
মা নিজেও হয়তো আশা করেছিলেন‚ বিড়ালছানাটা নিজেই বিদেয় হয়ে যাবে। তবে তাঁর অনুমান সঠিক হয়নি। বিড়ালছানাটা রয়েই গেছে বাড়িতে। শুধু তাই নয়‚ শত্রুর মুখে ছাই দিয়ে দিন দিন শশীকলার মতো বেড়েও উঠেছে। সেই রহস্যের কারণ অবশ্য দাদু আর পাপুন ছাড়া কেউ জানতে পারেনি। আসলে এই বাড়িতে দু’জনের সম্পর্ক প্রায় বন্ধুর মতো। অতি সংগোপনে দু’জনের সহযোগিতাতেই যে ব্যাপারটা সম্ভব হয়েছে‚ তা বলাই বাহুল্য। এমনকী একটা নামও দেওয়া হয়েছে। ভূতের মতো কালো বলে ভুতো নামটা পাপুনই দিয়েছে।
মা অবশ্য ব্যাপারটা নিয়ে পরে আর তেমন উচ্চবাচ্য করেননি। কারণও আছে। চতুর বিড়ালছানাটা এরপর কোনও দিনই আর ঘরের চৌকাঠ মাড়ায়নি। যতদিন ছোট ছিল‚ আস্তানা ছিল সিঁড়ির নীচের খুপরি ঘর। এখন সারা দিন প্রায় বাইরেই কাটে। দেখা মেলে কদাচিৎ। ব্যাপারটা তাই এখন থিতিয়ে গেছে। পাপুন পরে দাদুর কাছেই শুনেছে‚ কালো রঙের বেড়ালের নাকি মোটেই সুনাম নেই। ছোট এই প্রাণীটিকে নিয়ে সারা পৃথিবীতেই ভয়ানক সব গল্পকথা ছড়িয়ে আছে। তাবড় তাবড় লেখকরাও কালো বেড়াল নিয়ে হাড় হিম করা কাহিনী লিখে গেছেন। সেসব গল্পের কয়েকটা গত পুজোর ছুটিতে দাদুর কাছেই শুনেছে পাপুন। মাকে তাই দোষ দিতে পারে না। তারপর গত কয়েক মাসে ভুতোকে নিয়েও তো কম কাণ্ড হয়নি।
একদিন এক মজার ব্যাপার ঘটেছিল। সেদিন সাতসকালে এক ভদ্রলোক মোটরসাইকেলে যাচ্ছিলেন। হঠাৎ তার সামনে দিয়ে রাস্তা পার হয়ে গেল ভুতো। প্রায় আঁতকে উঠে ঘ্যাঁস করে ব্রেক চাপলেন তিনি। খানিক থম মেরে থেকে পিছিয়ে গেলেন কয়েক পা। তারপর ফের এগোতে গিয়েও কী ভেবে বাইক ঘুরিয়ে যে দিক থেকে এসেছিলেন‚ ফিরে গেলেন সেই পথে। বোধ হয় সোজা বাড়ি‚ নয়তো অন্য কোনও পথে গন্তব্যস্থানের দিকে।
এসব মাস কয়েক আগের কথা। সম্প্রতি স্কুলে গরমের ছুটি চলছে। এই দিনগুলোতেই দাদুকে কাছে পাওয়া যায় সবচেয়ে বেশি। বিশেষ করে দুপুরের দিকে। কত গল্প হয় দু’জনে। কত শলাপরামর্শ। কিন্তু এবার সব মাটি হয়ে গেছে। আসলে দাদু এবার হঠাৎই মণিকাকুর কাছে বেড়াতে গেছেন। মণিকাকু মুম্বাইতে চাকরি করেন। সুতরাং বলাই যায়‚ মাস খানেকের আগে তাঁর ফেরবার আশা নেই। দাদুর অভাবে পাপুনের দুপুরগুলো তাই একেবারেই নীরস। সময় যেন কাটতেই চায় না। এর মধ্যেই ব্যাপারটা ঘটে গেল।
