মাত্র দশ মিনিট হলো একেবারে যাকে বলে শাহীখানা তাই খেয়ে এলাম। না না,কোন অনুষ্ঠানে নয়। আমাদের বাড়িতেই আজ পোলাও-মাংস, মাছের কোরমাÑএসব শাহীখানা – দানার আয়োজন করা হয়েছে। রেঁধেছে আমার মা। তো খাবার খেয়ে সবে যখন রুমে এসে একটা ঢেঁকুর তুলেছি কি তুলিনি, ওমনি আবার মায়ের গলা।
“খোকা, আসব?”
“এস মা এস। তুমি আসবে তা আবার জিজ্ঞেস করতে হয়? তা তোমার হাতে ওটা কি?”
“এই একটু দুধ। কালতো আবার তোর চাকরিতে জয়েনের তারিখ। সক্কাল-সক্কাল উঠতে হবে যে। নে, তাড়াতাড়ি দুধটা খেয়ে নিয়ে ঘুমিয়ে পরতো। এই নে, হাঁ করতো…বলে মা দুধটা বাড়িয়ে দিলো আমার দিকে। একদম সাদা দুধটুকু দেখেই আমার হাত-পা গুলো কেন যেন ঠান্ডা হয়ে যেতে লাগল।
“ননসেন্স, ইডিয়েট, রাবিশ। কতবার আপনাকে বলা হয়েছে রিপোর্টের দিকে খেযাল রাখতে? রিপোর্টের ধারে কাছেও কিছু না আনতে? রিপোর্ট যেন একদম পরিষ্কার দেখতে হয়?”
-স্যার, আপনি যা বলেছেন আমিতো তাই করেছি।”
-থামুন। আর মিথ্যা কথা বলতে হবেনা। আমার কথা শুনেছেন তো আপনার রিপোর্টের গায়ে এসব কিসের দাগ?”
-স্যার বলতে সাহস পাচ্ছিনা…।
-কি? কি বললেন? বলুন…বলুন বলছি…।
-স্যার আমি আমার রিপোর্টের ধারে কাছে কিচ্ছু আনিনি। আমার বোনের পোষা বিড়াল মিনি নিজেই এসেছিলো স্যার ওটার কাছে। তারপর স্যার, তারপর…”
“তারপর?”
-স্যার তারপর ও ওটার ওপর ….ওটার ওপর…”
-ওটার ওপর কি?”
-স্যার তারপর ওটার ওপর বাথরুম করে দিয়েছে….।
“ওহ! আপনার বোনের বিড়াল তাহলে পড়তেও পারে? ও-ও আপনার লেখা সহ্য করতে পারেনি?”
-মানে স্যার? ঠিক বুঝলাম না!
-মানে ? বেরিয়ে যাও ইউ রাবিশ, অকর্মা।
-তাড়াতাড়ি দুধটুকু খেয়ে নিলাম। গত ক’বছরের চাকরিগুলোর ধকল আমার মন এখনোও ঠিক সামলে উঠতে পারেনি দেখা যাচ্ছে। যাই হোক পানি খেয়ে তাড়াতাড়ি শুয়ে পড়লাম । আর তার খানিক বাদেই হয়তো ঘুমিয়ে গেলাম। কারন আমি তো ছিলাম খাটের ওপর। কিন্তু কেমন করে যেন একটা মাঠের মাঝখানে এসে পড়লাম। এমনটা ঘুমে স্বপ্নের ভেতরে ছাড়া আর কি করেই বা সম্ভব? তো সে যা হোক, কাল আমার নতুন চাকরির প্রথম দিন। তা সে নিয়ে আমি স্বপ্ন দেখবো না তো আর কে দেখবে? কিন্তু খানিক আশ্চর্য হলাম এই ভেবে যে স্বপ্নে আমার অফিস কই? এতো কেবল মাঠ আর মাঠ। আর ওদিকে ঘন জঙ্গল মতো কি যেন। ভয়ে-ভয়ে চারপাশে তাকাচ্ছি এমন সময় কে যেন খুব জোরে হেসে উঠলো।
“কে,কে?”বললাম আমি। আমাকে চিনতে পারলেনা লর্ড ক্লাইভ? আমিতো তোমার যম। চিনতে পারলেনা আমাকে? না পারলে না পারো। আজ তোমাকে ভাগে পেয়েছি আমি। আজ আর তোমায় ছাড়ছি না। অনেক জ্বালিয়েছো তুমি আমাকে। তোমার টেনশন করতে করতে সেদিন আমি দুটো মাছিও খেয়ে ফেলেছি ভুল করে। আর তারপর থেকে সেই যে লুজ মোশন শুরু হলো, অমি আজও তার ধকল পোহাতে পারিনি। তোমাকে আমি আজ আর ছাড়বোনা। ইইইইইইইএএএ……”বলে ঝাপিয়ে পড়লো মানুষটা আমার দিকে।
-শুনুন, তার আগে আপনার নামটা বলুন প্লিজ! আর এটাতো স্বপ্ন। আপনি স্বপ্ন দেখছেন। এত উত্তেজিত হওয়ার কি আছে ? কোনমতে একফাঁকে কথাগুলো বলে ফেললাম।
-কি? আমি স্বপ্ন দেখছি? বাংলা, বিহার, উড়িষ্যার মহান অধিপতিকে তুমি শেখাচ্ছ, এটা স্বপ্ন
-হাতজোড় করে বললাম-“আপনি কি তবে সিরাজউদ্দৌলা?”
