কাঁপতে শেখা–জার্মানের রূপকথাঃ ১ম পর্ব


একটি লোকের ছিল দুই ছেলে। বড়োটি চালাক-চতুর। ছোটোটা হাবাগোবা। কিছুই সে বোঝে না, কিছুই পারে না শিখতে। তাকে দেখে লোকে বলে, “ছেলেটার জন্যে বাপের কপালে অনেক দুঃখ আছে।”

কোনো কিছু করার দরকার হলে ডাক পড়ে বড়ো ছেলের । কিন্তু কোনো জিনিস অনার জন্য সন্ধে কিংবা রাতে তার বাবা যেতে বললে আর পথটা গিজের কবরখানা বা সেরকম কোনো গা-ছমছমে জায়গার ভিতর দিয়ে গিয়ে থাকলে সে বলে ওঠে, “বাবা, আমার শরীর কাঁপছে।” কারণ ছোট ছেলেটি ছিল ভীতু । সন্ধেয় আগুনের চার পাশে বসে লোকে যখন ভয়ংকর সব ভয়ের গল্প বলে, শ্রোতাদের মধ্যে কেউ হয়তো বলে ওঠে, “গুনে আমার গা কাঁপছে । ছোটো ছেলেটি তখন এক কোণে বসে লোকেদের কথাবার্তা শোনে, কিন্তু তার মাথামুণ্ডু কিছুই বুঝতে পারে না । প্রায়ই তাকে বলতে শোনা যায়, “সবাই বলে, “গাঁ কাঁপছে, গা কাঁপছে । কই, আমার তো কখনো গা কাঁপে না, কাপুনি ধরে না । ব্যাপারটা নিশ্চয়ই এক জাতের শিল্পকলা, যেটা আমি বুঝি না।”

 

একদিন বাবা তাকে বলল, “ওরে শোন । তুই আর এখন নেহাত খোকাটি নোস্ । দিব্যি গাট্টাগোট্টা বড়োসড় হয়ে উঠেছিস্ । কিছু একটা শেখ, যাতে রুজি-রোজগার হয় । তোর বড়ো ভাইকে দ্যাখ, শেখবার জন্যে কী পরিশ্রমই-না করে । কিন্তু জানি, তোকে উপদেশ দেওয়া বৃথা ।”

ছোটো ছেলে বলল, “ঠিক বলেছ বাবা, কিছু একটা জিনিস শেখার আমারও খুব ইচ্ছে। সম্ভব হলে শিখতে চাই, কী করে কাঁপতে হয় । কারণ কাঁপতে আমি জানি না ।”

কথাগুলো শুনে, তার বড়ো ভাই তো হেসে কুটোপাটি । ভাবল, “বোকামিতে ভাইটার জুড়ি মেলা ভার । জীবনে কিচ্ছু ও করতে পারবে না। বড়শি বানাতে হলে শুরুতেই যে দরকার লোহাকে বাঁকানো; তাদের বাবা দীর্ঘনিশ্বাস ফেলে বললেন, “একদিন কাঁপতে শিখবি ঠিকই। কিন্তু তা দিয়ে তোর রুজি-রোজগার হবে না ।”

দিন কয়েক পরে পাড়ার পুরুতমশাই তাদের বাড়িতে এলেন বেড়াতে । ছেলেদের বাবা নিজের দুঃখের কাহিনী তাকে শোনাল । বলল, তার ছোটো ছেলেটা বেয়াড়া গোছের । কিছুই সে জানে না, কিছুই চায় না শিখতে। “ভাবুন একবার,” ছেলেদের বাবা বলে চলল, “আমি তাকে জিজ্ঞেস করেছিলাম—কী করে রুজি-রোজগার করবি ? সে বলে—‘কী করে কাঁপতে হয় শিখব’ ”

পুরুতমশাই বললেন, “তাই যদি চায়, আমি তাকে কাঁপতে শিখিয়ে দেব। আমার সঙ্গে সে চলুক।’

ছেলেদের বাবার তাতে আপত্তি ছিল না । ভাবল, কিছু না . হোক, ওখানে গেলে স্বভাবটা তো খানিক শুধরোবে । পুরুতমশাই তাকে বাড়ি নিয়ে গিয়ে গিজের ঘণ্টা বাজাবার কাজ দিলেন ।

দিন কয়েক পরে মাঝরাতে ঘুম থেকে তুলে পুরুতমশাই তাকে পাঠালেন গির্জের ঘণ্টাঘরে ঘণ্টা বাজাতে । মনে মনে বললেন, ‘কাঁপতে তোকে শেখাচ্ছি। তার পর তার আগেই চুপি চুপি সেখানে তিনি হাজির হলেন । ঘন্টাঘরে উঠে দড়িটা মুঠো করে ধরতে গিয়ে ছেলেটা দেখে জানালার উলটো দিকের সিঁড়িতে সাদামতো একটা মূর্তি দাঁড়িয়ে আছে । i

ছেলেটা চেঁচিয়ে উঠল, “কে ওখানে ?” কিন্তু সেই শ্বেতমূতি কোনো উত্তর দিল না, নড়লও না ।

ছেলেটা আবার চেঁচিয়ে বলল, “উত্তর দাও, নয়তো ভাগো । রাতে তোমার এখানে আসার কথা নয়।” কিন্তু পুরুতমশাই স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে রইলেন। চেয়েছিলেন ছেলেটা মনে করে তিনি ভূত । ‘

ছেলেটা দ্বিতীয়বার প্রশ্ন করল, “এখানে কী চাও ? ভালো লোক হলে উত্তর দাও

 

গল্পের ২য় অংশ পড়তে এখানে ক্লিক করুন।

দুঃখিত!