শুরু দিন তিনেক আগে। সেদিন লোকটা হঠাৎই পাপুনের নজরে পড়ে গিয়েছিল। এমনিতে দুপুরের দিকে ওদের এই গলি প্রায় নির্জন। দু’একজন হকার ছাড়া মানুষ প্রায় দেখাই যায় না। নতুন বসতি। তাই বাড়ির সংখ্যাও তেমন বেশি নয়। পথে যাদের দেখা যায়‚ তাদের বেশির ভাগই পরিচিত। কিন্তু এই লোকটা নতুন। পরনে আধময়লা প্যান্ট। ছোট করে ছাঁটা চুল। মুখ ভরতি অবিন্যস্ত দাড়ি। হাতে ছোট একটা থলে। হঠাৎ দেখলে মিস্ত্রি গোছের বলেই মনে হয়। প্রথম দিন পাপুনও তাই ভেবেছিল। কিন্তু পরের দিন তেমন মনে হয়নি। অতি ধীর পদক্ষেপে চলতে চলতে লোকটা আড় চোখে যেভাবে দু’পাশের বাড়িগুলোর দিকে তাকাচ্ছে‚ রীতিমতো সন্দেহজনক। ওদের বাড়িও বাদ যায়নি। পাপুন তখন দো’তলার জানলার সামনে বসে। আড়াল নেবার জন্য‚ পর্দার পিছনে সামান্য সরে গিয়েছিল। একটু করে ফের যখন পর্দার আড়াল থেকে বাইরে তাকাল‚ লোকটাকে আর দেখতে পায়নি।
মাস কয়েক আগে এই পাড়াতেই এক বাড়িতে ডাকাতি হয়ে গেছে। বাধা দিতে গিয়ে খুনও হয়েছে একজন। অথচ সন্দেহ হলেও ব্যাপারটা ও বলতে পারেনি কাউকে। বাবা দিন কয়েক বাড়িতে নেই। অফিসের কাজে বাইরে। এমন মাঝে–মধ্যেই যেতে হয় তাঁকে। দাদু বাড়ি থাকলে ভাবনা ছিল না। এছাড়া বাকি থাকে মা। কিন্তু তাঁকে বলতে গিয়েও ভরসা হয়নি। হয়তো ঘাবড়ে গিয়ে আরও অনর্থ করবেন। তাই চেপেই গেছে। কিন্তু ব্যাপারটা শেষ পর্যন্ত যে এতদূর গড়াবে‚ ভাবতেই পারেনি।
আজ দুপুরে মা–ও বাড়িতে নেই। ছোটমেসো হঠাৎ অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে। তাঁকে দেখতে গেছেন। ফিরতে সন্ধে হয়ে যাবে। বাড়িতে সে আর কাজের মানুষ মানদামাসি। দুপুরে দো’তলার ঘরে বসে ও আনমনে একটা গল্পের বই উলটে দেখছিল। হঠাৎ জানলা দিয়ে নীচে রাস্তার দিকে চোখ পড়তেই ভুরু কুঁচকে উঠল। সেই লোকটা। হাতে সেই থলি। তবে সঙ্গে আরও দু’জন। তাদের কারও চেহারাই তেমন সুবিধের নয়। কেমন বেপরোয়া ভাব। এগিয়ে আসছে এদিকে।
আজও পথে অন্য মানুষ নেই। তবু লোকগুলো আড়চোখে এদিক–ওদিক তাকাচ্ছে। রীতিমতো সন্দেহজনক।
পাপুন ডিটেকটিভ গল্পের পোকা। ফেমাস ফাইভ সিরিজের বই পেলে হুঁশ থাকে না। ফেলুদার কোনও বই পড়তে বাকি নেই। এই বছর স্কুল ম্যাগাজিনের জন্য একটা গোয়েন্দা গল্প লিখেছিল। ছাপাও হয়েছে। সেই গল্পের গোয়েন্দা দুষ্মন্ত দত্ত যত বাহাদুরিই দেখাক‚ তার স্রষ্টা শ্রীমান পাপুনের বুকের ভিতরটা হঠাৎ ছ্যাঁত করে উঠল। লোকগুলোকে দেখে ওর মনে হচ্ছিল‚ খারাপ কিছু একটা ঘটাবে বলেই বেরিয়েছে। ঠিক ওই সময় হুস করে একটা হলুদ রঙের ট্যাক্সি ওদের বাড়ির অদূরে এসে দাঁড়িয়ে পড়ল। দেখে একটু ভরসা পেল ও। পাড়ার পরিচিত কেউ নিশ্চয়। কিন্তু ওকে অবাক করে দিয়ে ট্যাক্সিটা সেইভাবে দাঁড়িয়েই রইল। কেউ নামল না। ব্যাপারটা কী হতে পারে ভাবছে‚ হঠাৎ লোকগুলোর দিকে চোখ পড়তে বুকের রক্ত হিম হয়ে গেল।
