কাবুসের সঙ্গ দোষ

কাবুসের পিতা ধনী কৃষকটি হৃদয়ে অত্যন্ত উচ্চাকাঙ্খা পোষণ করছিল। অর্থাগমের সঙ্গে সঙ্গে তার জ্ঞান বুদ্ধিরও অভাব রইল না। বনী ইসরাইলদের মান সম্মান এবং সুনাম দেখে তার মনে ঐরূপ যশ লাভ করার ইচ্ছা জেগেছিল। মনে মনে সে বনী ইসরাইলদের প্রতি কিছুটা ঈর্ষান্বিতও ছিল।

তার মনের উচ্চাকাঙ্খাকে সফল করে তোমার জন্য সে পুত্র কাবুসকে উচ্চ শিক্ষা দান করার জন্য বদ্ধপরিকর হল। নিজে সে তেমন লেখা পড়া না জানলেও পুত্রের শিক্ষার জন্য কতিপয় শিক্ষক নিযুক্ত করল এবং তাদের জন্য সে বহু অর্থ খরচ করতে লাগলো।

শিক্ষকগণ কাবুসকে বিদ্যা শিখাবার জন্য যারপরনেই চেষ্টা করতে লাগলেন। এদের চেষ্টায় কৈশরে কাবুস কিছু শিক্ষা প্রাপ্তও হল। কিন্তু অচিরেই এক প্রবল বাধা এসে উপস্থিত হল যাতে তার শিখা-দীক্ষা পন্ড হয়ে গেল।

ধনী কৃষকের একমাত্র আদরের ধন কাবুসকে পিতা আহলাদ দিয়ে মাথায় তুলে নিয়েছিল। কাজেই বালক হলেও তার হস্তে সর্বদা পিতা অনেক অর্থ দিত।

সে আপন ইচ্ছানুযায়ী উহা যথায় তথায় খরচ করত। ফলে স্বাভাবিক নিয়ম অনুযায়ী শীঘ্রই তার অনেক বন্ধু জুটে গেল। যার নিকট অর্থ থাকে তার বন্ধু-বান্ধবের অভাব থাকে না। তারা আপনা হতে এসে জুটে যায়। এরূপ ক্ষত্রে স্বার্থপর ও দুশ্চরিত্র বন্ধুদেরই আবির্ভাব ঘটে বেশি। কাবুসের শিক্ষকগণ অবস্থা দেখে তার পিতাকে কাবুসের ব্যাপারে হস্ত কিছুটা সঙ্কুচিত করতে পরামর্শ দিলেন।

কিন্তু সে তাঁদের এ পরামর্শ গ্রহণ না করে পূর্বের মতই পুত্রের হাতে ব্যয়ের সুযোগ রেখে দিল। ফলে দেশের দুশ্চরিত্র ও লম্পট বালক এবং যুবকগণ তার নিকট এসে ভিড় জমিয়ে দিল। তারা তাকে প্রতি মুহূর্তে অসতকার্য ও অন্যায় আচরণে উদ্ধুদ্ধ করতে লাগল এবং আপাতমধুর বাক্যে ভুলিয়ে তাকে কুপথের দিকে নিয়ে চলল। এখন আর তার শিক্ষা বা শিক্ষকদের উপদেশাদির দিকে মনোযোগ রইল না। এতে তাঁরা তার সাথে কঠোর আচরণ করতে চাইলে সে তাদের প্রতি পুর্ব্যবহার আরম্ভ করল।

শিক্ষকগণ দেখলেন, আর কাবুসের শিক্ষকতা করা চলবে না। অতএব তারা পিতার নিকট অবস্থা জানিয়ে বিদায় হয়ে গেলেন।

পিতার তখন শিক্ষকদের পরামর্শের কথা স্মরণ পড়ায় সে আফসুস করল যে, হায়! যদি তাদের কথামত পূর্ব হতে ব্যবস্থা করতাম তবে এরূপ ঘটত না। কিন্তু সুযোগ হারিয়ে পরে আফসুস দ্বারা কি লাভ হবে? পিতা পুত্রের সংশোধনের আর কোন পথ দেখল না।

You may also like...

দুঃখিত, কপি করবেন না।