বন্ধুরা, তোমরা নিশ্চয়ই খরগোশ ও কচ্ছপের দৌড় প্রতিযোগিতার সেই বিখ্যাত গল্পটি শুনেছ। কিন্তু কচ্ছপ কেন আস্তে হাঁটে তা-কি তোমরা জানো? কী বললে জানো না! আসলে না জানারই কথা। কারণ মহান আল্লাহ একেক প্রাণিকে একেক বৈশিষ্ট্য দিয়ে সৃষ্টি করেছেন।
কচ্ছপের বৈশিষ্ট্যই হচ্ছে আস্তে হাঁটা। তবে কচ্ছপের আস্তে হাঁটার কারণ খোঁজা চেষ্টা করেছে এক বাংলাদেশি। এ সম্পর্কে সে একটি গল্পও লিখে পাঠিয়েছে তোমাদের জন্য। তাহলে আর দেরি না করে প্রথমে গল্পটি শোনা যাক।
ছোট্ট এক বন্ধুর নাম অর্মিতা। পড়ে ক্লাস ওয়ানে। দুষ্টুমিতে যথেষ্ট পাকা হলেও লেখাপড়ায় বেশ ভালো। কিন্তু সমস্যা হলো ঠিকমতো পড়তেই চায় না সে। এই কার্টুন আর ওই কার্টুন দেখেই সময় কাটাতে চায়। তার ভীষণ শখ আঁকাজোখায়। ঘরের এমন কোনো কাগজ নেই যাতে সে আঁকে নি।
ভাগ্য ভালো দেয়ালে আঁকে না। আনমনে যা খুশি তাই আঁকে। আঁকার হাতও খারাপ নয়। টিচাররা তাকে প্রায়ই গিফট দেয় সুন্দর হাতের লেখা আর ছবি আঁকার জন্য। ক্লাসে সে বরাবরই ভালো করে। টিচাররা তাকে তাই ভীষণ ভালোবাসে। সেও টিচারদেরকে ভালোবাসে খুব।
একদিন তার টিচার তার আই কিউ টেস্ট করার জন্য একটা প্রশ্ন করল: ‘হোয়াই দ্য টার্টল ওয়াকস স্লো..লি’। অর্থাৎ কচ্ছপ কেন ধীরে ধীরে হাঁটে। এর জবাব তাকে পরদিন লিখে আনতে বলল। প্রশ্ন শোনার পর থেকেই কেমন যেন আনমনা হয়ে গেল অর্মিতা।
যথারীতি স্কুল বাসে বাসায় ফিরে এল কিন্তু আগের মতো তাকে আর প্রাণচঞ্চল মনে হলো না। দুপুরের খাবারের ব্যাপারেও খুব একটা আগ্রহী মনে হলো না। মা একরকম জোর করেই তাকে খাওয়াল। খাওয়ানোর ফাঁকে তাকে জিজ্ঞেস করল:
‘কী হয়েছে মা! তুমি কথা বলছো না কেন। কেউ কিছু বলেছে? সে কারণে তোমার মন খারাপ’?
অর্মিতা মায়ের কথায় শুধু ‘না’ সূচক মাথা নাড়ে, মুখে কোনো জবাব দেয় না। মা দুশ্চিন্তায় পড়ে যায়। তাড়াতাড়ি সে অর্মিতার বাবাকে ফোন করে বিষয়টি জানায়। সব শুনে বাবা ফোনে অর্মিতার সঙ্গে কথা বোলে নিজেকেই টিচারের প্রশ্নের উত্তর খোঁজার চেষ্টা করতে বলেন।
অর্মিতা ফোন রেখে দিয়ে খাতা-পেন্সিল নিয়ে বিছানায় যায়। সাধারণত সে পুতুল বুকে নিয়েই ঘুমায়, আজ সে গেছে খাতা-পেন্সিল নিয়ে। ভালোর দিকটি হলো এই…সে কারও হেল্প নিতে চায় না।
তার মাথার ভেতর ঘুর্ণিপাক খাচ্ছে কার্টুন, ঘুরপাক খাচ্ছে কমিকস আর বাবা-মায়ের বলা নানা গল্প। কোলাজ করে এখন তাকে গল্প লিখেতে হবে। একটা আইডিয়া পেয়ে যায় সে। বিছানা থেকে উঠে গিয়ে সোজা তার টেবিলে বসে যায়।
লিখতে শুরু করে দেয় সে: “শক্ত খোসার সাদা বুকের একটা কচ্ছপ। এই খোসাটাই তার বিপদের ঢাল। কচ্ছপদের নিয়ে এমনিতেই মজা করতো পাখির দল।
পাখিরা কচ্ছপকে দেখলেই বলতো: দেখেছো! আমরা কী সুন্দর করে আকাশে উড়ে বেড়াই, আর তুমি কিনা… বেচারা কচ্ছপ…। এই বলে পাখিরা হেসে দিতো…
কচ্ছপের খুব খারাপ লাগত, কিন্তু কিছুই করার ছিল না তার। আল্লাহ তাকে এরকম করেই তো বানিয়েছেন। এখানে তো তার হাত নেই।
একদিন ঈগল আর ফ্লেমিংগোসহ আরও অনেক পাখি কচ্ছপের সাথে একটু মজা করতে চাইলো। তারা সবাই কচ্ছপের কাছে গিয়ে বলল: কী কচ্ছপ! দেখেছো কারা সুদূর আকাশের নীলে উড়ে বেড়ায়?
