একটা ভুতের গল্প

প্রতিদিন বিকেল হলেই বাড়ী ফিরে আসে জাহিদ। বাসা বেশ খানিকটা দূর তো বটেই। তাছাড়া তার নতুন বিয়ে করা বউ বাসায় একা থাকতে ভয় পায়। বিকেলের দিকে গ্রামের স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে কাজ শেষ করে সাইকেলটা নিয়ে বেরিয়ে পড়ে। নতুন চাকরি একটু কষ্ট তো করতেই হবে। এই ভেবে নিজেকে সান্ত্বনা দেয় সে। তার বাসায় যাওয়ার রাস্তাটা অনেক ঘুর পথে। কয়দিন আগে একটা সর্টকাট আবিষ্কার করেছে সে। রাস্তাটা একটু নির্জন অবশ্য কিন্তু দিনের বেলায় যায় বলে ভয় লাগেনা জাহিদের।

সেদিন কাজ শেষ করতে করতে সন্ধ্যা হয়ে গেল। প্রচন্ড শীতের সময়, ছয়টা বাজতে না বাজতেই রাতের মত হয়ে গেল। বের হওয়ার সময় একবার মনে হল ঘুরপথেই যাবে নাকি!! কিন্তু পরমুহূর্তেই হেসে উড়িয়ে দিল ও। ধুর, এই শীতরের মধ্যে এত দূর ঘুরে যাব!! তাই বড় টর্চটা হাতে নিয়ে তাড়াতাড়ি সাইকেল বের করে রওনা হয়ে গেল জাহিদ। রাস্তাটা পাকা নয়। পাকা হবার কথাও না। এমনিতেই মানুষজন খুব কম চলাচল করে এখান দিয়ে। প্রচন্ড শীতের মধ্যে এখন তো কারো আসার প্রশ্নই আসে না।

হঠাৎ করেই ফুশ করে শব্দ, আর সেই সাথে সাইকেল নড়বড়। সাইকেল খুব জোরে চলছিল। তাই সরাসরি মাটিতে। শব্দ শোনার পর আর বলে দিতে হল না কি হয়েছে। জাহিদ তিক্ত মনে ভাবল বাঙালী বাঘা জিনিস। কী কী প্রবাদ যে বানাইছে। যেখানে বাঘের ভয় সেখানেই কিনা সন্ধ্যা হয়! টায়ারটাও এখনই পাংচার হইতে হইল! হাত থেকে পড়ে টর্চটা নিভে গিয়েছিল। শংকিত মনে জাহিদ মাটি হাতড়ান শুরু করল। টর্চের মত কিছু একটা হাতে ঠেকল। তুলে নিয়ে সুইচ চাপতেই মনটা আবারো তিক্ততায় ভরে গেল। “চমৎকার !! আর কী চাই !!” এইটাও শেষ।

সোজা হয়ে দাড়িয়ে ঠান্ডা মাথায় চিন্তা করার চেষ্টা করল জাহিদ। কি করা যায়! অনেকক্ষণ ভেবে এটুকুই বুঝল যে এখানে দাঁড়িয়ে ঠান্ডা মাথায় চিন্তা করার চেষ্টা করতে থাকলে মাথা চিরদিনের মত ঠান্ডা হয়ে যাবে! প্রথমে সাইকেলটাকে ঝোপের আড়ালে নিয়ে রাখলো কোনরকমে। নিজে কোনরকমে বাসায় পৈছতে পারলেও সাইকেলটা নিয়ে যাওয়া সম্ভব না। সকালে নিয়ে গেলেই হবে। তারপর আবার রাস্তায় দাড়িয়ে এদিক ওদিক তাকাতেই হঠাৎ আশায় বুকটা নেচে উঠল। দূরে গাড়ির দুটো হেডলাইট এদিকেই আসছে।

এই জায়গায় গাড়ি কিভাবে এল এ চিন্তা মাথায় এলেও জাহিদ তা মাথায় স্থান দিল না। জাহিদ অপেক্ষা করতে থাকল। কিন্তু গাড়িটা খুব বেশী স্লো। জাহিদ নিজেও একটু এগিয়ে গেল। গাড়িটা ওর সামনে এসেই থামল। জাহিদ খুশি মনে গাড়ির পেছনের সীটে গিয়ে উঠল। আস্তে করে গাড়ীর দরজা লাগাতেই গাড়িটা আবার চলতে শুরু করল। গাড়ির ভেতরটা বেশ গরম। জাহিদের মনে হল ও যেন ঠান্ডা দোযখ থেকে গরম বেহেশতে এসে পড়ল। গাড়ীর চালককে কিভাবে ধন্যবাদ দেবে বুঝতে পারছিল না জাহিদ।

পেছন থেকে ও বলল- “থ্যাংকিউ ভাই। জীবনটা বাঁচালেন।” চালক জবাব দিল না। একটু অস্বস্তিতে পড়ল জাহিদ। আবার বলল- “রাস্তায় হঠাৎ সাইকেলের চাকা পাংচার হয়ে গেল আরকি হে হে।” এবারো কোন জবাব নেই। জাহিদ বুঝতে পারছিল না এই লোক কথা বলে না কেন? আবারো ও বলল “এদিকে কার বাসায় যাবেন?” এবারো কোন জবাব নেই। এবার একটু মেজাজ খারাপ হল জাহিদের। ব্যাপার কি?

