অনেক অনেক দিন আগে। আমাদের একটি পারিবারিক ছাগল ছিলো। দুধ দেয়ার জন্য বিশেষ আদর-যত্ন করে পালা হতো ছাগলটিকে। আমার মা গরুর দুধ খেতেন না তখন, বড় ভাইয়াও খেতেন না। গরুর দুধ, মাংস সব বারণ। এ্যাজমা (হাঁপানি, শ্বাসকষ্ট নামেও পরিচিত) আমাদের পারিবারিক ঐতিহ্য। বড় ভাইয়া আর আমার মায়ের ঐতিহ্যবাহী রোগটি এখন আমি বহন করছি। ঐতিহ্য খুব দরকারী জিনিস। যারতার হাতে ঐতিহ্য রাখলে সেটি বদলে যেতে পারে। সেই সুযোগ দেয়াটা উচিৎ কর্ম মনে হয়নি আমার। নিজের হাতেই রেখেছি ব্যাটাকে। আচ্ছা যেটা বলছিলাম, ছাগল। তার আগে জেনে নেয়া ভালো এই গরুর মাংস এবং দুধের বিরুদ্ধে জেহাদ ঘোষনা করার হেতু কী। তখন ত এইকালের মতো ইনহেলার, ইভোহেলার ছিলোনা যে ফুসফুসে ট্রাফিক জ্যাম লেগেছে আর একটা দুইটা পাফ নিয়েই জ্যাম-মুক্ত হয়ে যাবেন, না না। আর যদি খোদা না খাস্তা আপনার এ্যাজমার টান উঠেই যায় তাহলে ত খবর আছে । নিবুলাইজেশন ব্যাপারটা আমিই বয়স হবার পরে শুনেছি। তা তখন শ্বাসকষ্ট হলে সেটি ভীষন পীড়াদায়ক ব্যাপার ছিলো। বুকে তেল মালিশ করা, পানি পড়া খাওয়া ইত্যাদিই ছিলো দরকারী ঔষুধ। কাজ কেমন হতো সেটি অধমের যাচাই করার সৌভাগ্য হয় নাই কারন যখন থেকে ঐতিহ্য ধারন করছি তখন থেকেই ঐতিহ্যকে রক্ষা করার জন্য বাজারে অনেক ভালো ব্র্যান্ডের চমৎকার সব ইনহেলার চলে এসেছে। গরুর মাংস খেতে যতই স্বাদ লাগুকনা কেনো দুনিয়ার সকল সমস্যা এই গরুর মাংস থেকেই উৎপন্ন হয়। আমরা যেহেতু ভাতুক(ভাত+ভুক) প্রানী তাই স্বাদের সাথে সাথে ভাতের পরিমান নির্ভর করে। যত স্বাদের তরকারী তত বেশি বেশি ভাত আমাদের পেটে যাবে। আর কে না দেখেছে ভাত বেশি খেলে কী হয়। ডায়বেটিস হয়, ভুঁড়ি রোগ হয়, অনেকের মতে গ্যাস্ট্রিক আলসারও হয়! ধীরে ধীরে কোলস্টেরল, ফ্যাট জাতীয় মোটা মোটা শব্দ জানা শুরু করলাম আমরা। এটাও জানতে লাগলাম যে যত গোঁরা সব ঐ ব্যাটা গরু। শরীর চুলকায়? গরু। স্ট্রোক করেছেন? গরু। হাঁপানি হয়েছে? গরু। এই যে পাইলাম আমার মা কি জন্যে গরু দেখতে পারতেন না তার কারন। যেহেতু গরুর মাংসে সমস্যা