কবি

তারা দুই বন্ধু ছিলো। একদিন তারা স্থির করলো,তারা দু’জন কবি হবে। অতএব দুজনই কবিতা লেখা শুরু করলো। একদিন প্রথম বন্ধু,দ্বিতীয় বন্ধুকে বললো-“চল,গাঁজা খাই।” – “সে কী !! গাঁজা খাবে কেনো ??” – “কেন মানে ?? তুই কবি হতে চাস না ??” – “হ্যাঁ, চাই। তাই বলে গাঁজা খেতে হবে নাকি ??” – ” ইশটুপিড ! এসব না খেলে তুই কবিতা লিখবি কি করে ?…কবি হতে গেলে সবরকম অভিজ্ঞতারই দরকার ।” – “অভিজ্ঞতাই কি সব ?? আমার কী কবি চেতনা নেই ??” – “আরে রেখে দে তোর চেতনা। ‘সৃষ্টিশীল’ হওয়ার চেষ্টা কর। তারজন্যে ভালোমন্দ সব কাজই করা উচিত।”

“সৃষ্টিশীল হতে গেলে আর কি কি করতে হবে ?” – “…তোকে বড় বড় চুল রাখতে হবে, লোকজনের সাথে ভীষণ দুর্ব্যবহার করতে হবে, পানশালায় রাত কাটাতে হবে, সম্পাদককে ‘ভাই’ বলে তোয়াজ করে তার পত্রিকায় তোর কবিতা ছাপানোর ব্যবস্থা করতে হবে …-এইসব।” – “না না ভাই, এসব আমি করতে-টরতে পারবো না। …আমি কেলাশ করতে চললুম।” – “তবে যা,যা বলছি কেলাশে ! …ইহ, এই কেলাশ করে করে উনি কবি হবেন। শুনে রাখ,আমি একদিন কবি হবোই হবো। দেখবি- আমার কবিতা একদিন লোকের মুখে মুখে ফিরবে। …আমি হবো অবিরাম সৃষ্টিশীল।” অতএব, প্রথম বন্ধু নানাবিধ কর্মকান্ডের মাঝে অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করে কবিতা লিখতে লাগলো।

অপরদিকে, দ্বিতীয় বন্ধু দৈনন্দিন কাঁজের ফাঁকে সময় করে টুকটাক একটা-দুটা কবিতা লিখে চললো। এরপর দশ বছর কেটে গেলো। দ্বিতীয় বন্ধু-যে কবিতা লিখতো চেতনা দিয়ে- সে পেশায় সরকারী চাকুরে হয়েও একজন পুরোদস্তুর কবি হয়ে উঠলো। কবিতার জন্যে সে আকাডেমী পুরষ্কার পেলো, সমালোচক মহলে পেলো খ্যাতি। প্রথম বন্ধু- যে কবিতা লিখতো গাঁজা টেনে- সে ও অবশ্য কথা রাখলো। সে এখনো অবিরাম লেখে, তার রচনা আজ লোকের মুখে মুখে ফেরে- কারণ সে আজকাল নিমের মাজন আর হারপিকের বিজ্ঞাপনের ছড়া লেখক।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরো পড়তে পারেন...

ঘ্যাঁঘাসুর

এক যে ছিল রাজা, তাঁর ছিল একটি মেয়ে। মেয়েটি, হইয়া অবধি খালি অসুখেই ভুগিতেছে। একটি…

ঠানদিদির বিক্রম

আমাদের এক ঠানদিদি ছিলেন। অবশ্য ঠাকুরদাদাও ছিলেন, নইলে ঠানদিদি এলেন কোত্থেকে? তবে ঠাকুরদাদাকে পাড়ার ছেলেরা…

নরওয়ে দেশের পুরান

আমাদের দেশের পুরাণে যেমন দেবতা আর অসুরের গল্প আছে, পুরাতন নরওয়ে আর সুইডেন দেশের পুরাণেও…