ঘটনা মুক্তিযুদ্ধেরও অনেক আগের। আমার আম্মা হিন্দু কায়স্থ ছিলেন। বিয়ের পর মুসলমান হন। আম্মা যখন প্রথম বার কন্সিভ করেন, এর পর থেকে একজন লোক কে দেখতেন জানালা দিয়ে তাঁর দিকে তাকিয়ে হাসছে। সেই লোকটা কালো পাঞ্জাবী, কালো পাইজামা ও কালো টুপি পরা ছিল। তার মুখে কালো দাড়ি ছিল। এমনকি, তার হাতে একটি তসবি ছিল সেটাও কালো রঙের। যখন আম্মা লোকটিকে দেখতেন, আম্মা নাকি ভয়ে থরথর করে কাঁপতেন। ৩/৪ জন মিলেও তাঁকে ধরে রাখতে পারতেন না। আম্মার ১ম সন্তান মিসক্যারেজ হয়ে যায়। এরপর, আমার দাদী আম্মাকে হুজুর দেখিয়ে বিভিন্ন ভাবে চেষ্টার পর ২য় বার আম্মা কন্সিভ করেন। এবং আমার একটা বোন হয়। কিন্তু, দুর্ভাগ্যবশতঃ সেই বোনটি এবনরমাল হয়। সে খুব সাস্থ্যবতী হয়। এবং অবিশ্বাস্য হলেও সেই ছোট বাচ্চা ১ লিটারের ফিডারের এক সাথে ২ ফিডার দুধ খেত। যত বড় হতে থাকে, তার খাওয়ার পরিমানও অস্বাভাবিক ভাবে বাড়তে থাকে। সে কথা বলত না। একা একা বসে হাসত। আর আম্মা যখন ওই লোকটিকে দেখতেন আর কাঁপতেন, তখন নাকি আমার বোনটি জোরে জোরে খিলখিল করে হাসত। অনেক হুজুর দেখিয়ে অনেক চেষ্টা করেও আম্মা ওই লোকটিকে দেখা থেকে মুক্তি পান নি। এরপর যখন আমার বোনটির ২ বছর বয়স, তখন আমার ভাই হয়। তার মাঝেও অনেক অস্বাভাবিক ব্যাপার ছিল। সে কখনো আলোতে যেতে চাইত না। সকালে সূর্যের আলোতে নিয়ে গেলে তাকাতে পারত না। চিৎকার করে কাঁদত আর চোখ সুপারির মত ফুলে যেত। ঘরের ভেতরে নিয়ে গেলে আবার শান্ত হয়ে যেত। এরপর যখন আমার বোনের বয়স আড়াই বছর, তখন একদিন তার খুব জ্বর হল। কথা তো বলতে পারত না, শুধু গলা দিয়ে ঘর ঘর শব্দ করছিল সারা দিন। যে বাচ্চা ১ ঘন্টা পর পর খেত, খাওয়া বন্ধ করে দেয়। ওই দিন রাতেই একদিনের জ্বরেই সে মারা যায়। তার স্বাস্থ্য বাড়াবাড়ি রকমের ভাল ছিল। কিন্তু, মারা যাওয়ার পর নাকি তার শরীর একেবারে শুকিয়ে যায়। মনে হচ্ছিল, একটা কংকালের উপর চামড়া জড়ানো। সে মারা যাওয়ার পর আস্তে আস্তে সব ঠিক হয়ে যায়। আমার ভাইকে অনেক হুজুর দেখিয়ে, তাবিজ দিয়ে ভাল করার চেষ্টা করা হয়। পরে এক হুজুরের পরামর্শ অনুযায়ী আমার ভাইয়ের এক কান ফুঁড়িয়ে দিলে সে ঠিক হয়ে যায়। এরপর আম্মা আর ওই লোকটিকে দেখেন নি।
আমাদের বাড়িতে আরও অনেক অদ্ভুত ঘটনা আছে। যেমন, গভীর রাতে আমার দাদী যখন তাহাজ্জতের নামাজ পরার জন্য উঠতেন, তখন বাড়ির পিছনের রাস্তায় ঘোড়ার জোরে ছুটে চলার শব্দ পেতেন। কিন্তু আমাদের বাড়ির আশেপাশে কারোর ঘোড়া ছিল না। আমার বড় চাচী বিয়ে হয়ে এসে প্রথম দিনেই, কিছু একটা দেখে ভয়ে অজ্ঞান হয়ে যান এবং জ্ঞান ফেরার পর থেকে মাঝে মাঝে অস্বাভাবিক আচরণ করতেন। এর কিছুদিন পর তার মাথায় জটা বাঁধতে শুরু করে। যে রকম আমরা অনেক তান্ত্রিক বা সাধু বাবার মাথায় দেখি। অনেক চেষ্টা তদবির ও চিকিৎসার পর তিনি সুস্থ হন।
আমি কখনও লেখালিখি করি নাই। এটাই কোথাও পাঠানো আমার প্রথম লেখা। এবং প্রতিটা কথাই সত্যি। বানানো নয়। লেখায় কোন ভুল ত্রুটি হলে মাফ করে দিয়েন।
– সাবেরীন বন্যা।