আছে তাই এর দুধে সমস্যা না থাকার কোনো কারন নাই। গরু না খেয়ে আর এলাকার হুজুরের পানি পড়া খেয়ে হাঁপানির বংশ নির্বংশ করার জন্য তাই আমার মায়ের চেষ্টার কমতি ছিলোনা। বছরের পর বছর যায়, হাঁপানি আরো গাইড়া বসে। যখন বাসার ছোট ছেলেটিও (স্বয়ং আমি হে) হাঁপানিতে আক্রান্ত তখন হয়ত স্বপ্নভংগ হয় সবার। পানিপড়া শহরে কাজ করে না ভেবে সেটি খাওয়া ক্ষান্ত দেয় সবাই। হুজুর, হোমিওপ্যাথি ছেড়ে ধীরে ধীরে এ্যালোপেথিতে এসে থামি আমরা। হাঁপানি ছাড়ার পাত্র না, গরুর মাংসও সকল হাঁপানি রোগির জন্য ক্ষতিকর না, ব্যাপারগুলোও ধীরে ধীরে ঐতিহ্যের মধ্যে ঢুকিয়ে দেই। গরুর মাংসের মতো একখানা খাবার না খেয়ে মরতে হলে আমি ভূত হয়ে কবরের উপরে বসে গরু হান্ট করতাম সেটি আজকে দুপুরেও অনুধাবন করেছি।
গরু খেয়ে রোগ হয়েছে আরেকটা, লিখতে গেলে লেখা লাইন ছেড়ে চলে যায়। শুরু করেছিলাম ছাগল দিয়ে, এসে পরেছি গরুতে। ছাগলের ব্যাপারটা গুরুত্বপূর্ণ, তাই সেটি বলতেই হচ্ছে যে। তা আমাদের সেই দুধাল ছাগলটি একবার হারিয়ে গেলো। আমি তখন ম্যালা ছোট। কি পরিমান ছোট সেটি কীভাবে বলি, এত ছোট থাকতে ত সবকিছু মনে থাকেনা। পাঠকদের মাঝে কেউ কি আছেন যে দোকান থেকে চার আনা (আট আনাও হতে পারে) দিয়ে লাল রঙ এর বেলুন কিনেছেন, স্বচ্ছ সেই বেলুনকে অতিকায় মাত্রায় ফুলিয়ে রাখতেন, মাঝেমধ্যে কিছু পানি দিয়েও ফুলোতেন, এমন? বেলুনটির বিশেষত্ব যা ছিলো তা আজকালকার পোলাপান বুঝবেনা। গায়ে পিচ্ছিল পিচ্ছিল কী যেনো লাগানো থাকতো। বড়ই বিরক্তিকর ব্যাপার। বেলুনের গায়ে কোন বেয়াদ্দপে যে তেল লাগাতো সেইটা ভেবে আমরা যারপরনাই বিরক্ত হতাম। যাই হওক, কষ্ট করে পানিতে ধুয়ে পরিষ্কার করে সেই বেলুন ফুলানোর স্মৃতি যাদের আছে তারা বুঝতে পারবেন যে আমি কোন সময়ের কথা বলছি আর আমি তখন কত বড় ছিলাম! যাদের এখনও ধরতে সমস্যা হচ্ছে তাদের জন্য বেলুনের ব্র্যান্ড নেম বলে দিচ্ছি। “রাজা” । এরপর না বুঝলে আপনার বুঝার দরকার নাই। আসি ছাগলের কথাতে। তা ছাগল গেলো হারিয়ে। আমি তেমন চিন্তিত না। আমার প্রিয় ছিলো