ওলীদ বিন মুগীরা কে দ্বীন কবূলের আহ্বান
কুরাইশ নেতা ওলীদ বিন মুগীরা আরবের মধ্যে শ্রেষ্ট ধনী ও প্রতিপত্তিশালী ছিল। তার পুত্র সন্তানও অনেক ছিল। রাসূলুল্লাহ (সাঃ) একদিন তার কাছে উপনীত হয়ে পবিত্র কোরআনের কিছু আয়াত পাঠ করে শুনালেন। আল্লাহর কালামের বিশেষ আকর্ষণে ইসলামের প্রতি তার নমনীয়ভাব সৃষ্টি হল। তাফসীরে কামালাইনের বর্ণনা অনুসারে দেখা যায় সে ঈমানও এনেছিল।
ওলীদ একদিন রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-কে দাওয়াত করল। সঙ্গে সঙ্গে আরবের সরদারদেরকেও দাওয়াত দিল। তার ইচ্ছা ছিল সে আনুষ্ঠানিকভাবে সবাইকে নিয়ে ইসলাম কবূল করবে। যখন খাবার পরিবেশন করা হল এবং দস্তরখানে সকলে উপস্থিত হল। তখন আবূ জাহেল, আবূ লাহাব প্রমুখ মুশরিকরা রাসূলুল্লাহ (সাঃ)- কে উপস্থিত দেখে হাত তুলে বসে রইল। তারা ওলীদকে বলল মুহাম্মদের সঙ্গে আমরা আহার করব না। আমরা শুনতে পেলাম তুমি নাকি মুহাম্মদের উপর ঈমান এনেছ।
ওলীদ বিন মুগীরা বলল, তাঁকে আমার ঘনিষ্ট আত্নীয় হিসেবে দাওয়াত করেছি, যেহেতু তিনি কালেমা না পড়লে খাবার গ্রহণ করবেন না, তাই শুধু প্রকাশ্যভাবে তাঁর কলেমা পড়েছি, তবে অন্তরের দিক দিয়ে পূর্ব পুরুষদের ধর্মের উপরই আছি।
তোমাকে আমরা সব ধরনের সাহায্য করব আমরা তোমাকে অর্থ সংগ্রহ করে দিব। তুমি তাঁর বিরোধিতা কর। তাঁর কলেমা ফেরত দাও। অন্যথায় আমরা এ দস্তরখানা থেকে উঠে যেতে বাধ্য হব। ওলীদ বলল, তাঁর বিরোধিতার জন্য তোমাদের সাহায্য নিস্প্রয়োজন। আমার ধন সম্পদ ও জনশক্তি কোনটারই অভাব নেই। মুহাম্মদ সম্পর্কে তোমাদের ধারণা কি আমাকে বল।
তারা বলল, আমরা তাকে একজন ভবিষ্যত প্রবক্তা ছাড়া আর কিছুই মনে করি না। ওলীদ বলল, তিনি অবশ্যই ভবিষ্যত প্রবক্তা নন। ভবিষ্যত প্রবক্তাদের বাণী ও কার্যকলাপ সম্বন্ধে আমি যথেষ্ট অভিজ্ঞ তার কথা-বার্তা ছন্দোবদ্ধ বাক্য বিন্যাস নয়। তাঁরা বলল, সে উন্মাদ ওলীদ বলল, তিনি উন্মাদ নন। তাঁর মধ্যে উন্মাদের মত প্রলাম ও অসংলগ্ন অংগভংগি কিছুই দেখা যায় না। তারা বলল, সে একজন কবি। ওলীদ বলল, তাও হতে পারে না। কারণ কবিতা সম্বন্ধে আমার যথেষ্ট অভিজ্ঞতা আছে। কবিতার কোন ভাবধারাই তাঁর কথায় নেই।
তারা বলল, যাদুকর। ওলীদ বলল, আমি একমত নই। যাদুকরের কোন প্রকার ফন্দি ফিকির তাঁর মধ্যে নেই। তারা বলল, তবে তাকে কি বলা যায়। ওলীদ বলল, তাঁর কথায় অপূর্ব মর্ম আছে এর মূল অতলস্পর্শী ও শাখা ফলপ্রসূ। তবে তাঁকে যাদুকররা বললেই অনেকটা ঠিক হবে। কেননা, যাদুকররা যেমন স্বামী-স্ত্রী ও পিতা-পুত্রের মধ্যে বিচ্ছেদ ঘটায়, তার কথায় মধ্যে অনুরূপ বিচ্ছেদের সৃষ্টি হয়। পরিশেষে কুরাইশরা বলল, তুমি তার কলেমা ফেরত দাও।
ওলীদ দেখল, মুহাম্মদের জন্য গণ্যমান্য বহুলোককে হারাতে হয়। তাই সে বলল আমি তার কলেমা ফেরত দিলাম। কুরাইশরা বলল, আমরা তোমার মুখের কথা যথেষ্ঠ মনে করি না। তুমি তার মুখে থুথু দাও। ওলীদ সরদারদের মন রক্ষার্থে তাই করল। রাসূলুল্লাহ (সাঃ) অত্যন্ত মর্মাহত হয়ে ব্যথিত হৃদয়ে চলে গেলেন। তিনি খাবারের পাত্র রেখেই চলে যান।
আল্লাহর হাবীবের সাথে এহেন বেয়াদবী ও চরম অপমানজনক আচরণ আল্লাহ পাক সহ্য করলেন না। তিনি সাথে সাথে ওহী নাযিল করেন। ওলীদকে ভর্তসনা ও তার প্রতি ঘৃণা প্রকাশ করে পবিত্র কোরআনের কয়েকটি আয়াত নাযিল হয়- “আমাকে এবং ঐ ব্যক্তিকে একা ছেড়ে দিন যাকে আমি সৃষ্টি করেছি এবং যাকে আমি প্রচুর ধন, বিশাল সম্পদ এবং মজলিসে উপস্থিত হওয়ার মত যোগ্যতা সম্পন্ন পুত্র সন্তানদের দান করেছি এবং যার জন্য সম্পদের বিছানা প্রসারিত করেছি।
অতঃপর সে আরও লোভ করে যে আমি তাকে আরও বেশি দান করব। কখনও না। নিশ্চয় সে আমার আয়াত সমূহের বিরুদ্ধাচারণকারী শত্রু”।
কুরাইশের অন্যান্য ব্যক্তিবর্গ রাসূলুল্লাহ (সাঃ) সাহাবায়ে কিরাম (রঃ) ও পবিত্র কোরআন সম্পর্কে ঠাট্টা বিদ্রুপ করতে লাগল। তাহাদের সম্বন্ধে কঠোর ভাষায় তিরষ্কার ও হুমকি দিয়ে পবিত্র কোরআনে আয়াত নাযিল হয়েছেঃ “যেভাবে আমি তাদের প্রতি আয়াত অবতীর্ণ করেছি যারা বিভক্তকারী কোরআনকে যারা বিভিন্ন অংশে ভাগ করেছে।
অতএব আপনার প্রভুর কসম, তাদের আমল সম্বন্ধে আমি নিশ্চয় তাদেরকে প্রশ্ন করব”। সূরা হিজরঃ আয়াত ১০-১৩