কাইল্লা চোরা(পর্ব:-০২)-সোহেল রানা

কয়েকদিনেই গ্রামের সবার কাছে কালু নিজেকে চোর হিসেবে চিনিয়ে দিলো। লোকের বদনা থেকে শুরু করে গরু, ছাগলও বাদ রাখেনি চুরি করতে। পারলে সে লোকের টয়লেটও চুরি করে নিয়ে যেতো। তবে টয়লেট চুরির চিন্তা তার মাথায় যে আসেননি, তা কিন্তু নয়। হাতে গ্লাভস লাগিয়ে টয়লেটের সবকিছু পার্ট পার্ট করে খুলে নিয়ে যাওয়ার চিন্তা করেছে সে ইদানীং।

তার এমন অত্যাচারে গ্রামটার সব লোক অসহ্য হয়ে উঠেছে। একদিন গ্রামের সকলে মিলে একটা মিটিং-এ বসলো। সবাই মিলে পরিকল্পনা করতে লাগলো—এই চোরকে কী করা যায়। একজন উঠে বললো,
— “এই চোরকে ধরার পর বাঁচিয়ে রাখা যাবে না। আমাদের ঘরের এমন কোনো জিনিস নেই এই শালার চোর চুরি করে নিয়ে যাচ্ছে না। প্রতিটা ঘরে বদনা চুরি হয়েছে। নতুন বদনা কিনতে কিনতে বাজারেও ঘাটতি দেখা গেছে। বলি শালার চোর, তোর হাগু করার সময় কয়টা বদনার পানি লাগে? এতগুলো বদনা দিয়ে তুই কী করবি?”

আরেকজন উঠে বললো,
— “আরে বদনা তো তাও প্রয়োজন পড়লে আসবে ওর। কিন্তু মেয়েদের ব্লাউজ নিয়ে এই শালা কী করবে? আমার বউ বাইরে ব্লাউজ শুকাতে দিয়েছিল, কিন্তু কিছুক্ষণ পর এসে দেখে ব্লাউজটা নেই।”

এভাবে একজন একে করে অভিযোগ তুলতে লাগলো। শেষে আরেকজন উঠে বললো,
— “আরে ভাই, ও তো তোমাদের তবুও ইজ্জত নিয়ে গেছে। আমার তো প্রথম দিনেই শরীর থেকে লুঙ্গি খুলে নিয়ে গেছে। কত বড় চোর ভেবে দেখো। আমি লুঙ্গিটা পরে ঘুমাচ্ছিলাম—হঠাৎ ও এসে টান মেরে নিয়ে গেল! ভাগ্যিস আমার জায়গায় আমার বউ ছিল না।”
— “না, না, এমন চোরকে বাঁচিয়ে রাখা যাবে না। মেরে ফেলতে হবে।” অনেক কণ্ঠ একসাথে বলে উঠলো। সবাই কালু চোরাকে মারার জন্য উঠেপড়ে লাগলো। শুধু একবার ধরতে পারলেই হবে।

একদিন কালু চোরা ঠিকই ধরা পড়লো। সবাই যে তাকে ধরার জন্য পরিকল্পনা করেছে, তা সে জানতো না। লোকদের ঘরে ঘরে দামি জিনিসগুলোও বাইরে ফেলে রাখত, শুধু ওকে ধরার জন্য। ও চুরি করতে গেলেই ধরে ফেলবে—এই ফাঁদটা কালু বুঝতে পারেনি। এক ঘরের দরজার বাইরে দামি একটা জিনিস পড়ে থাকতে দেখে সে চুরি করতে গেল। তখনই কোথা থেকে যেন কয়েকজন এসে তাকে ধরে ফেললো।

লুঙ্গিটা উপরে তুলেই সে পালাতে চাইলো—তখন দেখলো, একজন তার লুঙ্গি ধরে আছে। টান মেরে সে কালুর লুঙ্গিটা খুলে নিলো। তারপর হাসতে হাসতে বললো,
— “কোথায় পালাবি বাছা? আমার শরীর থেকে লুঙ্গি টান মেরে নিয়ে গেছিলি না? আজ তোরটাও খুলে নিলাম। সবাই মিলে আজ তোকে আলুভর্তা বানাবো।”