-“হ্যাঁ, আমি তাই”
-তবে একটা ফ্রি উপদেশ দিচ্ছি মহারাজ কিছু মনে করবেননা। আপনি আপনার সেনাপতি মির জাফরকে একদমই বিশ্বাস করবেন না দয়া করে। আর লর্ড ক্লাইভের সাথে যুদ্ধের প্ল্যানটাও বাদ দিন দয়া করে। ও আপনি এমনিতেও জিততে পারবেন না। খালি খালি ইতিহাসের একটা তারিখ বাড়িয়ে কি লাভ বলুন? আমার আবার খুব ভুলোমন কিনা। তারিখ ঠিক মনে রাখতে পারিনা…।
-কি? আমাকে উপদেশ দেওয়া। ছাড়বোনা তোকে, আমি ছাড়বো না। এই বলে যেই উনি ঝাঁপিয়ে পড়লেন অমনি আমার ঘুম ভেঙ্গে গেল। মেজাজটাই খিচড়ে গেল। উফ! সিরাজউদ্দৌলার স্বপ্ন যে কেন আমার স্বপ্নের মাঝে চলে এলো। ওনার স্বপ্ন আমি দেখছি তো উনি কি দেখছেন? এই চিন্তা করতে করতে যেইএকটা সিদ্ধান্তে আসবো আসবো করছি এমন সময় হঠাৎ…
-এবার ২০১৩ সালের সেরা নায়ক ক্যাটাগরিতে অস্কার পুরস্কার নিতে আসছেন বাংলাদেশের নায়ক অনন্ত।হাততালি,হাততালি…। একি? এ আমি কি দেখছি? অনন্ত যে স্টেজে উঠে অস্কার পুরস্কার নিচ্ছে। আমি কি তবে আবার কারও স্বপ্ন চুরি করলাম? কার স্বপ্ন ? নায়ক অনন্তের? উহ! না এটা হতেই পারেনা… ভেবে যেই নিজেকে একটা চিমটি কাটলাম অমনি আমি আবার জেগে গেলাম। হ্যাঁ, তবে আমি ঘুমিয়েই পড়েছিলাম। নিজের মনেই খানিক হেসে নিচ্ছি এমন সময় ঠন করে একটা আওয়াজ। এমা আমি যে পথে বসে আছি। এক চোখে আবার পট্টিও বাধা আমার। ভালো করে তাই দেখতেও পাচ্ছি না। কে যেন আবার আমার দিকে একটা পয়সা ছুড়ে দিলো। রেগেমেগে কিছু একটা বলতে যাচ্ছি, কিন্তু আমার মুখের কথা মুখেই রয়ে গেল। আমার হাতে যে একটা থালা!!! তবে কি এবার একেবারে ফকিরের স্বপ্নই চুরি করে বসলাম? ছি!ছি!ছি! ভেবে কষে নিজেকে যেই না একটা থাবড়া দেওয়া অমনি দেখি আমি আমার ঘরেই শুয়ে অথ্যাৎ আমার ঘুম ভেঙ্গে গেছে। নিজেকে আচ্ছা করে বোঝালাম। এবার কাল সকালের কথাই কেবল ভাববো। সেই স্বপ্নই দেখবো। কেন খালি খালি অন্যদেরটা চুরি করতে যাব? এসবই ভাবছি একমনে এমনি সময় দরজার ধাক্কা শুনলাম। মায়ের গলা-
“ওঠ বাবা, সকাল হলো যে, আজ না তোর চাকরিতে যাবার কথা?”
যাক, অবশেষে নিজের স্বপ্নটাই দেখছি আমি। ভেবে একটা দাঁত কেলিয়ে হেসে নিলাম। কিন্তু ওকি? আমার স্বপ্ন আর আগাচ্ছেনা কেন? মা যে কেবল ডেকেই যাচ্ছে।“এই খোকা? এই বাদর, ওঠ। মা ডাকছে শুনছিস না? কানে কটাং করে একটা চিমটি পড়লো এবার। ধড়মড়িয়ে উঠে বসলাম। ঐ তো বাবা দাড়িয়ে। তবে এটা বুঝি সত্যিই? স্বপ্ন নয়? একটা র্দীঘশ্বাস পড়লো বুক চিরে। এতলোকের স্বপ্নের ভিড়ে নিজের স্বপ্নটা আজ বুঝি আর দেখাই হলোনা আমার?
"আলোর পথ"-এ প্রকাশিত গল্পসমূহ ও লেখনী মূলত পাঠক, শুভাকাংখী এবং সম্মানিত আবেদনকারীদের কাছ থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে। এই কনটেন্টগুলোর উপর আমরা কোনো মেধাসত্ত্ব (copyright) দাবি করি না। যদি কোনো গল্প, ছবি বা তথ্যের কপিরাইট সংক্রান্ত বিষয়ে আপনার প্রশ্ন, সংশয় বা আপত্তি থাকে, তাহলে অনুগ্রহ করে আমাদের যোগাযোগ পৃষ্ঠায় যোগাযোগ করুন। আমরা যথাযথ আইনানুগ পদ্ধতিতে বিষয়টি পর্যালোচনা করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করব।