বেশ শান্ত প্রকৃতির মেয়ে রূপা, বাড়ির সবাই তাকে অনেক ভালবাসে,রূপার বাবার স্বপ্ন তার মেয়ে ভাল রেজাল্ট করবে ভাল ভার্সিটি তে পড়াশুনা করবে। রূপার বাবার স্বপ্ন পুরন করার জন্য রূপা মন দিয়ে লেখা পড়া করছে। সবে মাত্র এস এস সি পরীক্ষা দিয়েছে রূপা, বাহিরে যাওয়ার কথা পড়াশুনার জন্য,, তবে বাবা মায়ের আদরের একমাত্র কন্যা তাই অত সহজে বাবা মা তাকে কোন ক্রমেই পাঠাতে চায় না।তবে বাবার স্বপ্ন পুরন করার জন্য তাকে বাহিরে পড়াশুনার জন্য যেতেই হবে।
অবশেষে ঠিক হলো ইডেন কলেজ।বাবা মাকে বিদায় জানিয়ে রূপার বাসা বগুড়া থেকে ইডেন কলেজের উদ্দেশ্য রওনা হলো। প্রথম প্রথম একটু কষ্ট হয়েছিল বাবা মা কে ছেড়ে থাকতে কিন্তু বাবার স্বপ্ন মেয়ে ডাক্তার হবে তাই সব কষ্ট কে হার মানিয়ে তাকে উপড়ে উঠতেই হবে। ঢাকায় গিয়ে রূপা সাহিত্যচর্চা শুরু করল। একাডেমিক পড়াশুনার পাশা পাশি সাহিত্যচর্চাও চালিয়ে যেতে লাগল রূপা। প্রতিদিন ই বই কিনত রূপা এভাবে চলতে চলতে দেখা গেল তার রুম এ আর যায়গা হচ্ছে না, পুরা রুম বই দিয়ে বোঝাই। রূপা চিন্তা করল অনেক বই পড়েছি এখন একটু লেখা লেখি করলে কি এমন ক্ষতি, তারপর সে ঠিক করল সে ব্লগে লেখা লেখি করবে।
অবশেষে একটি ব্লগে লেখা লেখি শুরু করল আস্তে আস্তে সে অন্যায়ের প্রতিবাদ করতে লাগল তার লেখার মাধ্যমে। এখন একজন নিয়মিত ব্লগের লেখক রূপা
কিন্তু হঠাৎ একদিন,, তার ফেসবুক আইডি তে নাম ছাড়া একটি মেসেজ আসল মেসেজে লেখা,
–
আপনি যদি এভাবে লেখা লেখি করতে থাকেন, তাহলে আপনার লাশ ও কেউ খুজে পাবে না এমন ব্যাবস্থা করে দেব।
–
এ রকম মেসেজ পেয়েও রূপা তেমন চিন্তিত ছিল না সে ভেবেছে হয়তো কেউ তার সাথে মজা করেছে। রূপা কাউকে এ কথা বলে নি, সে এগুলা কথা তেমন মনেই করে নি।
–
সাত দিন পরের কথা,রূপার বাবা ফোন দিচ্ছে রূপা কে ফোন ধরতেছে না। হয়তো কোন কাজে ব্যাস্ত তাই ফোন ধরছে না রাতে আবার ফোন করল কিন্তু তবুও ফোন বন্ধ। এবার একটু চিন্তা হচ্ছিল রূপার বাবার। তবে তাও সে চিন্তা দূর করে বলল কাল ফোন করব, এই ভেবে ঘুমিয়ে পরল। পরদিন সকালে উঠে টিভি চালু করতেই যখন রূপার হত্যার খবর পেল হেড লাইন এ,, তখন রূপার বাবা মার মুখ থেকে এক মুহুর্তের জন্য আওয়াজ বের হচ্ছিল না। রূপার বাবা মা চোখের পানিতে একাকার করে ফেলেছে কিন্তু তবুও রূপা কে আর পাবে না।
ঢাকা যাওয়ার মাত্র ৭ মাসের মধ্যেই এ রকম কিছু হবে তা কখনো কল্পনাও করে নি। রূপার বাবার স্বপ্ন ছিল তার মেয়ে ডাক্তার হবে কোথায় হারিয়ে গেল সেই স্বপ্ন। আর কখনো পুরন হবে না ডাক্তার হওয়ার স্বপ্ন। স্বপ্ন শুধু স্বপ্ন ই থেকে গেল।
টিভির হেড লাইন এ বড় বড় করে লেখা মুক্তচিন্তার লেখক ব্লগার রূপা আর নেই।এ লেখা যতবার ই পড়ছে রূপার বাবা মা ততবার ই চোখ দিয়ে অস্রু বন্যা বয়ে যাচ্ছে। আজ থেকে আর তাদের মেয়ে তাদের সাথে কথা বলবে না। শূন্য থাকবে রূপার বেড রুম। একজন বাবা মা সন্তান হারা হয়ে গেল। নিজের একমাত্র সন্তান কে হারিয়ে রূপার বাবা মা আজ নিঃস্তব্ধ।
–
রূপা কে যারা নির্মম ভাবে হত্যা করেছে তাদের বিচার চায় তার বাবা মা। রূপার হত্যার কিছুদিন পর তার হত্যাকারীরা ধরা পরে পুলিশের হাতে,, বিচার ও শুরু হয় শাস্তিও দেওয়া হয়। কিন্তু বেশ কয়েক মাস পর যখন জনতা নিশ্চুপ তখন সেই রূপার হত্যাকারীদের ছেড়ে দেওয়া হয়।
–
হয়তো রূপার হত্যাকারীরা আবারো কোন এক রূপাকে হত্যা করবে আবারো ধরা পড়বে শাস্তি হবে আবার যখন জনতা চুপ হয়ে যাবে তখন আবার ছেড়ে দেওয়া হবে। এভাবে চলতেই থাকবে,,, আর একের পর এক রূপাকে প্রাণ হারাতে হবে।
"আলোর পথ"-এ প্রকাশিত গল্পসমূহ ও লেখনী মূলত পাঠক, শুভানুধ্যায়ী এবং সম্মানিত অবদানকারীদের কাছ থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে। এই কনটেন্টগুলোর উপর আমরা কোনো মেধাসত্ত্ব (copyright) দাবি করি না। যদি কোনো গল্প, ছবি বা তথ্যের কপিরাইট সংক্রান্ত বিষয়ে আপনার প্রশ্ন, সংশয় বা আপত্তি থাকে, তাহলে অনুগ্রহ করে আমাদের যোগাযোগ পৃষ্ঠায় যোগাযোগ করুন। আমরা যথাযথ আইনানুগ পদ্ধতিতে বিষয়টি পর্যালোচনা করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করব।