হাঁস। নিজ হাতে খাওয়াতাম, সকাল বেলা ছাড়তাম, রাতে আবার গুনে গুনে দেখতাম কোনো ব্যাটা কমে গেলো নাকি। ছাগল নিয়ে আমার তেমন আগ্রহ ছিলোনা। কিন্তু আমার আগ্রহ না থাকুক, ছাগলের একটা ফ্যামিলি ভ্যালু ছিলো। মফঃস্বলে কিনে দুধ-ডিম তখন মস্ত বড়লোকেরা খায়। আমরা নিতান্তই মধ্যবিত্ত, আমাদের কিনে দুধ-ডিম খাওয়া চলবেনা। তারউপর আবার ঐতিহ্য রক্ষাকারী ছাগলের দুধ। হাঁপানির ঔষুধ। আমার মা মোটামোটি পাড়া জাগিয়ে ফেলেছিলেন হইচই করে, সেটি আমি এখনও ভুলতে পারিনি। ছাগলটি পাওয়া গিয়েছিলো কি না সেটি আমার মনে নেই। আমাদের মস্তিষ্ক স্মৃতি রক্ষা করার ব্যাপারে খুব সতর্ক। যে স্মৃতির প্রতি আমাদের মোহ থাকেনা সেই স্মৃতি জমিয়ে রেখে মেগাবাইট খরচ করার মতো আনস্মার্ট অপারেটিং সিস্টেমে চলেনা আমাদের মস্তিষ্ক। জাঙ্ক ফাইল, ক্যাস মেমরি নিজ থেকেই সাফা সাফা করে ফেলে। হাঁস-মুরগী হারানো এবং তাদের ফিরে পাওয়ার সবগুলো স্মৃতি মনে থাকলেও এটি তাই আমার স্মৃতিতে নাই। আশেপাশে থাকলে আম্মাকে জিগানো যেতো, উনিও আশেপাশে নাই (দুঃখ প্রকাশ করিবেন না দয়া করে, উনি বহাল তবিয়তে বেঁচে আছেন। এই মুহুর্তে দেশে নাই যে জিগামু)। আচ্ছা ফিরে যাই ছাগলের কাছে। আমার মায়ের হইচই আমার মনে আছে, ছাগলের গুরুত্বটিও মনে আছে কিন্তু ছাগল পেলাম কি না সেটি কেনো মনে নাই? বললাম ত যে হাস-মুরগির ব্যাপারগুলো আমি ভুলি নাই। এখনো আমি আংগুলের কড় গুনে বলে দিতে পারবো আমরা কয়বার হাঁসের বাচ্চা ফুটিয়েছিলাম, কোন মুরগিগুলো ডিমে তা দিয়েছিলো, কোন হাঁসটি কখন হারিয়েছিলো, কিভাবে খুঁজে পেলাম, কোন কোন বন্ধু, বান্ধবি দুঃখ প্রকাশ করেছিলো সেদিন। এমনকি কালো-খয়েরি-সাদা ছোপের সেই মুরগিটাকে একদিন দুপুরবেলা কোনো এক বিশেষ কারনে জবাই করে খেয়েছিলাম আমরা, সেটিও মনে আছে আমার। আমার ভীষণ প্রিয় ছিলো সেই মুরগিটা। আমি ভাত খেতে বসলে আশেপাশে ঘুরঘুর করতো আর আমি লুকিয়ে লুকিয়ে মাখানো ভাত দিয়ে দিতাম মুরগিটাকে। সেই মুরগিটা আমি খেতে পারিনি। আমার স্পষ্ট মনে আছে এখনও, ছাগলটার কথা কেনো ভুলে গেলাম?
