কাবুসের বিবাহ প্রস্তাব-শেষ পর্ব
ঘটকের মূল বক্তব্যব শ্রবণ করে সহসা মোজাহাম যেন কেঁপে উঠলেন। মুহূর্তে তাঁর অন্তরে যেন কিসের আতঙ্ক উপস্থিত হল। মুখ মন্ডলের স্বাভাবিকতা বিলীন হয়ে গেল।
অতি বিচক্ষণ এবং সজাগ ঘটকের তা দৃষ্টি এড়াল না। সুতরাং সে মোজাহাম কিছু বলার আগেই আবার তার বক্তব্য আরম্ব করে দিল। দেখুন! কাবুসের পিতা সমাজের যথেষ্ট মান্য-গণ্য এবং প্রতিপত্তিশালী লোক।
তার অপরিমিত ধন সম্পদ, ভূমি-ক্ষেত ও পশুপালনের কথা দেশের সবাই জানে। তার তুল্য ধনিক ব্যক্তি এ অঞ্চলে আর কেউ আছে বলে আমি বিশ্বাস করি না। যদি তার সাথে আত্নীয়তা সূত্রে আপনি আবদ্ধ হন তবে তার ঐ অর্থের দ্বারা আপনিও নানাভাবে উপকৃত হবেন। এরূপ ইঙ্গিত দিয়েই তিনি আমাকে পাঠিয়েছেন। যদি প্রয়োজন মনে করেন তবে সম্পর্ক স্থাপনের পূর্বাহ্নেই এরূপ কোন পাকাপোক্ত ব্যবস্থা করে নিতে পারেন। তিনিও তাতে সন্তুষ্টচিত্তে রাজী থাকবেন।
আমার বিবিচনায় আপনার এ সুবর্ণ সুযোগটি গ্রহণ করা উচিত। ঘটকের শেষের এ প্রলোভনসুলভ বাক্য সমূহ মোজাহামের কর্ণেই পৌঁছে ছিল কিনা সন্দেহ; যেহেতু তিনি ঘটকের মুখে মূল বক্তব্য শ্রবণ করে জড় পাথরের মত দশাপ্রাপ্ত হয়েছিলেন। তিনি সমস্ত ভাবচা চিন্তা এবং ধারণা-খেয়াল বিস্মৃত হয়ে মনে মনে শুধু একটি কথাই বার বার ওলট-পালট করছিলেন যে, তাঁর কন্যা আছিয়ার জন্য কাবুসের মত পাত্রের পক্ষ হতে বিবাহ প্রস্তাব আসল এবং তা তার নিজের কানেই শুনতে হল? এমন যোগ্য কন্যার বর হবার উপযুক্ত পাত্র তো সারা মিশর খুঁজেও পাওয়া যায় কিনা সন্দেহ।
সেক্ষেত্রে এমন একটি লম্পট এবং দুশ্চরিত্রে যুবকের কাছে সে কন্যাকে বিবাহ দেয়ার কথা মনে কম্পনাও তো করা মুশকিল। তাঁর মুখ হতে কোন জবাব বের হল না। তিনি নীরব হয়ে শুধু ভাবতেই লাগলেন। ঘটক কোন জবাব না পেয়ে এক দৃষ্টে তাঁর মুখের দিকে তাকিয়ে রইল। কিছুক্ষণ অপেক্ষা করে অবশেষে বলল, জনাব! এত ভাবছেন কি? এ প্রস্তাব আপনার পক্ষে হানিকর নয়।
কাবুসের সাথে সম্পর্ক করতে যে কোন লোকই আগ্রহ করবে। যদিও সে আপনাদের গোত্রের লোক নহে তবু একথা সত্য যে, কাবুসের পিতার চরিত্র উত্তম এবং গুণ-গরিমার অভাব নেই। অতএব এ সম্পর্কে কেউই আপনাকে অবজ্ঞা করতে পারবে না। তারপর কাবুসের নিজের স্বভাবে যে সব ত্রুটি রয়েছে বুদ্ধিমতি ও গুণবতী স্ত্রীর প্রভাবে অচিরেই তা দূরীভূত হবে।
এবার মোজাহাম বললেন, দেখ! তুমি যত কিছুই বল না কেন, আমি পিতা হয়ে আমার কন্য আছিয়ার মত পাত্রীকে কাবুসের মত একটি পাত্রের কাছে সমর্পণ করতে পারি না। ইহা আমার জন্য আমানতের খেয়ানত স্বরূপ হবে। তুমি গিয়ে কাবুসের পিতার নিকট জানিয়ে দাও আমি তার এ প্রস্তাবটিকে রক্ষা করতে সক্ষম নই। একরকম বলে কয়েও ঘটক যখন মোজাহামকে সম্মত করাতে পারল না তখন তার করার কিছু ছিল না। অতএব সে তার নিকট হতে বিদায় হয়ে কাবুসের পিতার নিকট গমন করল এবং মোজহামের অসম্মতির কথা জানিয়ে দিল।
কাবুসের পিতা এ অসম্মতিকে তার নিজের জন্য অপমানকর বলে মনে করল ও মনে মনে মোজহামের প্রতি ক্ষুব্ধ এবং ক্রুদ্ধ হয়ে উঠল। সে প্রতিজ্ঞা করল, ছলে বলে যেভাবেই হোক মোজাহাম-কন্যাকে কাবুসের বধুরুপে গৃহে এনে মোজহামের এ গর্ব চূর্ণ করে দিব।