এক যুবকের সুগন্ধির রহস্য

এক বুজুর্গ বলেন, আমি বসরাতে এক যুবকের দেখা পেলাম। তাকে সবাই মেশকী বলত। কারণ তার দেহ হতে সব সময় মেশকে আম্বরের সুগন্ধি বের হতো। এমনকি সে জামেমসজিদে প্রবেশ করলে লোকেরা টের পেয়ে যেত যে, সেই যুবক মসজিদে প্রবেশ করেছে। এমনকি সে বাজারে প্রবেশ করলেও তার দেহ হতে বিচ্ছুরিত সুগন্ধি দ্বারা মানুষ তার উপস্থিতি টের পেত।

তার সাথে সাক্ষাতের পর আমি জিজ্ঞেস করলাম; ভাই তুমি সর্বদা যেই সুগন্ধি ব্যবহার কর, তা খরিদ করতে নিশ্চয় তোমার অনেক অর্থ ব্যয় হয়। উত্তরে সে বলল, ভাই! আমি জীবনে কোন কখনো সুগন্ধি ক্রয় করিনি এবং তা ব্যবহারও করিনি। অতঃপর সে ঐ সুগন্ধির রহস্যের বিবরণ দিয়ে বলল, আমি বাগদানে জন্মগ্রহণ করেছি। আমার বাবা ছিলেন বাগদানের সেরা বিত্তবানদের একজন। শৈশবে আমার পিতা বিত্তবানদের সন্তানদের মতোই আমার শিক্ষা ও তালীমের ব্যবস্থা করলেন। কিন্তু এতটুকু বয়সেই আমি অত্যন্ত লাজুক  স্বভাবের ছিলাম। আর শৈশব হতেই আমার দৈহিক সৌন্দর্য ছিল অসামান্য। লোকেরা আমার পিতাকে পরামর্শ দিল যে,  আপনি আপনার ছেলেকে মাঝে  মধ্যে বাজারে নিয়ে বসিয়ে রাখবেন, ফলে হয়ত তার স্বভাবের জড়তা কাটিয়ে মানুষের সাথে মেশার অভ্যা গড়ে উঠবে।

অতঃপর আমাকে এক কাপড় ব্যবসায়ীর দোকানে বসিয়ে  দেওয়া হল। আমি সকাল হতেই সন্ধ্যা পর্যন্ত সেই দোকানে বসে থাকতাম। একদিন এক বৃদ্ধা ক্রেতা এসে মোটা কাপড় চাইল। দোকানদার কাপড়ের থান নামিয়ে দিলে ক্রেতা বলল, আমার সাথে একজন লোক দিয়ে দাও আমি এই থান বাড়িতে নিয়ে আমার প্রয়োজন মত কাপড় কেটে তার মূল্যসহ বাকী কাপড় ফেরত দিয়ে দেব। দোকানদার ক্রেতার সাথে আমাকে  তার বাড়িতে পাঠাল। বৃদ্ধা আমাকে এক বিলাস বহুল প্রসাদে নিয়ে গেল। প্রাসাদের অভ্যন্তরে ছিল একটি সুদৃশ্য গম্বুজ। তার পর্দা ঝুলানো দরজায় এক প্রহরী দাঁড়িয়ে ছিল। বৃদ্ধা আমাকে  সেই দরজার সামনে নিয়ে বলল, তুমি ভেতরে গিয়ে বস। আমি তার কথামত ভিতরে গিয়ে দেখতে পেলাম, সেখানে এক সিংহাসনের উপর এক অনিন্দ্য সুন্দরী  যুবতী বসে আছে। তার পরিধেয় মূল্যবান পোষাক ও বিবিধ অলংকার যেন তার সৌন্দর্যকে আরো আকর্ষনীয় করে তুলেছে।