পাঠকেরা উত্তরটা দিয়ে দিয়েছেন এর মাঝেই। ‘প্রয়োজন’। আমার ত মুরগির প্রয়োজন ছিলোনা সেই বয়সে। তাহলে মুরগির কথা কেনো ভুলতে পারিনি? এর উত্তরও সহজ। ‘আগ্রহ’। ছোটবেলায় প্রয়োজন থাকে কম, আগ্রহ থাকে বেশি। ধীরে ধীরে আগ্রহ কমে আসতে থাকে আর প্রয়োজন বাড়তে থাকে। না, এ নিয়ে আতলামী করবোনা, ভয় পাইয়েন না। আমরা সবাই জানি এইটা। সেই তখন রাজা বেলুন আমাদের আগ্রহ ছিলো, এখন সেটি প্রয়োজন। সারাজীবন আগ্রহ নিয়ে বসে থাকাটাও কোনো কাজের কথা না। গেলো প্রয়োজন আর আগ্রহ , আসি অধিকারের ব্যাপারে। আমার ছোট্ট ভাতিজা (৬/৭ বছরের কোনো একটা হবে বয়স) সুযোগ পেলেই কম্পিউটারের “পেইন্ট ইট” খুলে বসে। “আই লাভ ইউ টু” শব্দটা যেনো কোন জায়গা থেকে শিখেছে। দশবার করে লিখে আর হার্টের ছবি আঁকে, তাতে আবার লাল রঙও করে। যেই আমি তার হাত হতে কম্পিউটার উদ্ধার করতে চাই তখনই শুরু হয় প্রতিবাদ। এরা অত প্রয়োজন, আগ্রহের ধার ধারেনা। এরা ডিজিটাল পোলাপান। “ভালোবাসা দিবি কিন বল”, এই হইলো এদের চোখের ভাষা।। না দিলে পরে আপনার পিসির ফাইল ডিলিট করে দিবে, চুলে চুইংগাম লাগিয়ে দিবে। আজকাল ত মারামারি করা বারণ পোলাপানকে, কী আর করা, ঠ্যালা লন।
মস্তিষ্কের অপারেটিং সিস্টেমের প্রশংসা করেছিলাম আগেই। সেটি ছিলো গঠন সংক্রান্ত। মস্তিষ্কের এ্যাপ্লিকেশন সেকশনটা আরো বেশি স্মার্ট। এ্যাপ্লিকেশন বাচ্চাদের খেলনা না, ইটজ এ বয়েজ-গার্ল ম্যাটার। প্রতিটা ব্যাপারের আগে অনেক অনেক জটিল ক্যালকুলেশন করা লাগে। তা এই ছোট্ট জায়গাতে আমরা ব্যাপক গবেষনা করতে পারতেছিনা তাই এতক্ষন ধরে প্যাচাল পেরে যে চারটা জিনিস পেলাম এই এ্যাপ্লিকেশনগুলো নিয়ে আরেকটু কথা বলি।
ভদ্রতা– -যখন আমার হাঁস হারায়ে যেতো আর সেই শোক ভুলতে যারা আমার পাশে বসে যে হারামি হাঁসটি গায়েব করেছে তার অনাগত প্রজন্মকে উদ্দেশ করে গালিবর্ষন করতো।
আগ্রহ(নেশাও বলতে পারেন) – ঐ যে আমার হাঁসটা হারায়ে গেলো, আমি পাগলের মতো খুঁজতে লাগলাম। আমার ডিম খাইতে একদম ভালো লাগতোনা। ইনফ্যাক্ট আমি ডিমের কুসুম খাইতে শিখিছি কয়দিন আগে। এর আগে কুসুম বিতরন করতাম আর বাসায় হইলে জানালা দিয়ে প্রক্ষেপন করতাম। তাইলে হাঁস আমার কী কামের?
দরকার -একবার ভাবেন আপনার বাসার কাজের বুয়া বিনা নোটিশে জব পাল্টাইছে আর আপনার স্ত্রী আপনাকে মাত্রই খবরটা দিলো, কেমন লাগবে? ছাগলের দুধ তখন এর চাইতেও বেশি দরকার ছিলো।
অধিকার -আপনার ট্যাবলেট বা স্মার্ট ফোনে গেম খেলে কে?
