কাবুসের সৌভাগ্য-পর্ব ১
কাবুসের মত দুশ্চরিত্র এবং দুরন্ত যুবককে যে কোন আত্নীয় বা পাড়া প্রতিবেশীগণ আশ্রয় দিবে না এটা সে ভালভাবেই জানত। অতএব সে তার প্রধান বন্ধু এবং দুষ্কর্মের শ্রেষ্ঠ দোসর হামানের নিকট গিয়ে উপস্থিত হল এবং নিজের এ দুর্ঘটনার কথা ব্যক্ত করল।
হামান যদিও ভীষণ দুশ্চরিত্র ও অত্যন্ত অসৎ যুবক ছিল তবু সে কাবুসের বন্ধুত্ব এবং ঋণের মর্যাদা রক্ষায় বিমুখ হল না। সে কাবুসের এ সঙ্কটের কথা শ্রবণ করে বড়ই আফসোস করল এবং তাকে বিশেষ সহানুভূতি প্রদর্শন করতঃ বলল, বন্ধু কোনই পরোয়া নেই। আল্লাহর এ রাজ্য এতটুকু নহে। তুমি চিন্তা করিও না। নির্বিঘ্নে আমার বাড়িতে অবস্থান কর; এক ব্যবস্থা হবেই!
তাছাড়া কাবুসের কাছে অন্য কোনও পথও ছিল না। সুতরাং সে হামানের কাছেই থেকে গেল। হামানের আর্থিক অবস্থা সচ্ছল ছিল না। কোনরূপে তার দিন চলত। অসুবিধা দেখা দিলে বন্ধু কাবুসের নিকট হতে পয়সা এনে তা দ্বারা কাজ চালাত। এবার সেই কাবুসই শূন্য হাতে এসে তার উপর বোঝা হয়ে পড়ল। অতএব এভাবে বেশি দিন আর চলল না। তাদের উভয়ের শীঘ্রই খাদ্য সমস্যা দেখা দিল।
এদের দলে এতদিন যে দুর্বৃত্ত যুবকেরা ছিল, কাবুসের দুর্দশার কথা শুনতে পেয়ে তারা সবাই কেটে পড়েছিল। এখন আর তারা তাদের চারপাশেও আসে না। অতএব তারা যে কারও নিকট হতে কিছু সাহায্য গ্রহণ করবে এমন ব্যক্তি পাওয়া গেল না। দেশে সামান্য ধার-কর্জের জন্য বহু চেষ্টা চলল। কিন্তু এ দুর্বৃত্ত যুবকদ্বয়কে কেহ একটি পয়সা দ্বারাও সাহায্য করল না। অবশেষে বাধ্য হয়ে তারা উভয়ে ভাগ্যন্বেষণে গৃহের বাইরে বের হয়ে পড়ল।
তারা দু তিন গ্রাম ঘুরেও কিছু করতে পারল না। কারও নিকট কিছু সাহায্য বা কোন কাজ কর্ম মিলল না। কারণ ঐ সমস্ত গ্রামের লোকেরা সকলেই তাদেরকে চিনত। কাজেই তারা যার কাছেই উপস্থিত হত বিপদ মনে করে দু’এক কথায় বিদায় করে দিত। অবশেষে তারা ব্যর্থ হয়ে মিশরের প্রধান নগরীর পথ ধরল।
একেতো ক্ষুধায় কাতর, তদুপরি দীর্ঘ রাস্তা ভ্রমণজনিত ক্লান্তি তাদের শরীর প্রায় অবশ করে ফেলেছিল। পা আর উঠতেছিল না। তবুও বসে থাকলে তো চলবে না, বাঁচতে হলে না চলে উপায় নেই। তাই সে ক্লান্ত দেহ নিয়েই মন্থর পদে সম্মুখ পানে অগ্রসর হতে লাগল। ক্ষুধায় তখন তাদের পেটে আগুনের মত জ্বলতেছিল।