সিংহাসনের সামনে বিছানো ছিল কারুকার্য খচিত মূল্যবান কার্পেট। এমন সুন্দর কার্পেট আমি ইতোপূর্বে আর কখনো দেখিনি। আমাকে দেখামাত্র মেয়েটি সিংহাসন হতে নেমে এসে আমার বুকে হাত রাখল। চোখেমুখে তার তীব্র যৌন আবেদন আর রাঙ্গা অধরে লালসার স্পন্দন কিছুক্ষণ এভাবে আমাকে নিরীক্ষন করার পর আর সে কিছুতেই নিজেকে সামলে রাখতে পারল না। অস্থির যৌন কামনায় আমাকে আহবান করল। তামি  তাকে বাঁধা দিয়ে বললাম, আল্লাহকে ভয় কর। তিনি আমাদের সকল আচারণ দেখছেন। কিন্তু সে আমাকে পাল্টা অভয় দিলে বলল, ভয়ের কোন কারণ নেই, তুমি আমাকে তৃপ্ত কর, বিনিময়ে যা চাইবে তাই তোমাকে দেয়া হবে, তবুও আমাকে নিরাশ করো না।  যুবক মনে মনে ভাবল, সে এক পরিকল্পিত ষড়যন্ত্রের ফাঁদে পা দিয়েছে। এখন জোর খাটিয়ে কোন কাজ হবে না। আত্মরক্ষার জন্য কৌশল অবলম্বন করতে হবে। অতঃপর সে জোর করে হাসি ফুটিয়ে মেয়েটিকে বলল, আগে আমাকে এস্তেঞ্জা হতে ফারেগ হতে দাও।

মেয়েটি আওয়াজ দেবার সাথে সাথে কয়েকজন দাসী ছুটে এল। সে তাদেরকে বলল, এ বুবককে সম্মানে এস্তেঞ্জায় নিয়ে যাও।

বর্ণনাকারী বলেন, পরে সে “বাইতুল খালায়” ঢুকে মুক্তির উপায় খুজতে লাগল। কিন্তু চর্তুর্দিকে তাকিয়ে দেখল পালাবার কোন উপায় নেই, অবশেষে সে এক কান্ড করে বসল। দু হাতের উপর মল ত্যাগ করে উহা মাথা মুখ ও সারা শরীরে মেখে তারপর বের হয়ে এল। বাইরে এক দাসী তোয়ালে ও পানি নিয়ে দাঁড়িয়েছিল। সে এ অবস্থা দেখে ঘৃনা ও আশংকায় চিৎকার করতে করতে বাড়ীর ভেতরে ছুটে গিয়ে সবাইকে বলল, তোমরা এতক্ষণ যে যুবককে বর সাজানোর আয়োজন করছিলে সে আসলে একজন পাগল। দাসীর কথা শুনে সবাই সেদিকে ছুটে এসে দেখল তা অন্য কারো নিকট প্রকাশ করতে রুচি হল না। পরে তারা সবাই মিলে যুবককে কোনক্রমে একটি ছালার চটে জড়িয়ে জঙ্গলে দিয়ে এল।

যুবক এ সুযোগেরই অপেক্ষা করছিল। যখন সে টের পেল যে,  সবাই চলে গেছে, তখন সে ছালার চট হতে বের হয়ে পার্শ্ববর্তী এক জলাশয়ে গিয়ে হাত মুখ ও সমস্ত দেহ ভালভাবে পরিষ্কার করে বাড়িতে ফিরে আসল। কিন্তু সেই ঘটনা অন্য কারো নিকট প্রকাশ করল না। পরবর্তী রাতে যুবক স্বপ্ন দেখল, এক ব্যক্তি তাকে বলছে পাপের হাত থেকে আত্মরক্ষার ক্ষেত্রে তোমার  এ আচারণ হযরত ইউসুফ (আঃ) এর ঘটনাকেও যেন ম্লান করে দিয়েছে। তুমি কি আমাকে চিনতে পেরেছ? যুবক বলল, না। সে বলল, আমি জিব্রাইল। অতঃপর হযরত জিব্রাইল (আঃ) নিজের হাত তার মুখ ও শরীরে মুছে দিলেন। ঐ ঘটনার পর থেকেই আমার দেহের এ সুগন্ধি।

You may also like...

দুঃখিত, কপি করবেন না।