কচ্ছপ বললো: কেন বলছো এসব। তোমরা দেখছো না আমার পাখা নেই! পাখা থাকলে তো আমিও আকাশে উড়তাম।
পাখিরা বললো: তুমি উড়তে চাও?
-হ্যাঁ আমিও উড়তে চাই।
ঈগল কচ্ছপের কথা শুনে পাখিদের বলল: এ..ই! তোমরা সবাই তোমাদের একটা করে পালক ছিঁড়ে কচ্ছপের দুই হাতে পরিয়ে দাও!
ঈগলের আদেশে পাখিরা তাদের পাখা থেকে একটা একটা করে পালক ছিঁড়ে নিয়ে কচ্ছপের হাতে পায়ে বিঁধে দিল।
এবার ফ্লেমিংগো কচ্ছপকে বলল: ‘তোমার পালকময় হাত দুটোকে উপর-নীচে দোলাও, তাহলেই উড়তে পারবে’।
কচ্ছপ পাখার মত তার হাত দুটোকে দুলিয়ে দেখল উড়তে পারছে। খুশি হয়ে গেল কচ্ছপ। এবার ঈগল চিৎকার করে বলল: সবাই কি প্রস্তুত!
কচ্ছপসহ সব পাখি জবাব দিল: জ্বি আমরা সবাই প্রস্তুত।
ঈগল আবারও চীৎকার করে বলল: ও কে! রেডি… স্টিডি.. গো..!
‘গো’ বলার সাথে সাথে পাখিরা উড়াল দিল। কচ্ছপও উড়তে শুরু করল পাখিদের সাথে। অদ্ভুতরকমভাবে দেখা গেল কচ্ছপ পাখিদেরও ছেড়ে গেছে। সবার আগে কচ্ছপ পৌঁছে গেল মেঘের ওপর। সেখানে ছিল নানা রকমের ফলমূল। কচ্ছপ পাখিদের আগে আগে পৌঁছে সেই ফলগুলো খেয়ে ফেলল।
ফল খাবার পর কচ্ছপের বুকের শক্ত খোসাটা আরেকটু হেভি হলো। ফল খাবার পর কচ্ছপের ঘুমঘুম ভাব হলো এবং ঝিমিয়ে পড়ল। কিছুক্ষণ পর পাখিরা এসে পৌঁছালো মেঘের দেশে। তারা গিয়ে দেখলো কচ্ছপ ঝিমাচ্ছে। আর সেখানে রেখে দেয়া ফলগুলো নেই। পাখিরা চিৎকার করে কচ্ছপকে ডাকলো: এই কচ্ছপ!
কচ্ছপ জেগে গেল। কিছুই বুঝে উঠতে পারছিল না। কচ্ছপ বলল: কী হয়েছে?
প্যারট পাখি তাকে জিজ্ঞেস করল: এ..ই! তুমি সবগুলো ফল খেয়ে ফেলেছো?
কচ্ছপ বলল: হ্যাঁ! অনেক উড়েছি তো, খিদে লেগে গিয়েছিল..।
ঈগল রেগেমেগে বললো: ‘এই..পাখিরা! তোমরা সবাই তোমাদের পালক খুলে নাও কচ্ছপের হাত থেকে’।
পাখিরা তাদের নিজ নিজ ঠোঁট দিয়ে কামড়ে কচ্ছপের গা থেকে সমস্ত পালক খুলে নিচ্ছিল… এমন সময় কচ্ছপ বলল: ‘না না, তোমরা একাজ কর না, তাহলে আমি ফিরে যাব কী করে’?