এখন কোন সময়ে আমরা কী রিয়্যাক্ট করবো সেই এ্যাপ্লিকেশনটা মস্তিষ্ক ভীষন বুদ্ধির সাথে করে। গাঁজাতে যখন ইসরায়েল বোম মারে তখন হ্যাশটেগ এ্যাপ্লিকেশন বের হয়, অর্থ সাহায্য দেবার আমন্ত্রনযুক্ত এ্যাপ্লিকেশন বের হয় কিন্ত যখন আইসিস মানুষ জবাই করে তার ভিডিও ছেড়ে দেয়, লাইন ধরে ধরে হিটলার বাহিনীর মতো এক গুলিতে দশজন খুন করে তখন “কাজটা ঠিক হইতেছেনা” , “তারা সঠিক পথে নাই” এইরকম “দুষ্টু ছেলে” টাইপ এ্যাপ্লিকেশন বের হয়। এইখানে ধর্মটা হচ্ছে প্রয়োজন তাই সবাই চিৎকার করে প্রতিবাদ জানাই আর আইসিসের বেলায় বিপথগামী প্রতিবাদ জানাই হালকা করে সেটি হচ্ছে “ভদ্রতা প্রতিবাদ”। রিভার্স উদাহরনও দেখানো যেতে পারে। ধরেন আপনে নাস্তিক, শুধুই নাস্তিক আর কিছু না। মানে মানুষ যেমন শুধুই ধার্মিক হয়, ধর্মের আইন-কানুন মানেনা কিন্তু “ভীষণ ধার্মিক” হয় সেইরকম আপনেও “ভীষণ নাস্তিক”।এইখানে নাস্তিকতা আপনার আগ্রহ বা নেশা, ঐ ধর্মের মতোই দরকারী জিনিস আর কী। তখন আপনে যা করবেন তা হলো আইসিসের হত্যাকে ভয়ংকর মানবতাবিরোধী কাজ বলবেন কিন্তু গাঁজা বা বাংলাদেশেরই আদিবাসী নির্যাতন নিয়ে আপনে কথা কইবেন না। সেগুলোর ব্যাপারেও “কাজটা ভালো হইতেছেনা”, “আদিবাসী মিডিয়ার সৃষ্টি” টাইপ “দুষ্টু ছেলে” এ্যাপ্লিকেশন বের করবেন। বাংলাদেশ কেমন অরাজক দেশ সেটির সবচাইতে বড় উদাহরন হবে একমাত্র তসলিমা নাসরিনকে নিয়ে আমরা কেনো আন্দোলন করতেছিনা সেটি, দেশের ভেতর কত তসলিমা প্রতিদিন কতল হইতেছে সেগুলো নিয়া ত্যানা পেচানি যাবেনা। বড় মানবতার কাছে ছোট মানবতা গুরুত্বপূর্ণ না। ওহ ভুলে গেছিলাম, আজকাল আবার “নাস্তিক” শব্দটাতে নাস্তিকদেরও আপত্তি দেখতে পাই। সেটিকে “মানবতাবাদী”র মতো আদুরে শব্দ দিয়ে প্রতিস্থাপন করা হয়। বুঝে নিবেন মানবতাবাদী মাত্রই নাস্তিক কিন্তু নাস্তিক মাত্রই মানবতাবাদী হইবার প্রয়োজন নাই। আরো আছে, আপনে আওয়ামীলীগ করেন? কথায় কথায় জংগীবাদ নিয়া আসবেন কিন্তু জংগী না হয়েও কিভাবে ইউনিভার্সিটির ছেলে খুন হয়, দিনে দুপুরে মানুষ গুম হয় সেই ব্যাপারে আপনে একদম চুপ থাকবেন। গার্মেন্টসে বেতন দিতাছেনা? “কাজটা ভালো হইতেছেনা” এ্যাপ্লিকেশন বের করেন। আপনে বিএনপি করেন?কঠিনভাবে বিশ্বাস করবেন, তারেক জিয়া আর খালেদা জিয়ার বাইরে দুনিয়াতে কিছু নাই, বাকি সব মিডিয়ার সৃষ্টি। রাজাকার আলবদরদের ফাঁসি চাইবেন কিন্তু তার আগে একশ একটা “যদি”, “কিন্তু” যোগ করতে ভুলবেন না। মনে রাখবেন জামাত আপনার “দরকার” আর বিচার আপনার “ভদ্রতা”। এ্যাপ্লিকেশন তাই বুঝে বের করবেন। তাইলে বুঝতে পারলাম যে ভদ্রতা, দরকার আর আগ্রহ(নেশা) আমাদের প্রতিবাদের ব্যাপারে খুবই দরকারী জিনিস। এর প্রতিবাদ হবে যথাক্রমে এমন
ভদ্রতা– চুপ থাকা , ক্ষেত্রবিশেষে “যা দুষ্টু” !
