কাবুসের বিবাহের তৎপরতা শুরু-শেষ পর্ব

ঐ লোকগণ যথাসময়ে এ সাবধান বাণী মোজাহামকে জানিয়ে আসল। এদিকে কাবুসের পিতা কতিপয় বনি ইসরাইল বংশীয় ব্যক্তিকে তার বাড়ীতে আহ্বান করল। তারা উপস্থিত হলে বলল, দেখুন! আমরা আপনাদের সাথে ক্রিয়া কর্ম ও আত্নীয়তার বন্ধন দ্বারা সম্পর্ক স্থাপন করতে চাই। আপনারাই তাতে প্রতিবন্ধক হয়ে আমাদের প্রচেষ্টাকে ব্যাহত করেন, যার ফলে এ দু’সম্প্রদায়ের মধ্যে মিত্রতার ভাব সৃষ্টি হচ্ছে না। এজন্য আমরা মোটেই দায়ী নই।

এ অবস্থার জন্য আপনারাই দায়ী। সাম্প্রতিক ঘটনা দেখুন। আমার পুত্র কাবুসের পক্ষ হতে মোজাহাম কন্যা আছিয়ার উদ্দেশ্যে বিবাহ প্রস্তাব পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু সে তা অবজ্ঞার সাথে প্রত্যাখ্যান করেছে। এতে কিবতী সম্প্রদায়ের লোক তার উপরে ভীষণ রকম চটে গিয়েছে। এ ঘটনার পরিণতি কি যে মারাত্নক আকার ধারণ করবে আমি তা জানি না; যতদূর মনে হয় অতি শীঘ্রই মোজাহাম এক চরম বিপদে পতিত হবে। আপনারা তাকে বুঝিয়ে বলুন, তিনি ধীর-স্থিরভাবে চিন্তা করে যেন নিজের মতের পরিবর্তন করেন। তাতে কল্যাণ ছাড়া অকল্যাণ হবে না। এতে আমার দ্বারাই তাঁর বহুবিধ উপকার ও সাহায্য মিলবে।

কিন্তু সে সতই বলুক তার পুত্র কাবুসের চরিত্রের কথা বনি ইসরাইলদের কারও কাছেই অজানা নয়। কাজেই আছিয়ার মত কন্যারত্ন তার নিকট অর্পণ করা কোন পিতার পক্ষে সম্ভব নহে এ কথা তারা জানতেন। সুতরাং কেউই তার এ প্রস্তাবে সায় যোগাতে পারল না। কয়েকজনের ইচ্ছা হল, কাবুসের পিতার মুখের উপরেই প্রতিবাদ করেন। কিন্তু তাও হয়ে উঠল না । যেহেতু সে অন্যান্য কিবতীদের ন্যায় ইতিপূর্বে তাদের সাথে অসৎ আচরন দেখায়নি। তদুপরি অনেকেই তার নিকট হতে অর্থ নিয়ে ব্যবসা করতেছেন। কেউবা বিভিন্ন রকম ধার-কর্জ গ্রহণ করেছেন।

তাছাড়া মাত্র কয়দিন পূর্বে তার বাড়ীতে প্রত্যকেই জিয়াফত খেয়ে গিয়েছেন। এ সব বিভিন্ন কারণেই তারা কাবুসের পিতার নিকট দুর্বল ছিলেন। তাই তার মুখের উপর এ ধরণের প্রতিবাদ করা কারও দ্বারাই হয়ে উঠল না; উপরন্তু কাবুসের পিতা সে কথাও ব্লল যে, দেখুন! আমি আপনাদের কারও শত্রু নহি। বরং যতদূর সম্ভব সকলেরই সাহতে মিত্রের মত ব্যবহার করতেছি। যতটুকু পারি আপনাদিগকে উপকারও করতেছি। অতএব আশা করি যাতে আমার এ কার্যটি সম্পন্ন হতে পারে আপনারা তার চেষ্টায় কোণ ক্রুটি করবেন না।

এ কথায় বনি ইসরাইলগণ আরও বেশী দুর্বল হলেন। এবার তাদের মধ্য হতে অনেকেই বললেন, জাপনি নিশ্চিন্ত থাকুন আমরা যেভাবেই হোক মোজাহামকে রাজী করিয়ে তার কন্যাকে কাবুসের সাথে বিবাহ দিয়ে দিব।

কাবুসের পিতা এ কথাটিই তাদের মুখে শুনতে চাচ্ছিলেন। এবার সে খুশী হয়ে তাদিগকে যাবার অনুমতি দিল।

বনি ইসরাইলগণ যাবার পথে সকলে মিলে এ সিদ্ধান্তে আসলেন যে, তারা কাবুসের পিতার ইচ্ছায় বাধ সাধিবেন না বরং মোজাহামকে এখনি পরামর্শ দিয়ে যাবেন, যেন তিনি আছিয়াকে কাবুসের কাছে বিবাহ প্রদান করেন। তা না হলে কাবুসের পিতা দাদের প্রতি বিরাগ হতে পারে এবং তাতে তারা নানা প্রকার বিপদাপন্ন হবেন।

এরূপ পরামর্শের পরে সত্যই তারা মোজাহামের গৃহে গমন করলেন এবং তাঁকে অনেক রকম বুঝিয়ে শুনিয়ে কাবুসের কাছে কন্যাদানের পরামর্শ দিলেন।

মোজাহাম এবার বেশ ভালভাবেই উপলব্ধি করলেন যে, কাবুসের পিতা তাঁর স্বগোত্রীয় লোকগণকে যেভাবেই হোক হস্তগত করেছে এবং তজ্জন্যই তারা তাঁকে এ পরামর্শ দিল। একদিকে কিবতীগণের ভীতি প্রদর্শন, অন্যদিকে স্বগোত্যীয়দের অনুরোধ ও পরামর্শ দান; দু’দিক হতে তাঁর উপরে এরূপ চাপ সৃষ্টি করতঃ কাবুসের পিতা আপন উদ্দেশ্য সাধন করতে চাহে।

মোজাহাম চিন্তা করে এ সঙ্কট হতে পরিত্রাণ লাভের কোন উপায় দেখলেন না। তাঁর নিকট তখন চারদিক যেন অন্ধকার হয় আসল। কি করবেন তিনি ভেবেই পেলেন না। নিজের সন্তান তিনি বাপ হয়ে কেমন করে নরককুন্ডে নিক্ষেপ করবেন? নির্জীবের মত তিনি বসে শুধুই ভাবতে লাগলেন। কিছুক্ষণ পরে তাঁর পত্নী এসে বনি ইসরাঈলদের কথা শ্রবণ করে তিনিও চুপ হয়ে বসে রইলেন। আর কারও মুখেই কোন কথা সরল না। দুটি জীবন্ত প্রাণ যেন মৃতের মত হয়ে পড়ল।  

কাবুসের বিবাহের তৎপরতা শুরু- প্রথম পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক করুন

You may also like...

দুঃখিত, কপি করবেন না।