কী সর্বনাশ! লোকগুলো যে ওদের বাড়ির সামনে এসে দাঁড়িয়ে গেল। পাপুনের মগজের ভিতর সেদিনের ব্যাপারটা হঠাৎ ঝিলিক দিয়ে উঠল। বুঝতে বাকি রইল না‚ আগের দিন ও জানলার পর্দার আড়ালে সরে যাবার পরে লোকটা গেট খুলে ঢুকে পড়েছিল ওদের বাড়িতেই। পরে তাই আর দেখতে পায়নি। মণিকাকু মুম্বাই চলে যাবার পরে নীচতলা তালাবন্ধ। কেউ থাকে না। লোকটা তাই যথেষ্ট সময় নিয়ে খোঁজ খবর করে গেছে। সন্দেহ নেই‚ হলুদ ট্যাক্সিটাও ওদের। সব ব্যবস্থা পাকা করেই আজ দলবল নিয়ে এসেছে। ভাবতে গিয়ে পাপুনের গায়ের লোম খাড়া হয়ে উঠতে লাগল। মানদামাসি তার ঘরে ঘুমোচ্ছে। লোকগুলো হয়তো একটু পরেই সিঁড়ির বেল টিপবে। তার আগেই তাকে সতর্ক করা দরকার। কিন্তু যা ভিতু মানুষ‚ কীভাবে কথাটা তার কাছে পাড়বে‚ ভেবে উঠতে পারল না। পাপুন টের পেল‚ ওর বুকের ভিতরটা শুকিয়ে আসছে ক্রমশ। মাথাটাও কেমন গুলিয়ে যাচ্ছে।
ওদিকে লোকগুলো ইতিমধ্যে ওদের গেটের কাছে এসে পড়েছে। লোহার গেট হ্যাসবোল্ট টেনে ভেজানো। সবার পিছনে দাঁড়ানো দাড়িওয়ালা লোকটা চারপাশে একবার চোখ ঘোরাল। তারপর চোখ নাচিয়ে ইঙ্গিত করতেই সামনে নীল টি–শার্ট করা লোকটা হাত বাড়িয়ে বন্ধ গেটের হ্যাসবোল্ট টেনে খুলে ফেলল। টুং করে একটু শব্দ হল। আর তারপরেই নিমেষে এক ব্যাপার ঘটে গেল। গেটের মাথায় মাধবীলতার ঝাড়ে ঢাকা ছোট এক সান-শেড। ভুতো সম্ভবত তারই ছায়ায় শুয়ে ছিল। হঠাৎ আওয়াজে গা—ঝাড়া দিয়ে উঠে লাফিয়ে পড়ল নীচে। সম্ভবত হিসেবের ভুলে একেবারে নীল টি—শার্টের ঘাড়ের উপর।
‘হাঁই বাপ!’ বেজায় ঘাবড়ে গিয়ে লোকটা টাল সামলাতে না পেরে ছিটকে পড়ল মাটিতে। দ্রুত ডান হাত চলে গেল পকেটের ভিতর। ঘাবড়ে গিয়েছিল ভুতোও। তবু আত্মরক্ষার তাগিদে দাঁত—মুখ খিঁচিয়ে ‘ফ্যাঁস’ করে সামান্য ফুঁসে উঠেই ছুটে রাস্তা পার হয়ে হাওয়া।’
বেড়ালের ধারাল নখে ছড়ে গেছে কয়েক জায়গায়। তাই নিয়ে লোকটা উঠে দাঁড়াল একটু পরেই। হাতটাও বের করে নীল শার্ট পকেট থেকে। ভীত চোখে অন্য দু’জনের দিকে তাকাল।
আকস্মিক এই ঘটনায় তারাও পিছিয়ে গিয়েছিল কয়েক পা। পাপুন তাকিয়ে দেখল‚ তাদের মুখেও আতঙ্কের কালো ছায়া। প্রথমজন ওদের দিকে তাকাতেই দাড়িওয়ালা চোখ নাচিয়ে বলল‚ ‘হাই বাপ! জলদি সে ভাগ হিয়াঁসে।’