দরকার/আগ্রহ – চিৎকার, হইচই।
হাসপাতালে অনেক ভিড়। ছোট মেয়েটিকে নিয়ে হাসপাতালে দৌড়াচ্ছেন দুলাল মিয়া। ৫ বছরের মেয়েটির ভীষন শ্বাসকষ্ট। ছোট বাচ্চাদের ইনহেলার আর সেটি ব্যাবহারের সরঞ্জাম কেনা সম্ভব না তার পক্ষে। হাসপাতালে এসেছেন তাই নিবুলাইজ করাতে। টিকেট কেটে বসে আছেন ঘন্টাখানেক হলো, হাসপাতালের ইমার্জেন্সিতে লোক নেই। একবার এইদিক আরেকবার সেইদিক দৌড়াচ্ছেন তিনি। মেয়ে তার মুখ হা করে পৃথিবীর সব বাতাস টেনে নিতে চাচ্ছে, পারছেনা। বুকে চেপে বসা জগদ্দল পাথরটি এত সহজে সরার পাত্র না। চিৎকার করার সাহস নেই দুলাল মিয়ার। শহরে একটাই হাসপাতাল। চিৎকার করার অপরাধে এখান থেকে বের করে দিলে মেয়েকে নিয়ে যাওয়ার মতো জায়গা নেই আর। ঘন্টা পেরিয়ে আরেক ঘন্টা শুরু হলো। লাঞ্চ করে হেলেদুলে রুমে আসলেন ইমার্জেন্সির লোকেরা। হাতের টিকেটটি দেখে দুলাল মিয়াকে বললেন একজন, “এই ইনজেকশনটা নিয়া আস”। দুলাল মিয়ার স্পর্ধা নেই জিজ্ঞাস করে সেটি হাসপাতালে আছে কি না। দৌড়ে ইনজেকশনটি আনতে গিয়ে আরো মিনিট বিশেক চলে গেলো। ইনজেকশনটি ওয়ার্ড বয়ের হাতে দিয়ে এতক্ষনে আবার মেয়ের দিকে নজর গেলো দুলাল মিয়ার। হা করা মুখটিতে আর বাতাস টানার আগ্রহ নেই। মৃতেরা বাতাস টানেনা। “খানকির পোলারা” বলে একটা চিৎকার দিলেন দুলাল মিয়া… অধিকারের চিৎকার এমনই হয়, সেটিকে ‘আর্তনাদ‘ বলে।
"আলোর পথ"-এ প্রকাশিত গল্পসমূহ ও লেখনী মূলত পাঠক, শুভানুধ্যায়ী এবং সম্মানিত অবদানকারীদের কাছ থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে। এই কনটেন্টগুলোর উপর আমরা কোনো মেধাসত্ত্ব (copyright) দাবি করি না। যদি কোনো গল্প, ছবি বা তথ্যের কপিরাইট সংক্রান্ত বিষয়ে আপনার প্রশ্ন, সংশয় বা আপত্তি থাকে, তাহলে অনুগ্রহ করে আমাদের যোগাযোগ পৃষ্ঠায় যোগাযোগ করুন। আমরা যথাযথ আইনানুগ পদ্ধতিতে বিষয়টি পর্যালোচনা করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করব।