যাই হোক ও চুপ করে গেল। কিছুক্ষণ পর ওর টনক নড়ল। কি ব্যাপার!! গাড়ী এত আস্তে আস্তে চলছে কেন? সামনে ঝুকে জাহিদ ঐ লোককে ডেকে বলতে চাইল “ভাই গাড়ি এত আ-” মেরুদন্ড দিয়ে বয়ে যাওয়া শীতল স্রোত তার কথা মাঝপথেই থামিয়ে দিল। চালকের আসনে কেউ বসে নেই। সবার আগে যে সম্ভাবনাটা মাথায় এল তা আর ভাবতে চাইল না জাহিদ। গাড়ি থেকে নেমে যেতে চাইল ও। কিন্তু আতংকে ও নড়তে পারছিল না। সামনে রেল ক্রসিং। গাড়িটা খুব আস্তে আস্তে ঐ রেললাইনের উপর গিয়ে দাড়াল।

হঠাৎ ট্রেনের হুইসেলের শব্দে জাহিদের মাথা পরিষ্কার হয়ে গেল। তাহলে ভূতটার তাহলে এই মতলব! এখন ট্রেন এলে জাহিদ একদম চ্যাপ্টা হয়ে যাবে। তাড়াতাড়ি ও দরজার হাতল ধরে টান দিল। আবারো ভয়ে ও পাগল হয়ে গেল। বারবার হাতল ধরে টান দিলেও ওটা খুলছিল না। গাড়িটা আবারো নড়তে শুরু করছিল। ওদিকে ট্রেন কাছে চলে আসছিল। ভয়ে আর পরিশ্রমে হাঁপাতে হাঁপাতে যখন ও জীবনের আশা প্রায় ছেড়ে দিচ্ছিল তখনই ও খেয়াল করল দরজাটা তো লক করাও থাকতে পারে।

তাড়াতাড়ি লকে হাত দিয়ে লকটা খুলে ও বাইরে ঝাঁপিয়ে পড়ল। মাটিতে গড়িয়ে ও কিছুটা দূরে সরে এলো। তখনই আবারো গাড়িটা চলতে শুরু করল। গাড়িটা রেললাইন পার হয়ে গেলেই ট্রেন চলে গেল। জাহিদ মাটিতে শুয়ে চোখে আতংক নিয়ে গাড়িটার দিকে তাকিয়ে ছিল। গাড়িটা আবারো ওর সামনে এসে দাঁড়াল। গাড়ির পেছন থেকে হঠাৎ এক যুবক বের হয়ে গাড়ির গায়ে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে হাঁপাচ্ছিল। তার সারা গায়ে এই শীতের রাতেও ঘাম।

জাহিদের একটু খটকা লাগল। ভুতেরাও ঘামে?!! যুবক জাহিদকে দেখতে পেয়ে কাছে এসে বলল ”কী ব্যাপার, মাটিতে শুয়ে আছেন কেন? আমার গাড়িটা যে রেললাইনের উপর হ্যাং হয়ে ছিল দেখেন নি?” জাহিদ কোনরকমে ঘাড় নাড়ল। ”আচ্ছা মানুষতো আপনি! আরেকটু হলেই মারা যাচ্ছিলাম আর আপনি হেল্প করতে আসলেন না? পাক্কা দুই কিলোমিটার ধরে গাড়িটাকে ঠেলছি!! আসুন আসুন, আমার সাথে ঠেলুন।”

জাহিদ বিনা বাক্য ব্যয়ে উঠে যুবকের সাথে গাড়ি ঠেলতে শুরু করল।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরো পড়তে পারেন...

ছালেহ (আঃ)-এর দাওয়াতের ফলশ্রুতি

ইতিপূর্বেকার ধ্বংসপ্রাপ্ত জাতিগুলির ন্যায় কওমে ছামূদও তাদের নবী হযরত ছালেহ (আঃ)-কে অমান্য করে। তারা বিগত…

হযরত ছালেহ (আলাইহিস সালাম)

‘আদ জাতির ধ্বংসের প্রায় ৫০০ বছর পরে হযরত ছালেহ (আঃ) কওমে ছামূদ-এর প্রতি নবী হিসাবে…

কওমে ‘আদ-এর উপরে আপতিত গযব-এর বিবরণ

মুহাম্মাদ ইবনু ইসহাক বলেন, কওমে ‘আদ-এর অমার্জনীয় হঠকারিতার ফলে প্রাথমিক গযব হিসাবে উপর্যুপরি তিন বছর…