কিন্তু কে শোনে কার কথা। পাখিরা ঈগলের কথায় সমস্ত পালক খসিয়ে নিয়ে উড়াল দিয়ে চলে গেল।
কচ্ছপ মন খারাপ করে নিজে নিজে বলতে লাগল: আমি এখন কীভাবে যাব? কোনো উপায় না দেখে কচ্ছপ মেঘের ওপর থেকে লাফ দিল এবং মাটিতে দুম করে পড়লো। কচ্ছপের বুকের ঢাল মানে সাদা শক্ত খোসার স্তর ভেঙে টুকরো টুকরো হয়ে গেল পাজলের মতো।
কিন্তু একেবারে মরে গেল না সে। হাঁফাচ্ছিল কচ্ছপ। এমন সময় গাছের উপর থেকে তিনটা বানর নেমে এলো নীচে। পাজলের মতো কচ্ছপের বুকের শক্ত হাড়ের টুকরোগুলো তারা খুঁজে খুঁজে বের করল এবং একটা একটা করে টুকরোগুলো আবার পাজলের মতোই মিলিয়ে দিল কচ্ছপের বুকে।
বুকটা তার মেরামত হয়েছে ঠিকই কিন্তু এখন তার কাছে বুকটাকে ভীষণ ভারী মনে হচ্ছিল। ব্যথাও করছিল। সে কারণে কচ্ছপ যতই চেষ্টা করল দৌড়তে, আর পারল না। এ কারণেই কচ্ছপ আস্তে আস্তে হাঁটে।
অর্মিতা এভাবে তার গল্প লেখা শেষ করল। সন্ধ্যায় বাবা যখন বাসায় ফিরল, দরোজা খুলেই মুখে রাজ্যের আনন্দ আর খুশি মেখে বলল: আমি এইমাত্র গল্পটা শেষ করলাম।
বলেই সে তার লেখার কপিটা (খাতা) এনে বাবার হাতে দিল। বাবা গল্পটা পড়ে অর্মিতার কপালে আদর মেখে দিয়ে বললো: চমৎকার হয়েছে মা! এভাবে আরও নতুন নতুন গল্প লিখবে।
অর্মিতা বললো: গল্পbd দেবে বাবা!
বাবা বললো: হ্যাঁ! তুমি কম্পোজ করে ফেল, আমি দিয়ে দেব।
প্রচণ্ড আনন্দ আর কৌতূহল নিয়ে অর্মিতা তার নিজের লেখা গল্প কম্পোজ করতে শুরু করে দেয়।
পরদিন স্কুলে গিয়ে গল্পটা তার টিচারকে দেখাতেই টিচার ‘এক্সেলেন্ট’ কমেন্ট লিখে দেয় তার গল্পের খাতায়। সাথে অনেক প্রশংসা এবং নগদ কিছু গিফ্টও দেয় অর্মিতাকে।
বন্ধুরা! গল্পটি কেমন লাগল? আশাকরি ভালো লেগেছে। তোমরাও কি গল্প লেখো? লিখলে পাঠিয়ে দাও আমাদের ঠিকানায়। ভালো হলে আমরা গল্পbd প্রচার করব।#
—সাতক্ষীর খেকে পাঠিয়ৈছেন মহিবুল্লা
"আলোর পথ"-এ প্রকাশিত গল্পসমূহ ও লেখনী মূলত পাঠক, শুভানুধ্যায়ী এবং সম্মানিত অবদানকারীদের কাছ থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে। এই কনটেন্টগুলোর উপর আমরা কোনো মেধাসত্ত্ব (copyright) দাবি করি না। যদি কোনো গল্প, ছবি বা তথ্যের কপিরাইট সংক্রান্ত বিষয়ে আপনার প্রশ্ন, সংশয় বা আপত্তি থাকে, তাহলে অনুগ্রহ করে আমাদের যোগাযোগ পৃষ্ঠায় যোগাযোগ করুন। আমরা যথাযথ আইনানুগ পদ্ধতিতে বিষয়টি পর্যালোচনা করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করব।