কালু সবার দিকে ফ্যালফ্যাল করে তাকাতে লাগলো। এটা তো সে ভাবেনি। এখন কী হবে? সে দেখলো ঝাঁকে ঝাঁকে লোক আসতে লাগলো তাকে মারার জন্য। সে কিছু বলার আগেই সবাই মিলে তাকে মারতে লাগলো। লাঠিসোঁটা, ইট, পাথর—যে যা পেয়েছে তাই দিয়ে সবাই মারতে লাগলো কালুকে। এতদিনের জমে থাকা রাগটা সবাই আজ মিটিয়ে নিচ্ছে। এতো মার খাওয়ার পর কালু আর বেঁচে থাকলো না। দেহটা তাদের হাতে ছাড়লো—পরকালে চলে গেল। মরার আগ মুহূর্তে কালু ভেবেছে, সেদিনের মুরগিটা তাকে অভিশাপ দিয়েছে বলে তাকে এভাবে মরতে হচ্ছে। তারপর সবাই মিলে কালুর দেহটাকে কবর দিলো।

এদিকে ধলু—বেচারা—সব এলাকায় মার খেতে খেতে এই এলাকায় এসে হাজির হলো, যে এলাকায় কালুকে মারা হয়েছে। ধলু চিন্তা করলো, এই এলাকায়ও হয়তো তার ভাই চুরি করেছে। এখন এই এলাকায় ঢুকলেই সবাই তাকে আবার মারবে। কিন্তু রাত হয়ে গেছে, সে এখন কোথায় থাকবে? ভাবতে ভাবতে সে কবরস্থানে চলে এলো। এটাই নিরাপদ জায়গা। এখানে কেউ তাকে মারতে আসবে না—এমনটাই সে ভেবেছিল। নতুন একটা কবর দেখলো কবরস্থানে। কবরটার উপর গিয়ে সে শুইয়ে পড়লো। কাঁদতে কাঁদতে কবরের উদ্দেশ্যে বললো,
— “কবর রে, তুই দুই ফাঁক হয়ে যা, আমিও ঢুকে পড়ি তোর ভেতর।”

কবরস্থানের পাশ দিয়ে তখন হেঁটে যাচ্ছিল দুই লোক। তারা থমকে দাঁড়ালো। একজন আরেকজনকে বললো,
— “এই কবরস্থান থেকে কারও শব্দ শোনা গেল না?”
— “হ্যাঁ, তাই তো…”

হালকা আলোতে তারা দেখলো—কালুর কবরের উপরে যেন কিছু একটা শুয়ে আছে মানুষের মতো। কবরের দিকে লাইটের আলো ফেলতেই ধলু উঠে বসলো। হায়রে! এই কবরস্থানে এসেও শান্তি পেল না সে। ধরা খেয়ে গেল। কিন্তু লোক দুইটার অবস্থা তখন দেখার মতো—তারা ভয় পেয়ে বললো,
— “ভাইরে, কালু চোরা কবর থেকে উঠে এসেছে। ও আত্মা হয়ে ফিরে এসেছে। এখন আমাদের কাউকে ছাড়বে না।”
— “চল ভাই, পালাই—এখানে থাকলে প্রথম আমাদেরকেই মারবে ও।” বলেই আর অপেক্ষা করে না, পালিয়ে গেল তারা দৌড়ে।

তাদের দৌড়াতে দেখা পেয়ে ধলু ভাবলো, ওরা হয়তো আরও লোক এনে তাকে মারবে—আর কারো হাতে ধরা পড়লে তার আর শিষ নাই…

(চলবে…..)

"আলোর পথ"-এ প্রকাশিত গল্পসমূহ ও লেখনী মূলত পাঠক, শুভাকাংখী এবং সম্মানিত আবেদনকারীদের কাছ থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে। এই কনটেন্টগুলোর উপর আমরা কোনো মেধাসত্ত্ব (copyright) দাবি করি না। যদি কোনো গল্প, ছবি বা তথ্যের কপিরাইট সংক্রান্ত বিষয়ে আপনার প্রশ্ন, সংশয় বা আপত্তি থাকে, তাহলে অনুগ্রহ করে আমাদের যোগাযোগ পৃষ্ঠায় যোগাযোগ করুন। আমরা যথাযথ আইনানুগ পদ্ধতিতে বিষয়টি পর্যালোচনা করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করব।

দুঃখিত!