কালুর মায়ের স্বামী ভক্তি

গ্রামের বউ “কালুর মা” ওয়াজ শুনতে গেছে। সবে এক ছেলের  মা, তাই তাকে আদর করে কালুর মা বলে সবে ডাকে। কালুর মা-ও ছেলের বাপকে ‘কালুর বাপ’ বলে ডাকে।

স্বামীর নাম ধরে তো আর ডাকা যায় না। কালুর মা-ও তাই সাবধান হয়ে যায়।

কিন্তু ওয়াজ শুনে কালুর মা’র মন গেল বিগড়ে। মুনশী সাহেব ওয়াজে বলেছেন, স্বামীর সেবা করা ছাড়া স্ত্রীর আর কোন কাজ নেই।

স্বামীর সেবা? ‘সেবা’ জিনিসটি কি, কালুর মা ঠিক বুঝে উঠতে পারছে না।

মুনশী সাহেব বলেছেন, আল্লাহ নাকি বলেছেন, “আল্লাহ ছাড়া আর কাউকে সিজদা করতে বলা হ’ত, তাহলে স্ত্রীকে বলা হ’ত স্বামীকে সিজদা করতে”। বাপরে বাপ। আল্লাহর সেবার পর স্বামী সেবা! আল্লাহর সেবা তো নামাজ পড়া, রোজা রাখা ইত্যাদি।

আর স্বামীর সেবা?

কালুর মা মুশকিলে পড়ে যায়।

কালুর মা প্রতিজ্ঞা করেছে, স্বামীকে সেবার মত সেবা করবে। এত বড় মর্তবা যার, স্বয়ং খোদাতায়ালা পরে যার স্থান, তার সেবা কি আর সহজ! আজ ভোর থেকে কালুর মা নতুন করে স্বামীর সেবায় লেগেছে। ফজরের নামাজ শেষ করে কালুর মা তসবীহ তেলাওয়াত করে থাকে।

কালুর মা লেখাপড়া জানে না। তেলাওয়াতের মর্মও সে বোঝে না।

গ্রামের আখুঞ্জী সাহেব বলেছেন, নামাজের পর ‘আল্লাহ’, ‘আল্লাহ’ বলে তসবীহ ঘোরালেই হবে। আল্লাহর নাম করলেই আল্লাহর সেবা হবে। কালুর মা’র মাথায় এক নতুন বুদ্ধি খেলে যায়। সে আজ কালুর বাপের নাম জপ করবে, আল্লহা নাম জপের পরে।

কালুর মা নাম জপতে বসে যায়।

‘কালুর বাপ’, ‘কালুর বাপ’, ‘কালুর বাপ’……..।

এদিকে বেচারা কালুর বাপ লাঙল নিয়ে মাঠে যাবে। সকাল বেলার ‘জাউ (নাশতা) রাঁধা নয়নি। কালুর তাই তাগিদ দিচ্ছে। কালুর মা বিরক্ত হয়ে বলে “সকাল বেলায় চেঁচামেচি করো না দেখি, তোমার নাম জপটা শেষ করে নি”।

কালুর বাপের নাম জপ? সে আবার কি?

কালুর বাপ এর মানে বোঝে না।

কালুর বাপ তেড়ে ওঠে, ওসব রেখো, আমার নাশতা কই?

কালুর মা-ও তেড়ে ওঠে, -এখন থামো, তেলাওয়াতটা শেষ করে নি।

দু-জনে বেঁধে যায় তুমুল ঝগড়া। এর মীমাংসা কি হবে? মুনশী সাহেবকে ডাকা হয়। তিনি দেবেন এর ফয়সালা। কালুর মা স্বামীর ঘর-কন্নার কাজ বাদ দিয়ে কালুর বাপের নাম জপ করলে স্বামীর সেবা হবে কি না”।

এ গল্পের মাধ্যমে মুনশী সাহেব বুঝাতে চেয়েছেন যে, না বুঝে এবাদত করলে অর্থাৎ মূর্খের এবাদত কোন কাজেই আসে না।

(মুনশী মোহাম্মদ মেহেরুল্লাহঃ দেশ কাল সমাজ-৯০-৯১ পৃঃ)

সম্পর্কিত পোস্ট

দুঃখিত!