এক মুহূর্ত দেরি না করে তিনজন ছুটল অদূরে সেই হলুদ ট্যাক্সির দিকে। দরজা খুলে উঠে বসতেই নিমেষে ছেড়ে দিল সেটা। ট্যাক্সিটা বাঁকের আড়ালে হারিয়ে যেতেই পাপুন এক ছুটে পাশে দাদুর ঘরে। গোড়ায় যতটাই ঘাবড়ে গিয়েছিল‚ ভুতোর দৌলতে আকস্মিক পট পরিবর্তনের পরে এখন ততটাই চাঙ্গা। গোয়েন্দা দুষ্মন্ত দত্তর মতো মাথাটাও বেশ কাজ করতে শুরু করেছে। এই পথে ট্যাক্সিকে বড় রাস্তায় পড়তে হলে রথতলার মোড় হয়ে যেতে হবে। মাস কয়েক আগে সেই ডাকাতির ঘটনার পরে ওখানে পুলিশের নতুন এক আউটপোস্ট হয়েছে। এখন দরকার ওদের টেলিফোন নম্বরটা। দাদুর টেবিলে ইনডেক্স করা একটা টেলিফোন ডায়েরি রাখা থাকে। নতুন কোনও দরকারি নম্বর পেলেই দাদু লিখে রাখেন। হয়তো এই নম্বরটাও লেখা আছে। দাদুর ঘরে পৌঁছে সেটার পাতা ওলটাতেই পাপুন যথাস্থানে পেয়ে গেল নম্বরটা। এখন আর একটি কাজই শুধু বাকি।
দ্রুত ডায়াল করতেই ওধার থেকে জবাব এল। পাপুন ঠাণ্ডা গলায় বলল‚ ‘পুলিশকাকু‚ আমি বি–২৪ গোল্ডেন পার্ক থেকে পাপুন বলছি। একটা হলুদ রঙের ট্যাক্সির নম্বর নোট করুন। ট্যাক্সিটা এখুনি রথতলার মোড়ে পৌঁছুবে। ওতে কয়েকজন দুষ্টু মানুষ আছে। এদিকে ডাকাতি করার উদ্দেশ্যে এসেছিল। নীল টি—শার্ট পরা একজনের পকেটে সম্ভবত পিস্তল আছে। ওদের সঙ্গে একটা থলিও রয়েছে। তাতেও কিছু থাকতে পারে।’
প্রায় ঝড়ের বেগে পাপুন এরপর ট্যাক্সির নম্বরটা বলে গেল। ওপ্রান্তে যিনি কথা বলছিলেন‚ তিনি হঠাৎ যেন সামান্য উত্তেজিত হয়ে উঠলেন। তারপর ‘হ্যাঁ—হ্যাঁ ঠিক আছে’ বলেই ঠক করে টেলিফোন নামিয়ে রাখার শব্দ। তাঁর সেই অদ্ভুত ব্যবহারে পাপুন বিস্মিত হল না। বরং বুক থেকে একটা স্বস্তির নিঃশ্বাস নেমে এল।
এরপর এই গল্পের আর সামান্যই বাকি আছে। আসলে টেলিফোনে পাপুনের সেই কথা মাঝেই হলুদ রঙের ট্যাক্সিটা পৌঁছে গিয়েছিল রথতলার মোড়ে। সিগনাল থাকায় দাঁড়িয়েও পড়েছিল। সুতরাং সেটাকে আটক করতে পুলিশকে বেগ পেতে হয়নি। ড্রাইভার সহ ধরা পড়েছিল সবাই। সার্চ করে দুটো পিস্তল পাওয়া গিয়েছিল ওদের কাছ থেকে। তার একটা ওয়ান সটার হলেও অন্যটা দশ রাউন্ডের ম্যাগাজিন সহ এম নাইন পিস্তলের মতো মারাত্মক অস্ত্র। সঙ্গের থলিতে মিলেছিল দুটো ভোজালি আর তালা খোলার হরেক যন্ত্রপাতি। কালো বেড়াল কাণ্ডের কারণে লোকগুলো এমনিতেই ভড়কে গিয়েছিল। তারপর ওইভাবে পুলিশের হাতে ধরা পড়ে এতটাই ঘাবড়ে গিয়েছিল যে‚ জেরায় পড়ে কিছুই আর চেপে রাখতে পারেনি। তারপর সেই সূত্র ধরে সেই রাতেই ধরা পড়েছিল সম্প্রতি ভিন রাজ্য থেকে আসা বড় এক গ্যাং।
শুধু পুলিশ কর্তারাই নয়‚ পাপুনদের বাড়িতে এরপর ছুটে এসেছিল এক ঝাঁক রিপোর্টার। কাগজে সেই খবরের সঙ্গে ছাপা হয়েছিল ভুতোকে কোলে নিয়ে পাপুনের ছবি। রিপোর্টারদের অনুরোধে সেই ছবি যখন তোলা হয়‚ পাপুনের ভয় হচ্ছিল‚ মা হয়তো আপত্তি করবেন। কিন্তু ওকে অবাক করে দিয়ে মা বরং উৎসাহই দিয়েছিলেন। এমনকী মানদামাসি পর্যন্ত।