আর কি বুঝতে কিছু বাকি থাকে? নির্ঘাত সেই কালরাক্ষসের কাজ। কোনো অচিনদেশের কুমার হবে নিশ্চয়। বেচারাকে ধরে এনে কয়েদ করে রেখেছে মনের সুখে মারবার জন্যে।
“কাঁদছ কেন ভাই? ভয় কি!”—কাছে গিয়ে খুদকুমার মিষ্টি গলায় সাহস দেয়। অচিনকুমার চমকে উঠে বসে কেমন হতভম্ব হয়ে তাকায়! তারপর তার কান্না আবার যেন উথলে ওঠে নতুন করে।
খুদকুমার পাশে বসে পিঠে হাত দেয় এবার, “ছি, পুরুষ মানুষ কি কাঁদে!”
“না কাঁদে না”—অচিনকুমারের গলায় এবার ঝাঁঝ, আমার মতো হতে তো বুঝতে। আর এসেছ যখন, বুঝবে। কিন্তু তুমি কে? এখানে এলেই বা কি করে, আর কেন?”
খুদকুমার নিজের পরিচয় দিয়ে বলে, “এসেছি কালরাক্ষসের দাপট ভাঙতে।”
কান্না ভুলে হেসে ওঠে অচিনকুমার, “এখানে এসেছে কালরাক্ষস খুঁজতে?”
“এখানে আসব না তো যাব কোথায়?”—খুদকুমার তো অবাক!
“কালরাক্ষস কোথায় থাকে তাও জান না?” অচিনকুমার আবার হেসে ওঠে।
খুদকুমার এবার গরম; হয়ে বলে, “থাকে তো এইখানেই।”
“না হে না, এখানে তো থাকি আমি! জন্ম থেকে আছি কালরাক্ষসের দাপটে কয়েদ হয়ে। তাই তো আমন করে কাঁদি।”
“তা হলে যে শুনলাম….. ” —খুদকুমার শুধোয় অবাক হয়ে।
“যা শুনেছ তা ভুল, ওই তো দধি-সায়রের পারে চার-দুয়ার বিশাল পুরী। ওই হ’ল কালরাক্ষসের গড়।”
এবার খুদকুমারের হাসবার পালা। ঠাট্টা করে বলে, “তুমি তো তা হলে খুব জান দেখছি।”
“তা আর জানি না।” অচিনকুমার একটু চটেই ওঠে, “সাতপুরুষ ধরে গড়বন্দী হয়ে আছি, আমি জানব না তো জানবে কে! ওই কালরাক্ষসের জন্যেই তো নিঝুমপুরীর এই হাল!”
খুদকুমারকে অনেক কষ্টে এবার সব বলে বোঝাতে হয়। বোঝাবুঝির পর দু’জনেই দু’জনের মুখের দিকে অবাক হয়ে চায়।
“এখানে নয় ওখানে নয়, তো কালরাক্ষস থাকে কোথায়?”
“কোথাও না।” বলে দু’জনে একসঙ্গে হেসে ওঠে। আর তক্ষুনি বানানো বুজরুকির ফাকি দুঁফাক হয়ে মিথ্যা কুয়াশার মতো উবে যায়। –
থমথমে নিঝুমপুর গমগম করে ওঠে খুশীতে হাসিতে। থকথকে দধি-সায়র গলে টলটলে জল হয়ে ঝকঝক করে ভোরের সোনালী আলোয়। কুমির হয়ে যায় কাঠের গুড়ি।
খুদকুমার আর অচিনকুমার হাত ধরাধরি করে বেরিয়ে পড়ে। সঙ্গে ঘেয়ো কুকুর। ঘেয়ো কুকুরের ঘা কই? সব সেরে গিয়ে রেশমের মতো নরম লোমে গা গেছে ঢেকে। ওপারের বিশাল পুরী চার-দুয়ার খুলে যেন সবাইকে ডাকছে।
কুঁচবরণ কন্যা মেঘবরণ চুলই শুধু বাঁধেনি, যজ্ঞির রান্না রাঁধতে বসেছে হাজার রাজপুত্রকে নেমস্তন্ন খাওয়াতে।
কালরাক্ষস সত্যি আজ ঘায়েল। কোথাও সে নেই, আবার আছেও বটে। আছে প্রাণের লুকোনো হিংসেয়, মনের মিথ্যে ভয়ে।
ঘর ছেড়ে বাইরে এসে, আপনার মতো পরকে ভালবেসে তাই বার-বার হারিয়ে শূন্যে হাওয়ায় উড়িয়ে দিতে হয়। মা’র শেখান ছড়াটার মানে যেন কিছুটা বুঝতে পারে খুদকুমার।
গল্পের ১ম অংশ পড়তে এখানে ক্লিক করুন ।
"আলোর পথ"-এ প্রকাশিত গল্পসমূহ ও লেখনী মূলত পাঠক, শুভানুধ্যায়ী এবং সম্মানিত অবদানকারীদের কাছ থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে। এই কনটেন্টগুলোর উপর আমরা কোনো মেধাসত্ত্ব (copyright) দাবি করি না। যদি কোনো গল্প, ছবি বা তথ্যের কপিরাইট সংক্রান্ত বিষয়ে আপনার প্রশ্ন, সংশয় বা আপত্তি থাকে, তাহলে অনুগ্রহ করে আমাদের যোগাযোগ পৃষ্ঠায় যোগাযোগ করুন। আমরা যথাযথ আইনানুগ পদ্ধতিতে বিষয়টি পর্যালোচনা করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করব।