কাঠুরে মহারাজ

বোধিসত্ত্ব একবার রাজা ব্রহ্মদত্তের ছেলে হয়ে জন্মান। অবশ্য তাঁর এই জন্মগ্রহণের ঘটনাটা ছিল বেশ নাটকীয়। রাজা ব্রহ্মদত্ত একবার বনের মধ্যে বেড়াতে গিয়েছেন। পরে ক্লান্ত হয়ে ফিরে আসছেন, এমন সময় হঠাৎ দেখলেন ঐ বনের মধ্যে এক যুবতী গান গাইতে গাইতে কাঠ কুড়োচ্ছে। ব্রহ্মদ্ত্ যুবতীর রূপে মুগ্ধ হলেন। তাকে গান্ধর্বমতে বিয়ে করলেন। কিছুদিন পরে মেয়েটি গর্ভবতী হর। বোধিসত্ত্ব তার গর্ভে তখন চাঁদের কলার মত বৃদ্ধি পাচ্ছে। রাজা ব্রহ্মদত্ত শুনলেন মেয়েটি গর্ভবতী হয়েছে, তখন তাকে নিজের নাম লেখা একটি আংটি দিলেন। বললেন, “যদি তোমার মেয়ে হয় তাহলে এই আংটি বিক্রি করে সেই টাকায় তাকে বড় করবে আর যদি ছেলে হয় এই আংটি সমেত তাকে আমার কাছে নিয়ে আসবে।’ যথাসময়ে বোধিসত্ত্ব জন্ম নিলেন। এদিন মায়ের কোল থেকে নেমে খেলতেও শুরু করলেন। একটু বড় হতে, পাড়ার ছেলেরা তাকে ‘বাবার ঠিক নেই’ বলে রাগাত। এতে বোধিসত্ত্ব খুবই দুঃখ পেলেন। একদিন তিনি মাকে জিজ্ঞাসা করলেন, ‘মা, আমার বাবা কে?’ মা বলল, ‘বাবা, তুমি রাজার ছেলে।’ ‘তার প্রমাণ কি মা?’ ‘দেখ বাবা, রাজা যখন আমাদের ছেড়ে বলে যান, তিনি এই আংটিটি দিয়ে গিয়েছিলেন।

আংটিতে তাঁর নাম লেখা আছে। তিনি বলেছিলেন মেয়ে হলে ঐ আংটি বেচে তার ভরণপোষণ করতে আর ছেলে হলে তাকে যেন তাঁর কাছে আংটি সমেত নিয়ে যাই।’ ‘তাহলে তুমি আমাকে রাজার কাছে নিয়ে যাচ্ছ না কেন?’ বোধিসত্ত্বের মা দেখল তার বাবাকে দেখবার জন্য খুবই আকুল হয়ে উঠেছে। তাই আর দেরি না করে ছেলেকে সঙ্গে নিয়ে সে রওনা দিল। রাজার বাড়িতে পৌছে রাজাকে খবর পাঠাল। রাজার অনুমতি পাওয়া মাত্র সিংহাসনের কাছে গিয়ে প্রণাম করে বলল, ‘মহারাজ, এই আপনার ছেলে।’ রাজসভায় সকলের মধ্যে লজ্জায় পড়ে যাবেন ভেবে মহারাজ সব কিছু জেনেও না জানার ভান করলেন, “সে কি কথা? এ আমার ছেলে হতে যাবে কেন?’ বোধিসত্ত্বের মা তখন বলল, ‘মহারাজ, তাহলে এই দেখুন আপনার নাম লেখা আংটি।’ রাজা এতে আরো অবাক হওয়ার ভান করে বললেন, ‘এই আংটি তো আমার নয়।’ বোধিসত্ত্বের মা তখন নিরুপায়। সে বলল, ‘এখন দেখছি ধর্ম ছাড়া আমার আর কোন সাক্ষী নেই। তাই ধর্মের দোহাই দিয়ে বলছি যদি এই ছেলে আপনার না হয় তাহলে সে যেন শূন্যে স্থির থাকে, না হলে মাটিতে আছড়ে পড়ে সে মারা যাক।’ এই বলে সে বোধিসত্ত্বের পা দুটি ধরে শূন্যে ছুঁড়ে দিল। শূন্যে উঠে বোধিসত্ত্ব স্থির হয়ে রইলেন। সেখানে বীবাসনে বসে তিনি মধুর স্বরে ধর্ম কথা বলতে বলতে মহারাজকে বললেনঃ ‘রাজা, আমি তোমারই ছেলে। আমার মা তোমার ধর্মপত্নী’ শুনে রাজা বললেন, ‘আমার কোলে আয় বাছা।; রাজার দেখা দেখি অনেকেই বোধিসত্ত্বকে কোলে নেবার জন্য হাত বাড়িয়ে দিল। কিন্তু বোধিসত্ত্ব নেমে এলেন রাজার কোলেই। বোধিসত্ত্বকে রাজা যুবরাজ করলেন। তাঁর মা কে করলেন রাজরাণী। একদিন ব্রহ্মদত্ত দেহ রাখলেন। বোধিসত্ত্ব তখন রাজ সিংহাসনে বসলেন। তাঁর নাম হল কাঠুরে মহারাজ। জাতকের এই গল্পটির সঙ্গে মহাভারতের দুষ্মন্ত-শুকুন্তলা উপাখ্যানের বেশ মিল আছে।

"আলোর পথ"-এ প্রকাশিত গল্পসমূহ ও লেখনী মূলত পাঠক, শুভানুধ্যায়ী এবং সম্মানিত অবদানকারীদের কাছ থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে। এই কনটেন্টগুলোর উপর আমরা কোনো মেধাসত্ত্ব (copyright) দাবি করি না। যদি কোনো গল্প, ছবি বা তথ্যের কপিরাইট সংক্রান্ত বিষয়ে আপনার প্রশ্ন, সংশয় বা আপত্তি থাকে, তাহলে অনুগ্রহ করে আমাদের যোগাযোগ পৃষ্ঠায় যোগাযোগ করুন। আমরা যথাযথ আইনানুগ পদ্ধতিতে বিষয়টি পর্যালোচনা করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করব।

দুঃখিত!